রাজধানীর মিরপুরে মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী জেবুন্নাহার ওরফে শিলাকে খুঁজছে পুলিশ। তার অবস্থান রাজধানীর আজিমপুরে ধারণা করলেও গতকাল পর্যন্ত তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে সম্ভাব্য সব জায়গায় অভিযান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ। তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১০ মাস বয়সী সন্তানটি শিলার সঙ্গেই রয়েছে। এ শিলাই অন্য জঙ্গিদের স্ত্রীদের সঙ্গে সমন্বয় করতেন বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে। অন্যদিকে জাহিদ-শিলা দম্পতির মেয়ে জুনাইরা ইসলাম ওরফে পিংকিকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে আদালতের নির্দেশে তাদের হেফাজতে নিয়ে গেছেন তার পরিবারের সদস্যরা। আজিমপুর জঙ্গি আস্তানা থেকে গ্রেফতার তিন নারী জঙ্গির চিকিৎসা চলছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে।
ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) আসমা সিদ্দিকা মিলি এই প্রতিবেদককে বলেন, আদালতের নির্দেশে জুনাইরাকে নিতে এসেছিলেন তার দাদা নুরুল ইসলাম, দাদি জেবুন্নাহার, ফুফু সনিয়া ও নানা-নানি। তবে জুনাইরাকে তার নানার জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।
কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন, মেজর জাহিদের স্ত্রী শিলা গোয়েন্দা জালের মধ্যেই আছেন। তাকে ধরার চেষ্টা চলছে। শিলা জেএমবির নারী ইউনিটের সদস্য হতে পারেন বলে ধারণা পাওয়া গেছে। জাহিদ নিহত হওয়ার পরপরই শ্যামলীর একটি বাসা থেকে গা-ঢাকা দেন শিলা। সর্বশেষ আজিমপুরে আবিষ্কৃত জঙ্গি আস্তানায় শিলা দুই সন্তান নিয়ে অবস্থান করছিলেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।তিনি আরও বলেন, রূপনগরে পুলিশের অভিযানে মেজর (অব.) জাহিদ নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত শিলা শ্যামলীর এক আত্মীয়ের বাসায় ছিলেন। তদন্তে শিলার জঙ্গিসম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেলে তাকে ধরতে অভিযান শুরু হয়। জাহিদের গ্রামের বাড়ি ও শ্বশুরবাড়িও অভিযান চালানো হয়। শিলাকে ধরতে পারলে নব্য জেএমবি ও জাহিদ সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে। বিশেষ করে জাহিদের সঙ্গে কোন কোন জঙ্গি নেতার ঘনিষ্ঠতা ছিল, জাহিদ কীভাবে জঙ্গিবাদে জড়ালেন, জাহিদের কথামতো শিলাও কেন জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন, নব্য জেএমবি নারী জঙ্গি সদস্য কতজন এমন আরও অনেক তথ্য। এই দম্পতি গত এপ্রিলে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দুই সন্তান নিয়ে পুরোপুরি জঙ্গিবাদের সঙ্গে মিশে যান।
ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের উপকমিশনার (ডিসি) মহিবুল ইসলাম গতকাল বলেন, আজিমপুরে আহত তিন নারী জঙ্গিকে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে জঙ্গি দমন অভিযানে এ পর্যন্ত যেসব জঙ্গি সদস্য নিহত হয়েছেন তাদের লাশও মর্গের মরচুয়ারিতে রাখা হয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের লাশ হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত এখনো নেওয়া হয়নি।
শনিবার রাতে আজিমপুর ২ নম্বর বিডিআর গেটসংলগ্ন ২০৯/৫ নম্বর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ জঙ্গি আস্তানা উদ্ধার করে। ওই আস্তানা থেকে এক নারী তার ১০ মাস বয়সী শিশু সন্তানকে রেখে পলিয়ে যান। অভিযানে সন্দেহভাজন এক জঙ্গি নিহত হন। আহত হন তিন নারী ও পুলিশের পাঁচজন সদস্য।
অন্যদিকে, আজিমপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে আহত তিন নারী শারমীন, খাদিজা ও শায়লার চিকিৎসা চলছে ঢামেক হাসপাতালে। এদের মধ্যে শারমিন মারজানের স্ত্রী, খাদিজা নিহত জঙ্গি তানভীরের স্ত্রী আর রাহুলের স্ত্রী শায়লা। শারমিন অভিযানের সময় পুলিশকে ছুরি দিয়ে আঘাত করেন বলে জানা গেছে। গতকাল সরেজমিনে হাসপাতালের কেবিনে গিয়ে দেখা যায়, কেবিনের সামনে চারজন পুলিশ সতর্ক পাহারা দিচ্ছেন। জানতে চাইলে সেখানে দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্য বলেন, ২৪ ঘণ্টা নজরদারির মধ্যে রেখে এসব নারী জঙ্গির চিকিৎসা চলছে। কারণ, একদিকে তারা দুর্ধর্ষ জঙ্গিদের স্ত্রী, অন্যদিকে তারা নিজেরাও নব্য জেএমবির আত্মঘাতী স্কোয়াডের সদস্য। এদের ছিনিয়ে নেওয়ার আতঙ্ক যেমন রয়েছে, তেমন এরা হাসপাতালে থেকেও যে কোনো ধরনের অঘটন ঘটাতে পারেন।
ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক মিজানুর রহমান গতকাল বিকালে বলেন, আহত নারী জঙ্গিদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে তাদের নিয়ে কিছুটা আতঙ্কও রয়েছে। তাদের নিরাপত্তার দেখভাল করছে পুলিশ।
সরেজমিনে জানা যায়, চিকিৎসক, নার্স, পুলিশ ছাড়া জঙ্গিদের কেবিনে ঢুকতে হলে অনুমতি লাগে। সেখানে সাংবাদিকদেরও প্রবেশ নিষেধ। এই তিন নারী জঙ্গি নিজেরা অস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা এবং পিস্তল দিয়ে পুলিশের ওপর গুলি চালানোর চেষ্টা করেছিলেন।
ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আজিমপুরে আহত তিন নারী জঙ্গি এবং এর আগে পৃথক অভিযানে যেসব জঙ্গি সদস্য নিহত হয়েছেন তাদের লাশ হস্তান্তর না হওয়া হওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার থাকবে।