বৃহস্পতিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

খুনি ফারুক-রশীদের ৮৫ হাজার ব্যাংক শেয়ারে নিষেধাজ্ঞা

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি কর্নেল (অব.) ফারুক ও কর্নেল (অব.) রশীদের নামে থাকা জুবলী ব্যাংকের ৮৫ হাজার শেয়ার হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকারের যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের পরিদফতর (আরজেএসসি)। গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠানো এক চিঠিতে এ বিষয়টি জানানো হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে দুই খুনির শেয়ার হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা জারির চিঠির সঙ্গে আরজেএসসির একটি আট পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনও পাঠানো হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ে। ওই প্রতিবেদনে ফারুক ও রশীদের নামে থাকা জুবলী ব্যাংকের শেয়ার সরকারের অনুকূলে দ্রুত বাজেয়াপ্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত দরকার বলে উল্লেখ করা হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরপরই এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠানো হয়। তিনি বলেন, শেয়ার হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এর বেশি আর কিছু করার নেই আরজেএসসির। কারণ তারা শুধু কোম্পানির নিবন্ধন দিতে পারে। সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার এখতিয়ার তাদের নেই। যেহেতু এটি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত তাই তারাই অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে শেয়ার বাজেয়াপ্ত করার উদ্যোগ নিতে পারে। জানা গেছে, আত্মস্বীকৃত খুনিদের মধ্যে যে দুজনের শেয়ার হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে সৈয়দ ফারুক রহমানের ফাঁসির আদেশ কার্যকর হয়েছে। আর আবদুর রশীদ পলাতক রয়েছেন। ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে জুবলী ব্যাংকে এ দুই খুনির শেয়ার ধারণের তথ্য গোপন ছিল। সম্প্রতি ওই ব্যাংকের এক শেয়ারধারী খুনি ফারুক-রশীদের নামে শেয়ার থাকার বিষয়টি এক চিঠিতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে অবহিত করেন। তবে ব্যাংকটি কোম্পানি আইনে আরজেএসসি থেকে নিবন্ধিত হওয়ায় দুই খুনির শেয়ার বাজেয়াপ্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে গত মাসে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। এরপর এ বিষয়ে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে আরজেএসসি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আরজেএসসির নিবন্ধক আতিকুর রহমান খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কোম্পানি আইন অনুযায়ী কোনো লিমিটেড কোম্পানির শেয়ার বা সম্পদ সরাসরি বাজেয়াপ্ত করা যায় না। আবার প্রচলিত আইনে সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে চাইলেও এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মত দরকার। তদন্ত প্রতিবেদনে সে বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের ইতিবাচক মত পাওয়া গেলে অথবা আত্মস্বীকৃত খুনিদের সম্পদ জব্দে এ বিষয়ে নতুন কোনো আইন করা হলে সে ক্ষেত্রে ওই ব্যাংকটিতে থাকা আত্মস্বীকৃত খুনিদের শেয়ার বা সম্পদ জব্দের উদ্যোগ নেওয়া যাবে। জানা গেছে, আরজেএসসি থেকে কোম্পানি হিসেবে রেজিস্ট্রেশন নেওয়ার পর জুবলী ব্যাংক লিমিটেড একটি নন-শিডিউলড ব্যাংক হিসেবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও ব্যাংকটি ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য লাইসেন্স নিয়েছে। জুবলী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় কুষ্টিয়ার খোকসায়। ১৯৮৭ সালের ২১ জানুয়ারি এটি ব্যাংক কোম্পানি হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আরজেএসসি থেকে নিবন্ধন নেয়। মূলত ওই অঞ্চলেই ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা করছে ব্যাংকটি। প্রসঙ্গত, ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ জনের মধ্যে পাঁচজনের ফাঁসি ২০১০ সালের জানুয়ারিতে কার্যকর হয়। তারা হলেন জুবলী ব্যাংকের শেয়ারধারী সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মুহিউদ্দিন আহমদ (আর্টিলারি), বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন (ল্যান্সার)। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বাকি সাতজনের মধ্যে এম রাশেদ চৌধুরী, এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী, শরিফুল হক ডালিম, মোসলেমউদ্দিন ও আবদুল মাজেদ এবং জুবলী ব্যাংকের আরেক শেয়ারধারী আবদুর রশীদ বিদেশে পলাতক। আর আবদুল আজিজ পাশা পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা গেছেন।

সর্বশেষ খবর