শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

পথে পথে যানজট ভোগান্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

পথে পথে যানজট ভোগান্তি

ঘরমুখো মানুষের চাপে তীব্র যানজট। ঢাকা-গাজীপুর মহাসড়কের কালিয়াকৈর চন্দ্রা থেকে গতকাল তোলা ছবি —বাংলাদেশ প্রতিদিন

পথে পথে দীর্ঘ যানজট আর নানা হয়রানিতে ঈদযাত্রার আনন্দ কষ্টে পরিণত হয়েছে। দুর্ভোগ-ভোগান্তির মধ্য দিয়ে মানুষ ফিরছে বাড়িতে। শুধু মহাসড়ক নয়, রেল স্টেশন ও ফেরিঘাটেও বিড়ম্বনার শেষ নেই। ঘরমুখী মানুষের পথে পথেই কেটে যাচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে নারী ও শিশুরা। অনেককে ঝুঁকি নিয়ে বাসে-ট্রেনের ছাদে বসেও স্বজনদের কাছে যেতে পাড়ি দিতে হচ্ছে দীর্ঘ  পথ। কিন্তু যানজটে পড়ে তাদের ঈদের সেই আনন্দে ভাটা পড়ছে।

গতকাল সকাল থেকেই দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব কটি মহাসড়কে যানজট লেগেই আছে। কোথাও কোথাও পরিবহন চলাচলে ধীরগতি। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের প্রায় পুরো অংশেই দিনভর ছিল যানজট। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৬০ কিলোমিটারের বেশি যানজটে দিনভর ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে যাত্রীদের। ঢাকা থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত যানবাহন চলাচলে ধীরগতি থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে বৃহত্তর ময়মনসিংহের যাত্রীদের। সিলেট মহাসড়কেও তীব্র যানজটে চরম কষ্টের মধ্যে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। বিভিন্ন মহাসড়ক থেকে জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনে যানজটের এমন ভয়ঙ্কর চিত্র উঠে এসেছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট

কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ ও এলোপাতাড়ি যানবাহন চলাচলের কারণে টানা তৃতীয় দিনের মতো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি অংশে অন্তত ১০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়াও স্থবির হয়ে পড়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন অংশ। এতে মেঘনা ও গোমতী সেতুর উভয় প্রান্তে ঈদ উপলক্ষে ঘরমুখী যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থেকে দুর্ভোগে পড়েছেন। ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যাতায়াতের ২ ঘণ্টা সময়ের পরিবর্তে ৬-৭ ঘণ্টা লাগছে বলে যাত্রী ও পরিবহন চালকরা জানিয়েছেন। গতকাল ভোর থেকে মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে যানজট আরও প্রকট আকার ধারণ করে। কাঁচপুর, মেঘনা ও দাউদকান্দি গোমতী সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচলের চাপ বেড়ে যাওয়ায় হাইওয়ে পুলিশকে চাপ সামলাতে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করেও পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিকালে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত যানজট দাউদকান্দি টোল প্লাজা থেকে গৌরীপুর বাজার পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার মহাসড়কে বিস্তৃতি লাভ করে। অন্যদিকে মহাসড়কের কাঁচপুর, সানারপাড়, মুগদাপাড়া, ভবেরচর, গজারিয়া ও মেঘনা সেতুর উভয় পাশে কয়েক হাজার যানবাহন আটকা পড়েছে বলে যাত্রীরা জানিয়েছেন। ঢাকা থেকে কুমিল্লায় আসা রয়েল পরিবহনের যাত্রী শফিক আলম জানান, পরশু রাত ১০টায় রওনা করে গতকাল ভোর ৪টায় তিনি কুমিল্লায় পৌঁছেছেন। দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার ওসি আবদুল আউয়াল জানান, ঈদের কারণে মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহনের বাড়তি চাপ ছাড়াও কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমতী সেতু সংকীর্ণ হওয়ায় ওই তিনটি সেতুর উভয় প্রান্তে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হচ্ছে, তবে তা স্থায়ী হচ্ছে না, ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করছে। তিনি আরও জানান, হাইওয়ে ও থানা পুলিশ মহাসড়কে যানজট নিরসনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

পাটুরিয়া ঘাট

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ঈদে ঘরমুখী মানুষের ভিড়ে পাটুরিয়া ঘাটে ২ কিমি যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এ নৌরুটের দৌলতদিয়া প্রান্তের চারটি ঘাটই ব্যবহার উপযোগী করা হলেও নদীর তীব্র স্রোতে ২ নম্বর ঘাটটিতে ফেরি ভিড়তে পারছে না। এই নৌরুটের ১৮টি ফেরির মধ্যে ১৫টি সচল রয়েছে। দৌলতদিয়া প্রান্তের চারটি ঘাট চলাচলের উপযোগী এবং টাঙ্গাইল সড়কে ৬০ কিমি যানজটের খবর পেয়ে উত্তরবঙ্গের অধিকাংশ যানবাহন এ সড়কে ভিড় করে। ফলে অধিক যানবাহনের চাপে পাটুরিয়া ঘাটে এই যানজটের সৃষ্টি হয়।

শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুট

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২৩ জেলার প্রবেশদ্বার শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটে ঈদে ঘরমুখী যাত্রী ও যানবাহনের চাপে হিমশিম খেতে হচ্ছে ঘাট কর্তৃপক্ষকে। এ নৌরুটে রো রোসহ মোট ১৭টি ফেরি চলাচল করলেও যানবাহন পারাপারে হিমশিম খেতে হচ্ছে। নদীর কোথাও কোথাও নাব্য সংকটের কারণে রো রো ফেরিগুলো পুরোপুরি লোড নিতে পারছে না। ফলে ঘাটে অপেক্ষাকৃত যানবাহনের চাপ বেড়েই চলেছে। দীর্ঘ ১ কিমি এলাকা ওয়ানওয়ে বা একমুখীভাবে ফেরি চলাচল করায় পারাপারে সময় কিছুটা বেশি লাগছে।

ঢাকা-টাঙ্গাইলে ৪০ কিমি যানজট

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের গোড়াই থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত ৮টি পয়েন্টে অন্তত ৪০ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কের ধেরুয়া রেলক্রসিং, মির্জাপুর বাইপাস, পাকুল্লা বাসস্ট্যান্ড, নাটিয়াপড়া, করটিয়া, টাঙ্গাইল শহর রাবনা বাইপাস, এলেঙ্গা ও বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় অতিরিক্ত গাড়ির চাপে এ যানজট দেখা গেছে। এ যানজট বেশিক্ষণ স্থায়ী না হলেও ঈদে ঘরমুখী মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ৩ ঘণ্টার যাত্রায় লাগছে ৫-৬ ঘণ্টা করে।

ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলার ৯২টিসহ ১১৬টি রোডের যানবাহন এ মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করছে। এতে দুই লেনের এ মহাসড়কে ১০ গুণের বেশি যানবাহন চলাচল করছে। এজন্য মহাসড়কে কয়েকটি পয়েন্টে যানজট লেগেই থাকছে।

সাভার প্রতিনিধি জানান, ঈদের আগে শেষ কর্মদিবসেই ঢাকা ছাড়তে ?শুরু করেছে মানুষ। রাজধানী থেকে উত্তর ও দক্ষিণ জনপদের দুই মহাসড়কে যানজটের কারণে ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে ভোগান্তির মধ?্য দিয়ে। সড়ক সামলানোর চেষ্টায় থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ঈদে ঘরমুখী যাত্রীরা ঢাকা ছাড়তে শুরু করায় গাড়ির চাপ বেড়েছে কয়েক গুণ। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে কোরবানির পশুবাহী ট্রাকের মিছিল। এরই মধে?্য বিভিন্ন স্থানে ছোটখাটো দুর্ঘটনায় যানবাহন বিকল হলেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। আর উত্তরের পথে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে নবীনগর-চন্দ্রা পর্যন্ত এলাকায় গাড়ি চলছে ধীরগতিতে। এর প্রভাব পড়ছে সাভার ও আশুলিয়ার বাসস্ট্যান্ডগুলোয়। রাতে ছেড়ে যাওয়া বাস সময়মতো ফিরতে না পারায় আশুলিয়ার বাইপাইলে বাসস্ট?্যান্ডে গাড়ির জন?্য থাকা যাত্রীদের অপেক্ষা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। বিকালে অফিস ছুটির পর সন্ধ?্যায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যাত্রী ও চালকদের অনেকে। সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এস এম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান বলেছেন, এবার ঈদে ঘরমুখী মানুষের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে সড়কে পর্যাপ্ত পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। মানুষ যাতে নিরাপদে বাড়ি যেতে পারে সে ব্যাপারে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মহাসড়কে অপরাধ দমনে পুলিশ সদস্যরা নির্দেশনামতে কাজ করে যাচ্ছেন। গতকাল বিকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট মহাসড়কের কাঁচপুরে ওয়াচ টাওয়ার উদ্বোধন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে তিনি এসব কথা বলেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর