শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিএনপির টার্গেট সংসদ নির্বাচন

চলতি বছরজুড়েই চলবে দল গোছানো, মধ্যবর্তী ভোটের ভাবনা নেই

মাহমুদ আজহার

বিএনপির টার্গেট সংসদ নির্বাচন

পরবর্তী সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করেই সব পরিকল্পনা গ্রহণ করছে বিএনপি। তারা ধরেই নিয়েছে, নির্ধারিত মেয়াদ শেষেই নির্বাচন দেবে সরকার। বিএনপিও সেই প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে। অবশ্য এর আগে নির্বাচন দিলেও তাতে অংশ নেবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট। তবে নির্বাচন যখনই হোক, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিশ্চয়তা চায় তারা। এজন্য দেশি-বিদেশি চাপ প্রয়োগের সর্বাত্মক চেষ্টাও চালানোর উদ্যোগ নিয়েছেন বিএনপির কূটনৈতিক-সংশ্লিষ্ট নেতারা। দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বিএনপির সূত্রগুলো জানায়, চলতি বছর জুড়েই সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকবে বিএনপি। নতুন বছরের টানা তিন মাসও দল নিয়েই ব্যস্ত থাকবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দলকে শক্তিশালী করে আগামী বছরের মাঝামাঝিতে সবার কাছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবি নিয়ে ফের রাজপথে নামার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। মধ্যবর্তী নাকি নতুন নির্বাচন— বিএনপির কাছে তা এখন মুখ্য নয়। এ নিয়ে দেশি-বিদেশি চাপ প্রয়োগে দলের কূটনৈতিক মহল কাজ করে যাচ্ছে। সর্বশেষ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বাংলাদেশ সফরে এলে তার সঙ্গে বেগম জিয়ার বৈঠকে এ বিষয়টির ওপর জোর দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে গতকাল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘মধ্যবর্তী নির্বাচন আবার কী, আমরা তো এ মুহূর্তে নির্বাচন চাই। কিন্তু সেই নির্বাচনটা হতে হবে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ সরকারের অধীন। আগামী নির্বাচন সম্পর্কে একটা আলোচনা হওয়া উচিত যে, নির্বাচনটা কীভাবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, ইনক্লুসিভ হতে পারে।’

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এখন পবিত্র হজ পালন শেষে সৌদি আরব অবস্থান করছেন। দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও হজ পালন করেছেন। ২২ সেপ্টেম্বর বেগম জিয়ার দেশে ফেরার কথা। এসেই তিনি আবারও সাংগঠনিক তত্পরতা শুরু করবেন। দলীয় আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, সৌদি আরব থেকে লন্ডনও যেতে পারেন বিএনপি-প্রধান। সেখানে ছেলের সঙ্গে সংগঠন ও দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলবেন। এরপর দেশে ফিরেই পুরোদমে দল গোছানোর উদ্যোগ নেবেন। কেন্দ্রীয় কমিটির কিছু অসঙ্গতি দূর করার পাশাপাশি কয়েকটি অঙ্গসংগঠনের কমিটিও দেবেন। পাশাপাশি জেলা পর্যায়ের কমিটিও পুনর্গঠন করবেন। দলের ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহানকে ইতিমধ্যে তৃণমূল পুনর্গঠনে দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘চেয়ারপারসন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তিনি এলে দলের আগামী দিনের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হবে। ইতিমধ্যে দল পুনর্গঠন শুরু হয়েছে। কেন্দ্র থেকে ইউনিয়ন— সবই পুনর্গঠন হচ্ছে। এটা চলমান প্রক্রিয়া। তবে নতুন নির্বাচনের দাবিও মাথায় আছে বিএনপির। আমাদের লক্ষ্য হলো, আগামীতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। এ নিয়ে আগের অবস্থানেই আছে বিএনপি।’ চলতি বছরের ১৯ মার্চ দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির কাউন্সিল করে বিএনপি। সম্মেলনের সাড়ে পাঁচ মাস পর গত মাসে কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আংশিক কমিটিও একই দিন ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া ২৯ আগস্ট ঢাকা জেলার (আংশিক) ঘোষণা করা হয়। একই দিনে জেড এম রেজওয়ানুল হককে আহ্বায়ক করে দিনাজপুর জেলা কমিটিও ঘোষণা করা হয়েছে। বিএনপির ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ১০টির কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। চলতি বছরে বাকি ৬৫টি জেলা কমিটি করার চিন্তাভাবনা রয়েছে। জেলা পুনর্গঠনে সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার পর নতুন করে তৃণমূল পুনর্গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। এ নিয়ে যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে দুই দফা বৈঠকও হয়েছে। ঈদুল আজহাও শেষ হয়েছে। আমরা খুব শিগগিরই জেলা পর্যায়ের কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শুরু করব। দল গুছিয়ে পরবর্তী নির্বাচনের জন্য নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত করাই আমাদের লক্ষ্য।’ সূত্রে জানা যায়, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে আগামী বছরের মাঝামাঝিতে রাজপথে নামতে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল কমিটিও সেই প্রক্রিয়ায় গঠন করা হচ্ছে। বিগত ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন ঘিরে আন্দোলনের ব্যর্থতার জন্য অগোছালো সংগঠনকেও দায়ী করা হচ্ছে। তাই কেন্দ্রীয় কমিটির পাশাপাশি ঢাকা মহানগর ও অঙ্গসংগঠনে আন্দোলনমুখী নেতৃত্ব গড়ে তোলাই লক্ষ্য বেগম জিয়ার। জেলা কমিটি পুনর্গঠনেও বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিএনপির সিনিয়র কয়েকজন নেতা জানান, মামলার জালে থাকা চেয়ারপারসনকে সাজাও দিয়ে দিতে পারে সরকার। ইতিমধ্যে তারেক রহমানকে এক মামলায় সাজা দিয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাজাও দিতে পারে। শীর্ষ দুই নেতাকে সাজা দিয়ে নতুন নির্বাচনের চেষ্টা সরকারের রয়েছে। সেই পরিস্থিতি হলে করণীয় কী হবে, তা নিয়ে এখনই চিন্তাভাবনার সময় এসেছে। বেগম জিয়া এ বিষয়টি নিয়েও ছেলের সঙ্গে শলাপরামর্শ করছেন। বিএনপির মধ্যসারির কয়েকজন নেতা জানান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের অবর্তমানে দল আবারও চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে পারে। একটি অংশ দল থেকে বেরিয়ে নতুন কিছু করার তত্পরতা চালাতে পারে। এ বিষয়টি দলের শীর্ষ নেতৃত্বের জানা রয়েছে। সন্দেহভাজন নেতাদের গতিবিধিও পর্যবেক্ষণ করছেন খোদ বেগম খালেদা জিয়া। স্পর্শকাতর কোনো কাজে সন্দেহভাজন নেতাদের রাখা হচ্ছে না। ঘোষিত কমিটিতেও কয়েকজন সন্দেহভাজন নেতাকে পদাবনতি করা হয়েছে। দলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম বলেন, ‘বিএনপির সংগঠন পুনর্গঠনের লক্ষ্য পরবর্তী নির্বাচন। আন্দোলনের মাধ্যমে নির্বাচনের দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করা হবে। এজন্য দলের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করতে হবে। সব বিভেদ ভুলে সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। আমাদের এখন লক্ষ্য অবৈধ সরকারের পতন ঘটানো। সেজন্য আগামীতে খালেদা জিয়া যে আন্দোলনের ডাক দেবেন, তাতে সবার অংশগ্রহণ থাকতে হবে। কোনোভাবেই দলে যেন ফাটল না ধরে সেই চেষ্টাও চালাতে হবে।’

সর্বশেষ খবর