শিরোনাম
শুক্রবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

জিএফ সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী কানাডায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

গ্লোবাল ফান্ড (জিএফ) সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন কানাডায়। আজ শুক্রবার কানাডার মন্ট্রিলে শুরু হচ্ছে এ সম্মেলন। প্রধানমন্ত্রী গতকাল লন্ডন থেকে মন্ট্রিল পৌঁছান। কানাডা যাত্রাপথে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে ২২ ঘণ্টার যাত্রাবিরতি করেন তিনি। কানাডায় গ্লোবাল ফান্ড সম্মেলন ও যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭১তম সভায় যোগ দিতে ১২ দিনের সরকারি সফরে গত বুধবার ঢাকা ত্যাগকরেন প্রধানমন্ত্রী।এদিকে মঙ্গলবার ঈদের দিন সকালে গণভবনে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে যার যার অবস্থান থেকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, মসজিদের ইমাম, ওলামা-মাশায়েখ, ছাত্র-শিক্ষকসহ বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমার আহ্বান থাকবে, জঙ্গিবাদের প্রতিরোধের ব্যাপারে আপনারা সচেতন থাকবেন। বাংলাদেশে কোনো জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ চাই না। সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী দলীয় নেতা-কর্মী, কবি, সাহিত্যিক, লেখক, সাংবাদিক, শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবীসহ সর্বস্তরের নাগরিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এরপর বিচারপতি ও কূটনীতিকদের ঈদের শুভেচ্ছা জানান তিনি।

আজ গ্লোবাল ফান্ড সম্মেলনের উদ্বোধন : এইডস, যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের লক্ষ্যে করণীয় নিয়ে দুই দিনের গ্লোবাল ফান্ড সম্মেলন শুরু হচ্ছে আজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ট্রিলের হায়াত রিজেন্সিতে এ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। বিকালে তিনি একই হোটেলে অন্যান্য রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে সম্মেলনের মিনিস্ট্রিয়াল প্লেজিং মোমেন্ট ও আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনায় অংশ নেবেন। পরে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর দেওয়া নৈশভোজে অংশ নেবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে আগামীকাল শনিবার শেখ হাসিনা কানাডার প্রধানমন্ত্রী ও গ্লোবাল ফান্ডের নির্বাহী পরিচালক মার্ক ডাইবালের সঙ্গে সম্মেলনে যোগ দেবেন।

এ ছাড়া দুটি প্যানেল আলোচনায় অংশ নেবেন তিনি। এরপর কানাডার গভর্নর জেনারেল ডেভিড জনস্টনের যৌথ আয়োজনের মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে শেখ হাসিনার। সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে যোগ দেওয়ার পর শেখ হাসিনা কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। এ ছাড়া অন্যান্য রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে গ্লোবাল ফান্ড ও গ্লোবাল সিটিজেন আয়োজিত কনসার্টে অংশ নেবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

কানাডা সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে এয়ার কানাডার একটি ফ্লাইটে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক পৌঁছাবেন। বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানানোর পর প্রধানমন্ত্রীকে একটি মোটর শোভাযাত্রার মাধ্যমে নিউইয়র্কের পার্ক এভিনিউয়ের হোটেল ওয়ার্ল্ডোফ অ্যাস্টোরিয়ায় নিয়ে যাওয়া হবে। নিউইয়র্ক সফরে তিনি এ হোটেলেই থাকবেন। শেখ হাসিনা ১৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদরদফতরে উদ্বাস্তু ও অভিবাসনের ওপর সাধারণ পরিষদের উচ্চপর্যায়ের প্ল্যানারি বৈঠকে ভাষণ দেবেন। এরপর তিনি মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সাং সু চির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। ওই দিন বিকালে জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি গোলটেবিলে কো-চেয়ারের দায়িত্ব পালন করবেন। প্রধানমন্ত্রী ২০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনের সাধারণ আলোচনার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। পরে তিনি হোটেল ম্যারিয়ট ইস্টসাইডে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে আয়োজিত কাউন্টার টেররিজমের ওপর এশিয়ান লিডার্স ফোরামের বৈঠকে যোগ দেবেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আয়োজিত উদ্বাস্তু বিষয়ক একটি বৈঠক এবং এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

২২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ওই দিনই সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত গ্লোবাল ডিল ইনিশিয়েটিভের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা শেখ হাসিনার। ওই দিন বিকালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনের সাধারণ আলোচনায় বক্তব্য রাখবেন শেখ হাসিনা। রাতে নিউইয়র্ক হোটেল গ্র্যান্ড হায়াতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এবং ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখবেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেওয়ার সময় বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও কমনওয়েলথ মহাসচিব, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের নির্বাহী চেয়ারম্যান এবং বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২২ সেপ্টেম্বর সড়কপথে ভার্জিনিয়ার উদ্দেশে নিউইয়র্ক ত্যাগ করবেন। ২৫ সেপ্টেম্বর এমিরেটস এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে দেশের উদ্দেশে ওয়াশিংটন ডিসি ত্যাগ করবেন। সফর শেষে ২৬ সেপ্টেম্বর বিকালে প্রধানমন্ত্রীর ঢাকায় ফেরার কথা।

লন্ডন যাত্রাপথে সহযাত্রীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় : প্রধানমন্ত্রী বুধবার শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডন রওনার সময় তাকে বিদায় জানান কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, তিন বাহিনীর প্রধানরা এবং সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তারা। লন্ডন যাত্রাপথে বিমানের যাত্রীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে যাত্রীরা আবেগাপ্লুত হয়ে ওঠেন। প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি যাত্রীর সঙ্গে হেঁটে হেঁটে কথা বলেন। এ সময় শিশুদের সঙ্গে মজা করে কথা বলা ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী বয়স্কদের জড়িয়ে ধরে তাদের কুশল জানতে চান। বিমানে হঠাৎ করে নিজের আসনের পাশে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে দেখে অভিভূত হন যাত্রীরা। প্রধানমন্ত্রী যাত্রীদের খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি বিমান সার্ভিস কেমন লাগছে তাও জানতে চান তাদের কাছে।

জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় সময় বুধবার বিকাল ৪টার দিকে লন্ডনে হিথ্রো বিমানবন্দরে নামলে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার খন্দকার এম তালহা তাকে স্বাগত জানান। লন্ডনে যাত্রাবিরতি শেষে স্থানীয় সময় গতকাল দুপুরে এয়ার কানাডার একটি ফ্লাইটে মন্ট্রিল রওনা হন শেখ হাসিনা। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, লন্ডনে অবস্থানের সময় নাতনি আজালিয়া জয় পার্সির সঙ্গে ব্যক্তিগত সময় কাটিয়েছেন শেখ হাসিনা। আজালিয়া জয় পার্সি প্রধানমন্ত্রীর বোন শেখ রেহানার মেয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের কন্যা। সংক্ষিপ্ত এই যাত্রা বিরতিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে ঘরোয়া সাক্ষাতের সময়ও নানী শেখ হাসিনার কোলে ছিল শিশু আজালিয়া জয় পার্সি।

নিরীহ মানুষ হত্যা মানবতাবিরোধী কাজ : ঈদের দিন গণভবনে বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যারা নিরীহ মানুষকে মারে, তারা কখনো ধর্মে বিশ্বাস করতে পারে না। নিরীহ মানুষ হত্যা করা মানবতাবিরোধী কাজ। নিরীহ মানুষকে হত্যা করে কেউ বেহেস্তে যেতে পারে না। পবিত্র ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম, তারা ইসলাম ধর্মকে হেয় প্রতিপন্ন করছে। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে সোচ্চার হতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপ্রিয়, সহনশীল। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় তারা বিশ্বাস করে। যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। প্রত্যেক মানুষ যেন তার ধর্ম শান্তিপূর্ণ ও সম্মানের সঙ্গে পালন করতে পারে, এটাই হচ্ছে ইসলামের মূল শিক্ষা। আমরা সেভাবেই এ দেশকে গড়ে তুলতে চাই। এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতা চাই। আমি ধন্যবাদ জানাই, প্রত্যেকে যথেষ্ট সাড়া দিয়েছেন এবং যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছেন। আগামীতে এটা অব্যাহত থাকবে, সেটাই আমি চাই। এ সময় গাজীপুরের টাম্পাকো ফয়েলস কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে ৩৩ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। যারা নিহত হয়েছেন, তাদের পরিবারবর্গকে এবং আহতদের সচরাচর যেভাবে সাহায্য করে থাকি, আমরা সেভাবেই করব।

সর্বশেষ খবর