বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির সঙ্গে দেশি-বিদেশি ৬০ জন জড়িত রয়েছেন। এরা বাংলাদেশ, ফিলিপাইন, চীন, হংকংসহ অন্তত ১০টি দেশের নাগরিক। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের রয়েছেন ১০ জন। ঘটনা তদন্তে ইন্টারপোল এবং সংশ্লিষ্ট কয়েকটি দেশ সহযোগিতা করছে। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সন্দেহভাজন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্রটি বলছে, রিজার্ভ চুরি প্রক্রিয়ার সঙ্গে ৩০ জন জড়িত রয়েছেন। ক্যাসিনো থেকে টাকা নিয়েছেন ২০ জন। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০ জনও এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে রয়েছেন। সব মিলিয়ে রিজার্ভ চুরির সঙ্গে অন্তত ৬০ জনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এদের ব্যাপারে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকে সুইফটের শক্তিশালী সুরক্ষিত সার্ভারকে দিন দিন দুর্বল করা হয়েছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ওই সার্ভারে প্রবেশ সম্ভব নয়। সেখানে ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। ফলে হ্যাকাররা অনায়াসে ওই সার্ভারে ঢুকে পড়ে। এক পর্যায়ে সার্ভার হ্যাক করে পাঁচটি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ১০১ মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নেয়। এ অ্যাকাউন্টের মধ্যে ফিলিপাইনের ৪টি এবং শ্রীলঙ্কার একটি রয়েছে।পরবর্তীতে এ বিষয়ে মামলা হয়। মামলার তদন্ত শুরু করে সিআইডি। তদন্তের এক পর্যায়ে শ্রীলঙ্কা ২০ মিলিয়ন ডলার এবং ফিলিপাইন ৬৮ হাজার ৩০৫ ইউএস ডলার ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সর্বশেষ ফিলিপাইন থেকে ১৫ মিলিয়ন ডলার ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ। যা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও গতকাল এ তথ্য জানিয়েছেন। সিআইডি মনে করে বাংলাদেশের প্রচলিত মানি লন্ডারিং আইন অনুযায়ী জড়িতদের জেল-জরিমানাসহ চুরিকৃত অর্থের ডাবল ফেরত দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্তত ২০-২৫ জন কর্মকর্তার বিদেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তারা যাতে দেশত্যাগ না করতে পারেন এ জন্য স্থল, নৌ ও আকাশ পথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। সিআইডি মনে করছে, তারা দেশত্যাগ করলে তথ্য-উপাত্ত ও মামলার আলামত নষ্ট করে ফেলতে পারে। এমনকি তদন্তের সব ধরনের পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানি লন্ডারিং (এপিজি)-এর বার্ষিক সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির সঙ্গে জড়িতদের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করা হয়েছে। সেখানে রিভার্জ চুরির সঙ্গে জড়িতদের ব্যাপারে তথ্য চাওয়া হয়েছে। তারা তথ্য-উপাত্ত এবং তদন্তকাজে সহযোগিতা করবেন বলে সিআইডিকে আশ্বস্ত করেছেন। এসব তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেলে তদন্তকাজ সমাপ্তের দিকে এগিয়ে যাবে। সিআইডির তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, রিজার্ভ চুরির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তার চরম গাফিলতি ও অবহেলা পাওয়া গেছে। টাকা কীভাবে বিভিন্ন জায়গায় চলে গেছে তা বের করা হয়েছে। এর সঙ্গে কারা কীভাবে জড়িত তাও বের করা হচ্ছে। তবে তদন্তকাজ শেষ হতে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। সিআইডির তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা এডিশনাল ডিআইজি মো. শাহ আলম বলেন, রিজার্ভ চুরি মামলার তদন্তে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। এ ঘটনায় বাংলাদেশ, ফিলিপাইন, চীন, হংকংসহ বেশ কয়েকটি দেশের অন্তত ৫০ জন জড়িত। এদের ব্যাপারের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ইন্টারপোলসহ বেশ কয়েকটি দেশ তদন্তকাজে সহযোগিতা করছে। উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভার হ্যাক করে ৮১ কোটি ডলার স্থানান্তর করে একটি হ্যাকার চক্র। এ ঘটনা দেশ-বিদেশে তোলপাড় সৃষ্টি করে।
চুরি হওয়া রিজার্ভের দেড় কোটি ডলার দু-এক দিনেই আসছে : ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম থেকে চুরি যাওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের দেড় কোটি ডলার আগামী দু-একদিনের মধ্যেই ফেরত পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গতকাল সচিবালয়ে মার্চেন্ট ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। এর আগে গত সোমবার ফিলিপাইনের একটি আদালত এ সংক্রান্ত একটি রায় দেয়। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী গতকাল বলেন, ‘এটা বোধ হয় আইদার আমরা পেয়ে গেছি, অর পাচ্ছি আজ-কালকের মধ্যে। আমার মনে হয় আমরা পেয়েই গেছি।’ রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়ার অর্থের মধ্যে কতটুকু এখন ব্যাংকিং চ্যানেলে আছে— এমন প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সেটা তো আমরা বলতে পারব না।’ গত ফেব্রুয়ারিতে নিউইয়র্ক ফেড থেকে বাংলাদেশের রিজার্ভের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার সরিয়ে ফিলিপিন্সের ব?্যাংক আরসিবিসিতে নেওয়া হয়। ওই অর্থের অধিকাংশ জুয়ার টেবিলে চলে গেলেও তার মধে?্য দেড় কোটি ডলার ফিলিপাইন উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। সোমবার ওই অর্থ বাংলাদেশকে ফেরত দিতে বলা হয় দেশটির আদালতের এক আদেশে। বৈঠকে মার্চেন্ট ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা শেয়ারবাজার চাঙ্গা করতে ৫ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল দাবি করে। তবে অর্থমন্ত্রী তাদের এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কোনো কথা বলেননি। মার্চেন্ট ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলেছেন, অর্থমন্ত্রী তাদের আশ্বস্ত করেছেন এ তহবিলের বিষয়ে তিনি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সঙ্গে কথা বলবেন।