বুধবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়েছেন তারা বড় অপরাধী : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমতায় বসিয়েছে, মন্ত্রী বানিয়ে লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত পতাকা তাদের হাতে তুলে দিয়েছে তারাই সবচেয়ে বড় অপরাধী ও রাজাকার। এরাও যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী অপরাধকারী। বাংলার মাটিতে এদেরও বিচার হওয়া উচিত। এ ব্যাপারে তিনি দেশবাসীকে আরও সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।

গত রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ এবং সম্মেলন প্রস্তুতি উপকমিটির সভাপতি ও সদস্যসচিবদের সঙ্গে যৌথ বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতদিন মানুষ পুড়িয়ে হত্যার পর এখন উনারা জঙ্গিদের নিয়ে খেলছেন। পোড়া মানুষের জন্য তার (বিএনপি নেত্রী) কান্না আসে না, জঙ্গিদের নিয়ে তার এত মায়াকান্না কেন? এরা (নিহত জঙ্গি) মানুষ খুন করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এদের বিরুদ্ধে যদি অ্যাকশন না নেওয়া হতো, ওরা যদি মারা না যেত তারা আরও কত মানুষকে হত্যা করত। এটাই কি বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া চেয়েছিলেন? যারা জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের মদদ দেয়, আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় তাদের বিচারের ভার দেশের জনগণের ওপর ছেড়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনোভাবেই জঙ্গিদের বাংলাদেশে থাকতে দেব না, এদের ঠাঁই এ দেশে হবে না।’

বৈঠকে ২২-২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় কাউন্সিল সফল করতে বিস্তারিত আলোচনা শেষে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঞ্চালনায় বৈঠকে শোকপ্রস্তাব উত্থাপন করেন দলের দফতর সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান। বৈঠকের শুরুতেই সদস্য প্রয়াত বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুর রহীমের রুহের মাগফিরাত কামনা করা হয়। বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে মর্মে দলটির নেতাদের অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা আন্দোলনের নামে শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, সারা দেশে ভয়াবহ নাশকতা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা বা বিচার না করে কি ঘি-চন্দন দিয়ে বরণ করা হবে? এসব করার হুকুম দেওয়ার আগে কি তা মনে ছিল না? ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে মানুষ হত্যা করা হলো। নিজেরা হুকুম দিয়ে এ হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে বলেই জজ মিয়ার নাটক করেছে। যারা গ্রেনেড হামলা চালাল তাদেরও কি বিচার করা যাবে না? বিএনপি-জামায়াত জোটের আমলে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে শত শত মামলা, হত্যা, নির্যাতনের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বলেছেন, খালেদা জিয়া নির্বাচনে আসেননি এটা তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। নির্বাচনের আগে আমি নিজে টেলিফোন করে বিএনপি নেত্রীকে কোয়ালিশন সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ যে কটি মন্ত্রণালয় চান তাও দিতে চেয়েছি। কিন্তু তাতে রাজি না হয়ে উনি নির্বাচনে আসেননি কিসের আশায়? কী আশায় উনি বসে ছিলেন? তিনি বলেন, নির্বাচনে না আসায় বিএনপি নেত্রীর ভুলের খেসারত কেন দেশের জনগণকে দিতে হবে? প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের নানা দেশের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যারা মাত্র ১০ ঘণ্টার মধ্যে সব জঙ্গিকে দমন করে ১৩ জিম্মিকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। পৃথিবীর কোনো দেশ তা করতে পারেনি।

আকার বাড়ছে কমিটির : আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আকার ৮১ করার পক্ষে মত দিয়েছেন নেতারা। একই সঙ্গে বাড়ানো হচ্ছে জেলা-উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটির আকারও। কেন্দ্রীয় কমিটিতে প্রেসিডিয়ামে দুটি, সাংগঠনিকে তিনটি পদ বাড়ছে। প্রশিক্ষণ সম্পাদকের পদ নতুন সৃষ্টি করা হচ্ছে। দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মত দিয়েছেন। গত রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদ এবং নির্বাচন প্রস্তুতি কমিটির সদস্যদের যৌথ সভায় এমন মত দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। সভায় সম্মেলনের স্লোগানও চূড়ান্ত হয়েছে। এবারের স্লোগান— ‘সম্মেলনের অঙ্গীকার, রুখতে হবে জঙ্গিবাদ’। বৈঠকে সম্মেলন সফল করতে গঠিত উপকমিটিগুলো প্রধানমন্ত্রীর কাছে পেশ করা হয়। সভায় তিনজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ বাড়িয়ে পাঁচজন করা নিয়ে আলোচনা হলেও চূড়ান্ত হয়নি। বৈঠকসূত্র বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, কেন্দ্রীয় নেতা ও সম্মেলন প্রস্তুতি উপকমিটির সদস্যরা বক্তৃতা করেন।

সর্বশেষ খবর