শুক্রবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

শান্তি কামনায় পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্‌যাপিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

শান্তি কামনায় পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্‌যাপিত

কখনো ঝমঝমিয়ে আবার কখনো ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টির মধ্য দিয়ে সারা দেশে উদ্‌যাপিত হয়েছে ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আজহা। এই বৃষ্টির মধ্যেই হাজার মুসল্লির ঢল নেমেছিল রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। অনেকে বৃষ্টিতে ভিজেই ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। বৃষ্টিভেজা হাত তুলেছেন মহান আল্লাহর দরবারে। রোনাজারি করেছেন নিজের এবং দেশ-জাতির শান্তি ও কল্যাণ কামনায়। বৃষ্টির কারণে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় খোলা মাঠ ও ঈদগাহের পরিবর্তে ঈদের জামাত সরিয়ে নেওয়া হয় মসজিদে। তবে বৃষ্টিতে ভেজা মাঠেই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবার শোলকিয়া মাঠের অর্ধেকই ছিল খালি। গেল ঈদে শোলাকিয়ার ঈদের জামাতে জঙ্গি হামলার চেষ্টা হয়েছিল। এর আগে ঘটেছিল হলি আর্টিজান ট্র্যাজেডি। সে কারণে এবারের ঈদে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছিল খুবই সতর্ক। রাজধানীসহ দেশের বড় ঈদের জামাত ঘিরে নেওয়া হয়েছিল কড়া নিরাপত্তা। জনগণের মধ্যেও ছিল এক ধরনের উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা। শেষ পর্যন্ত ঈদের দিনটি নির্বিঘ্নে কেটে যাওয়ায় স্বস্তি বোধ করছেন দেশবাসী। ঈদের প্রধান জামাত ঘিরে হাইকোর্ট চত্বর, মত্স্য ভবন মোড়, সেগুনবাগিচা, প্রেসক্লাব চত্বর এলাকায় নেওয়া হয়েছিল বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

ঈদের নামাজ শেষে বৃষ্টি মাথায় নিয়েই কোরবানিদাতারা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করেছেন। রাজধানীতে নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানি করার উদ্যোগ এবারও ব্যাহত হয়েছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির পানি জমে যাওয়ায় মূল সড়কে কোরবানি করেছেন অনেকে। তবে নিজ উদ্যোগে অধিকাংশ মানুষকে কোরবানির পশুর রক্ত পরিষ্কার করতে দেখা গেছে। এবার ঈদে বর্জ্য অপসারণের জন্য ঢাকা সিটি করপোরেশনের দুই মেয়রের পক্ষ থেকে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় বর্জ্য অপসারণের সুবিধার জন্য বড় প্লাস্টিক ব্যাগ সরবরাহ করা হয়। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বর্জ্য অপসারণের অঙ্গীকার পূরণেও সিটি করপোরেশনের কর্মীদের তত্পর দেখা যায়।

মঙ্গলবার সকাল ৮টা ০৫ মিনিটে বৃষ্টির মধ্যেই জাতীয় ঈদগাহে শুরু হয় ঈদুল আজহার প্রধান জামাত। এতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররমের সিনিয়র পেশ ইমাম মাওলানা মিজানুর রহমান। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, মন্ত্রিসভার সদস্য, বিচারপতি, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, বিভিন্ন মুসলিম দেশের রাষ্ট্রদূতসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রধান ঈদ জামাতে অংশ নেন। নামাজ শেষে গুনাহ মাফ ও কোরবানি কবুলসহ দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। জাতীয় ঈদগাহে ঈদের নামাজ পড়তে আসা মো. দুলাল হোসেন প্রতিক্রিয়ায় বলছিলেন, ‘কয়েক দিন আগে টঙ্গীর কারখানায় আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের জন্য দোয়া করেছি। কার কখন কী হয়, তার কোনো ঠিক নাই। সারাক্ষণ টেনশনে থাকি। আল্লাহর দরবারে বলেছি, তিনি যেন সবাইকে সহি-সালামতে রাখেন। কেউ যেন টঙ্গীর কারখানার মতো আগুনে পুড়ে না মরে।’

সকাল ৭টা থেকে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে শুরু হয় ঈদের জামাত। প্রথম জামাতে ইমামতি করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা মুহিব্বুল্লাহিল বাকী নদভী। এরপর এক ঘণ্টা পর পর এখানে চারটি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে।

বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ঈদুল আজহার চারটি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে সকাল সোয়া ৭টায় ঈদ জামাত হয় ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বড় মসজিদে, এফ ব্লক মসজিদে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল সাড়ে ৭টায়, সি ব্লক মসজিদে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় পৌনে ৮টায় এবং এন ব্লকে ফকিহুল মিল্লাত মুফতি আবদুর রহমান মসজিদে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৮টায়।

রাজারবাগে ঈদের নামাজ : মঙ্গলবার সকাল ৮টায় রাজধানীর রাজারবাগ জামে মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) এ কে এম শহীদুল হক, র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। নামাজ শেষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা পুলিশ ও মুসল্লিদের সঙ্গে কোলাকুলি ও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

সংসদ ভবনে ঈদের বিশেষ জামাত : পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টায় জাতীয় সংসদ এলাকায় বিশেষ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় এ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। বৃষ্টির কারণে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে নির্ধারিত খোলা ময়দানে নামাজ হতে পারেনি।

এদিকে ঈদ জামাত শেষে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েন পশু কোরবানির তোড়জোড়ে। তবে বৃষ্টির কারণে এ নিয়ে সমস্যায় পড়েন অনেকে। জিলহজ মাসের দশম দিন উদ্যাপিত মুসলিমদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বাংলাদেশে কোরবানির ঈদ নামে পরিচিত। এদিন পশু জবাই দেওয়ার মাধ্যমে মনের পঙ্কিলতাকে বিসর্জন দেওয়া ইসলামের শিক্ষা।

এবার নগর পরিচ্ছন্ন রাখতে কোরবানির পশুর বর্জ্য যাতে পরিবেশের দূষণ না ঘটায় সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৮ ঘণ্টার বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করে। বর্জ্য অপসারণে দুই সিটি করপোরেশনে ১০ হাজার ৫৪৪ জন পরিছন্নতাকর্মী কাজ করেন বলে জানা গেছে।

এবার প্রথম ভারতীয় গরু ছাড়াই বাংলাদেশে কোরবানির ঈদ উদ্যাপিত হলো। এ জন্য শুরুতে রাজধানীর পশুর হাটগুলোতে গরুর দাম বেশ চড়ে যায়। তবে ঈদের আগের দিন হাটগুলোতে ব্যাপকভাবে গরুর ট্রাক আসতে শুরু করলে গরুর দাম একদম পড়ে যায়। যে গরু ৮২ হাজার টাকা বলার পরও বিক্রেতা বিক্রি করেনি, সেই গরু ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। এ ছাড়া এবার ঈদযাত্রায় বরাবরের মতো ভোগান্তি থাকলেও বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল নিয়ে মানুষের সন্তুষ্টি দেখা গেলেও সড়কপথে যানজট নিয়ে অভিযোগ ছিল অনেকের। বরাবরের মতো এবারও ঈদের দিন সকালে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুভেচ্ছা বিনিময় করেন গণভবনে।

ঈদ উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। বিভিন্ন সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সাজানো হয় মনোরম সাজে।

দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশুসদন, ছোটমণি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, আশ্রয়কেন্দ্র, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র ও দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে পরিবেশন করা হয় বিশেষ খাবার।

ঈদ উৎসবের জন্য রাজধানীসহ দেশের সব বিনোদনকেন্দ্র সাজে নতুন করে। সকালের বৃষ্টিতে আনন্দ উৎসবে চোখরাঙানি থাকলেও দুপুরের পর বৃষ্টি না থাকায় মানুষ বেরিয়ে পড়ে নিজের মতো করে ঈদ উদ্‌যাপনে।

সর্বশেষ খবর