বৃহস্পতিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

১০ টাকা সেরে চাল বিতরণ শুরু প্রধানমন্ত্রীর

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি হতদরিদ্রদের জন্য ১০ টাকা দরে চাল বিক্রির কার্যক্রম শুরু হয়েছে।  গতকাল সকালে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারীর থানার হাট এ.ইউ. উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে খাদ্য অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের একটা মানুষও কষ্টে থাকবে না, একটা মানুষ না খেয়ে থাকবে না, একটা মানুষ গৃহহীন থাকবে না। আমরা রাজনীতি করি দেশের মানুষের জন্য, নিজেদের জন্য নয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে জনগণকে দিতে। আর অন্যরা ক্ষমতায় আসে নিতে, নিজেদের আখের গোছাতে। তিনি ঘোষণা দেন ফেয়ারপ্রাইস কার্ডের মাধ্যমে হতদরিদ্রদের জন্য সারা দেশে এই নামমাত্র মূল্যে চাল বিতরণ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। এ সময় সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত চিলমারীর স্থানীয় গৃহহীন জনগণকে সরকারি উদ্যোগে ঘরবাড়ি তৈরি করে দিতেও জেলা প্রশাসনকে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেন।

হতদরিদ্র ৫০ লাখ পরিবার মার্চ, এপ্রিল এবং সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর এই পাঁচ মাস ?১০ টাকা কেজি দরে মাসে ৩০ কেজি পর্যন্ত চাল কিনতে পারবে। নারী, বিধবা ও প্রতিবন্ধী নারীপ্রধান পরিবারকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে এ কর্মসূচিতে। 

শেখ হাসিনা উত্তরাঞ্চলের হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীকে উদ্দেশ করে বলেন, এই অঞ্চলে আর মঙ্গা থাকবে না, দুর্ভিক্ষ হবে না। তিনি বলেন, বৃহত্তর রংপুরে আর যেন মঙ্গা শব্দটা শুনতে না হয় এ জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

সকাল ১১টায় সভাস্থলে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে তিনি ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে চিলমারী হেলিপ্যাডে অবতরণ করেন। ব্যাপক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যদিয়ে এক কিলোমিটার দূরে সভাস্থলে আসেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় পথে পথে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে তাকে এক নজর দেখার জন্য। উত্সুক জনতা হাত নেড়ে শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানায়। সভাস্থলে তিল ধারণেরও ঠাঁই ছিল না। ভোর থেকেই রৌমারী, রাজিবপুর, উলিপুর, নাগেশ্বরী, ফুলবাড়ী, ভূরুঙ্গামারী, বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়া, রাজারহাট ও কুড়িগ্রাম থেকে হাজার হাজার মানুষ সমাবেশে যোগ দিতে আসেন। উপস্থিত জনতার উদ্দেশে প্রায় ৩০ মিনিট বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বলেন, সারা দেশ ঘুরে দেখেছি। দেখেছি মানুষের দুঃখ-দুর্দশা। ’৯৬ সালে সরকার গঠনের পর বাংলাদেশের মানুষের উন্নতি হয়েছে। আমাকে বাংলার মানুষ সুযোগ দিলে দেশে সব দুঃখী মানুষের মুখে খাদ্য তুলে দিতে চাই। মানুষ যেন না খেয়ে কষ্ট না পায় এ জন্য সামাজিক নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলা হয়েছে। কুড়িগ্রামে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা ও নদী ভাঙনে যারা গৃহহারা হয়েছে তাদের জমি দেব। ঘরবাড়ি দেব। যারা দরিদ্র- ক্ষুধার্ত তাদের মুখে অন্ন তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করব। তিনি বলেন, একদিকে আমরা দেশের দুর্ভিক্ষ দূর করার চেষ্টা করছি; অপরদিকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সৃষ্টি করছে বিএনপি-জামায়াত। পরপর কয়েকটি সন্ত্রাসী ঘটনার পর মাত্র ১০ ঘণ্টার মধ্যে আমরা জঙ্গিদের প্রতিহত করে উদ্ধার কার্যক্রম সফল করেছি। ইসলামে কোথাও মানুষ খুন করার কথা বলা নেই। যারা মানুষ খুন করে তারা ইসলামের লোক হতে পারে না। এদের সম্পর্কে সজাগ হতে হবে। এ জন্য জনমত তৈরি করতে হবে। আমাদের যুব সমাজ আমাদের সম্পদ, তারা যাতে বিপথে না যায়, মাদকাসক্ত না হয় এ জন্য বাবা-মা, শিক্ষক, নির্বাচিত প্রতিনিধি সবার কাছে আবেদন— আপনাদের সন্তানরা কে কোথায় যায় সে ব্যাপারে নজর রাখুন। তাদের কথা শুনুন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ভারতের কাছে ছিটমহল বিনিময় ও সীমানা নির্ধারণের কথা উচ্চারণ করার সাহস পায়নি। কিন্তু আমরা শান্তিপূর্ণভাবে স্থলসীমানা চুক্তি বাস্তবায়ন করি। আমরা ছিটমহল বিনিময় করেছি। সারা বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। বাংলাদেশের জন্য এটি ঐতিহাসিক ঘটনা। আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে বিশাল সমুদ্র এলাকা বাড়িয়েছি। যারা জাতির পিতাকে হত্যা করেছে তাদের বিচার করেছি। ’৭১ সালে যারা নির্যাতন, হত্যা ও লুটপাট করেছে সেসব যুদ্ধাপরাধীর রায় কার্যকর করা হয়েছে। বাংলাদেশ কলঙ্কমুক্ত হচ্ছে। আমরা আমাদের প্রজন্মকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে চাই। আমরা বিনামূল্যে বই তুলে দিচ্ছি। বাবা-মাকে আর কষ্ট করতে হবে না। এ ছাড়াও শিক্ষা সহায়তা ফান্ড তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় একটি কলেজ ও একটি স্কুলকে সরকারিকরণ করেছি। শিক্ষার্থীদের আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে হবে। দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা হয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে দিতে। আওয়ামী লীগের হাতকে শক্তিশালী করুন। আওয়ামী লীগের পতাকাতলে সমবেত হোন।

‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’— এই স্লোগানে নেওয়া এ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো. কামরুল ইসলাম। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন— কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, সমাজকল্যাণ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, খাদ্য সচিব এ এম বদরুদ্দোজা, চিলমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও চিলমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত আলী সরকার বীরবিক্রম প্রমুখ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, কুড়িগ্রামের এমপি এ কে এম মাঈদুল ইসলাম মুকুল, রুহুল আমিন, সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি অ্যাডভোকেট সফুরা বেগম, জেলা পরিষদের প্রশাসক মো. জাফর আলী, লালমনিরহাট জেলা পরিষদের প্রশাসক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান, রংপুর জেলা পরিষদের প্রশাসক অ্যাডভোকেট মমতাজুল হক প্রমুখ। 

দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, কুড়িগ্রামে প্রধানমন্ত্রীর চাল বিক্রি কার্যক্রমের উদ্বোধনের পর দিনাজপুরেও এ কার্যক্রম শুরু করা হয়। ১০ টাকা মূল্যে চাল কেনার পর শাহিদা বেগম নামের এক নারী উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, ‘শেখের বেটি হামাক ১০ টাকায় চাল খাওবার চাইছিলো। বাপের বেটি কথা রাখছে, আল্লাহ ওমার ভালো করুক’। পার্বতীপুরের রামপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আলেজা বেগম, ফরিদা খাতুন, হাসান আলীসহ অনেকেই ১০ টাকা দরে চাল ক্রয় করতে পেরে বেজায় খুশি।

সর্বশেষ খবর