বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

দূরত্ব ঘুচিয়ে তুরস্ক আগ্রহী মুক্তবাণিজ্যে

নিজস্ব প্রতিবেদক

মানবতাবিরোধী বিচার নিয়ে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক দূরত্ব তৈরি হলেও বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নে এগিয়ে এসেছে তুরস্ক। দেশটি আবারও নতুন করে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করার বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছে। গতকাল সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক করেন ঢাকায় নিযুক্ত তুর্কি রাষ্ট্রদূত দেওরিম ওজতুর্ক। দ্বিপক্ষীয় এ বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) মনোজ কুমার রায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের  বলেন, ‘তুরস্ক বাংলাদেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে আগ্রহী। তারা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক অংশীদার। দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (এফটিএ) হলে রপ্তানি বাড়বে। দুই দেশের মধ্যে এ বিষয়ে আলোচনা চলছে।’ তুর্কি রাষ্ট্রদূত সাংবাদিকদের বলেন, দুই দেশের বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়ে তুরস্ক সরকার আন্তরিক। তুরস্কের সঙ্গে বাংলাদেশের এফটিএ স্বাক্ষর এবং রুলস অব অরিজিনের শর্ত শিথিলের বিষয়গুলো তুরস্ক গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে। তুরস্কের সঙ্গে পৃথিবীর প্রায় ১৮টি দেশের এফটিএ আছে, সেখানে বাংলাদেশের সঙ্গে এফটিএ না করার কোনো কারণ নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করে তুর্কি রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তুরস্ক ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। এ সম্পর্ক অটুট আছে এবং থাকবে। তুরস্ক বাংলাদেশের পাশে থাকবে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ তুরস্কে রপ্তানি করেছে ৭২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য, একই সময়ে দেশটি থেকে আমদানি করেছে ১৫৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য। তুরস্কের সঙ্গে রপ্তানি বাণিজ্য বাংলাদেশের পক্ষে। এ অবস্থায় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হলে তা কতটা বাংলাদেশের পক্ষে যাবে, এ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বৈঠকসূত্র জানায়, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে তুরস্কে যেসব পণ্যের রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তৈরি পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ওষুধসহ বেশকিছু পণ্য রয়েছে বিবেচনায়। এ ছাড়া মোড-ফোরের আওতায় দেশটিতে শ্রম রপ্তানির বিষয়টি এফটিএ’র আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা যায় কিনা, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের কৃষি খাতে ঢুকতে চাচ্ছে তুরস্ক। তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে দুই দেশের জয়েন্ট ইকোনমিক কমিশনের সভা অনুষ্ঠিত হবে, সেখানে বিষয়গুলো চূড়ান্ত করা হবে। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা পেলেও তুরস্কের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। দেশটি তার দেশের শিল্প সুরক্ষার অজুহাত তুলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকে ১৭ শতাংশ হারে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে ২০১০ সালে। ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তুরস্ক সফরকালে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তৈরি পোশাকের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক প্রত্যাহারের আবেদন জানান। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তুরস্ক বাংলাদেশে সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আগ্রহ দেখায়। প্রধানমন্ত্রীর ওই সফরের পরপরই তুরস্ক এফটিএ করার জন্য বাংলাদেশকে তাগিদ দিয়ে একটি আগ্রহপত্র পাঠায়। এরপর বাংলাদেশে একাত্তরের মানবতাবিরোধী বিচার কার্যক্রম শুরু হলে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় ভাটা পড়ে। চলতি বছর জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির পর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক তলানিতে ঠেকে। তুরস্ক সরকার ঢাকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠায় ইস্তাম্বুলে। অন্যদিকে ঢাকাও নিজেদের রাষ্ট্রদূতকে ইস্তাম্বুল থেকে নিয়ে আসে। তবে দুই পক্ষের এ দূরত্ব কেটে যায় খুব দ্রুত। জুলাইয়ে তুরস্কে সেনাবাহিনীর ব্যর্থ অভ্যুত্থান-চেষ্টার পর দেশটি আবারও বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহী হয়। গতকাল এ বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ৩০ লাখ মানুষের জীবনের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধী চক্র দেশের মানুষের জানমালের ব্যাপক ক্ষতি করে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের আমলে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছতার সঙ্গে বিচারকাজ চলছে এবং চলবে। গত জুলাইয়ে তুরস্কেও ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছিল। অপরাধীরা এখন কারাগারে। সেখানেও নীতি পরিবর্তন করে বিচারের প্রক্রিয়া চলছে। মন্ত্রী বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অটুট থাকবে। আগামী দিনগুলোয় এ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।

সর্বশেষ খবর