সোমবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
ধর্ম চিন্তা

সারা দিন ডুবে থাকব ক্ষমা প্রার্থনায়

মুস্তাফা জামান আব্বাসী

সারা দিন ডুবে থাকব ক্ষমা প্রার্থনায়

অন্য জাতিকে যখন আমাদের চেয়ে আল্লাহ বেশি রহম করেন, আল্লাহর কাছে প্রশ্ন জাগে। মনে মনে বলি, আমাদের মুসল্লিরা ভোর ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত তোমার রহমতের তালাশেই নিমগ্ন। ওরা জীবনে তেমন কিছুই পায়নি এবং পাওয়ার সম্ভাবনাও তেমন নেই। রহমতের অংশ এত কমে যাওয়ার কারণ কী? এমন সময় হঠাৎ আজ ‘হায়াতুস সাহাবা’র ৩৮৫ পৃষ্ঠায় আমার দৃষ্টি আবদ্ধ হলো। তাতে লেখা হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.)-এর বরাত দিয়ে। যখন সুরা জিলজাল নাজিল হলো, দেখা গেল হজরত আবু বকর (রা.) কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। রসুল (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, আবু বকর! এতটা ভেঙে পড়েছ কেন? আল্লাহর প্রিয়তম রসুল (সা.)-এর প্রিয়তম সাহাবি সুরা শুনে কাঁদছেন, এটি একটি অভূতপূর্ব ঘটনা। এর আগে এমনটি ঘটেনি। আবু বকর (রা.) বললেন, আমি কাঁদব না কেন? এতে কান্নার উপকরণ প্রস্তুত। রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, এটা সত্যিই, কারণ যে তোমরা ভুল করতেই থাকো, আর গুনার মধ্যে ডুবে থাকো, তখন আল্লাহ আর মাফ করবেন না। তিনি তখন সৃষ্টি করবেন অন্য একটি কওম, যারা হয়তো ভুল করবে, গুনা করবে এবং যারা মাফও পাবে। কাজেই বোঝা যাচ্ছে গুনা মাফের ইখতিয়ার একমাত্র তাঁরই। তাই গুনা মাফের জন্য বান্দার যে প্রচেষ্টা তা যেন থেমে না যায়। আমার গুনার যেমন শেষ হবে না, তেমন মাফের জন্য দোয়ারও শেষ হবে না। প্রতি মুহূর্তে আমি ইস্তিগফারকারী।

ওয়ালি উল্লাহ সিরাজ একজন বিশিষ্ট আলেম। তিনি বলছেন, ‘আমাদের নবী (সা.) নিজে সারা দিনে অনেকবার আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করতেন এবং সবাই যেন আল্লাহর দরবারে ক্ষমাপ্রার্থনা করে সেজন্য তাগিদ দিতেন।’ কোরআন ও হাদিসে অনেক ইস্তিগফার আছে। এমন একটি ইস্তিগফার, যা নবী (সা.) সব সময় করতেন। হজরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন, আমরা মজলিসে গণনা করতাম; রসুল (সা.) ১০০ বার বলতেন. ‘রাব্বিগফিরলি ওয়া তুব আ’লা; ইন্নাকা আনতাত তাইয়্যাবুর রাহিম’। অর্থ : হে আমার রব! তুমি আমাকে ক্ষমা কর এবং আমার তওবা কবুল কর। নিশ্চয় তুমি তওবা কবুলকারী ও দয়াশীল। আবু দাউদ, তিরমিজি। একটি গল্প দিয়ে শেষ করি। ইমাম হাম্বল গেছেন এশার নামাজ পড়তে এক মসজিদে। সেখানে কেউ তাকে চেনে না। তিনি কারও কাছে তার নিজ পরিচয় দিতে উৎসাহী নন। বয়স হয়েছে, মসজিদের এক কোনায় আশ্রয় নিলেন। দারোয়ান বের করে দিলেন। বললেন, মসজিদ শোয়ার জায়গা নয়, ইবাদতের জায়গা। ইমাম চললেন মসজিদের বাইরে একটি বারান্দায় যেখানে তার রাত্রিবাসের একটি সুযোগ হতে পারে। সেখান থেকেও তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হলো। বললেন, এখানে ঘুমাতে পারবেন না। শুধু বসে থাকতে পারেন। ক্লান্তির বোঝা নিয়ে বৃদ্ধ ইমাম হাম্বল বেরোলেন পথে। দেখলেন, একজন রুটিওয়ালা রুটি তৈরি করছেন। রুটির সুগন্ধ জায়গাটিতে ছড়িয়ে পড়েছে। বললেন, বাবা তুমি কি আমাকে একটি রুটি দিতে পারবে? একটির জায়গায় দুটি পেলেন। তখন ইমাম একটু সাহস করে বললেন, তোমার যে চারপায়াটি পড়ে আছে ওইটি আমাকে আজকে রাতের মতো দেওয়া কি একেবারেই অসম্ভব? রুটিওয়ালা অনায়াসেই তার কথায় রাজি হলেন। ইমাম হাম্বল লক্ষ্য করছেন যে রুটিওয়ালা তার কোনো কথারই জবাব দেননি, শুধু হ্যাঁ-হু করা ছাড়া এবং বিড়বিড় করে কী যেন বলে চলেছেন। ইমাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, বাবা আমি ঘুমাতে যাচ্ছি, একটা কথার উত্তর না শুনে আমি যাব না। তা হলো, তুমি এতক্ষণ ধরে কী বলে যাচ্ছ? রুটিওয়ালা বললেন, সারাক্ষণ ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ পড়ছি। আর কোনো দোয়া জানা নেই, তাই। ইমাম জিজ্ঞাসা করলেন, এতে কী লাভ হয়? রুটিওয়ালা বললেন, কী লাভ হয় শুনবেন? আল্লাহতায়ালা প্রতি মুহূর্তে আমার গুনা মাফ করে দিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, আজ রাতের জন্য সারা জাহানের আলেমদের সবচেয়ে ভালোবাসার মানুষ ইমাম হাম্বলকে উপস্থিত করেছেন আমার অতিথি হিসেবে।

ইদানীং রাস্তাঘাটে প্রতিদিন কমপক্ষে তিন ঘণ্টা সময় ব্যয় করছি। অনেকের কাছে এটি যন্ত্রণাদায়ক। কিন্তু এর মধ্যেও কিছু লোক আল্লাহকে শুকরিয়া জানাচ্ছেন, যিনি ওই সময়টি ব্যয় করছেন শুভ কাজে। ‘আস্তাগফিরুল্লাহি রাব্বি মিনকুল্লি জামবিউ ওতুবু ইলাইহি, লা হাওলা ওয়ালা কুউয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিউল আজিম’।

মুস্তাফা জামান আব্বাসী, সাহিত্য-সংগীত ব্যক্তিত্ব, [email protected]

সর্বশেষ খবর