বৃহস্পতিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

লোকাল বাসে ঠাঁই হলো চমকে দেওয়া মেয়েদের

পথে পথে ভোগান্তি অপদস্থ অভিভাবকদের ক্ষোভ

সৈয়দ নোমান, ময়মনসিংহ

লোকাল বাসে ঠাঁই হলো চমকে দেওয়া মেয়েদের

এএফসি কাপ অনূর্ধ্ব-১৬ বাছাই পর্বে বাংলাদেশকে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন করে ওরা ঘরে ফিরছে লোকাল বাসে চড়ে —বাংলাদেশ প্রতিদিন

মাত্র তিন দিন আগে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশের ফুটবলকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে নারী ফুটবলাররা। টানা দুবার এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে বিজয়ের মুকুট অক্ষুণ্নের পর দেশের মাটিতেও এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপের মূল পর্বে প্রথমবারের মতো খেলার গৌরব অর্জন করেছে গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যরা। একই সঙ্গে গোটা বিশ্বকে শুনিয়ে দিয়েছে বাঘিনীর গর্জন।

ফুটবলের মহাকাব্যের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে নিজেদের নাম লেখা সানজিদা-মারিয়া-তহুরারা তবুও উপেক্ষিত খোদ দেশের ফুটবলের শাসক সংস্থা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন—বাফুফের কাছে। ইতিহাস রচনা করে সগৌরবে ময়মনসিংহের গারো পাহাড়ের পাদদেশের সীমান্তঘেঁষা গ্রামে ফুটবলকন্যাদের বাড়ি ফিরতে ভরসা কেবলই লোকাল বাস। একবার কিংবা দুবার নয়, গৌরব অর্জনের প্রতিটি ধাপ শেষেই অনাদরে-অবহেলায় লোকাল বাসে চেপেই মমতাময়ী মায়ের বুকে ফিরতে হয়। বাফুফের এমন উদাসীনতায় ক্ষোভের অন্ত নেই সোনালি প্রজন্মের নারী ফুটবলারদের। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপের টানা পাঁচ ম্যাচেই জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে এই মেয়েরা। প্রতিপক্ষের জালে করেছে গোল উৎসব। পাঁচ ম্যাচে করেছে ২৬ গোল। কিন্তু এ অর্জন অনেকটাই উপেক্ষায় পরিণত হয় কলসিন্দুরের নয় ফুটবলারের লোকাল বাসে চেপে বাড়ি ফেরা। মঙ্গলবার সকালে ঢাকার মহাখালী থেকে বাসে উঠলেও তারা বিকাল ৩টার দিকে পৌঁছায় বাড়ি। ঘাটে ঘাটে বাস থামিয়ে যাত্রী তোলায় তাদের পোহাতে হয় দুর্ভোগ। শুধু তাই নয়, বাসে বখাটে তরুণদের কটূক্তিও শুনতে হয়। দুর্ভোগের এ কথা জানিয়ে মার্জিয়া বলে, ‘বাফুফের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বাড়ি পৌঁছাতে পারলে আমাদের জন্য অনেকটাই সহজ হতো। বাবা-মায়ের দুশ্চিন্তাও কমত।’ একই ব্যাপারে মেসি খ্যাত তহুরা বলে, ‘দেশের জন্য সব সময় নিজের সেরাটা উপহার দিতে চেয়েছি। ফুটবলার ভাইয়েরা কত রকমের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তা করে বাফুফে আমাদের বাড়ি পৌঁছাতে পরিবহনের উদ্যোগ নিলে ভালো হতো।’ ইতিহাস রচনা করা নারী ফুটবলারদের জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা করার দাবি জানান ময়মনসিংহ পণ্ডিতপাড়া ক্লাবের সভাপতি ও ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র ইকরামুল হক টিটু। তিনি বলেন, অসাধারণ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে ফুটবলকন্যাদের বদৌলতেই বাংলাদেশ আজ ফুটবল মানচিত্রে একটি নাম। কিন্তু ইতিহাস সৃষ্টিকারী কন্যাদের নিদারুণ ভোগান্তি সঙ্গী করে লোকাল বাসে বাড়ি ফেরার ঘটনাটি বাফুফের হেঁয়ালি মনোভাবের পরিচয় বহন করে। তাদের উৎসাহ ধরে রাখতেই এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। এ ব্যাপারে বাফুফের সহ-সভাপতি বাদল রায় বলেন, ‘লোকাল বাসের প্রসঙ্গ উঠেছে। আমরা তো তাদের বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দিতে মাইক্রোবাসের ব্যবস্থা করেছিলাম। মেয়েরা বলেছে, ভাড়া করা বাসে যাবে। তবে কোনো অবস্থায়ই কটূক্তি মেনে নেওয়া যায় না। এটা উদ্দেশ্যমূলক করা হয়েছে কিনা তাও আমরা দেখব। মেয়েদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রকৃত ঘটনা জানব। তাদের নিয়ে কটূক্তি করা হলে বাফুফে অবশ্যই তদন্ত করবে।’

সর্বশেষ খবর