শিরোনাম
শনিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
দশ ট্রাক অস্ত্র থেকে হলি আর্টিজান

সব কিছুতেই আকাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সব কিছুতেই আকাশ

২০০৪ সালের ১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধার থেকে চলতি বছর ১ জুলাইয়ের হলি আর্টিজান হামলা। এর বাইরে যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচাল করতে মালয়েশিয়ায় প্রচারণা। ইন্টারপোলে রেড অ্যালার্টও জারি হয়েছিল তাকে গ্রেফতারের জন্য। সর্বশেষ জঙ্গিসম্পৃক্ততার অভিযোগে ১৯ আগস্ট আটক হওয়ার পর দেশে ফেরত পাঠায় ফেনীর দাগনভূঞার সেই পেয়ার আহমেদ আকাশকে। বর্তমানে তিনি কারাগারে থাকলেও শিগগিরই জঙ্গিসম্পৃক্ততা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন  ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা। জানা গেছে, ২০০৫ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর দুটি একে-৪৭ অস্ত্র নিয়ে তিন সহযোগীসহ র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন ছাত্রশিবিরের সক্রিয় কর্মী পিয়ার আহমেদ আকাশ। ওই ঘটনায় ফেনী মডেল থানায় অস্ত্র আইনের ১৯(ক) ধারায় তৎকালীন র‌্যাব-৭-এর ডিআইজি নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন। কিছুদিন হাজতবাসের পর জামিনে মুক্ত হয়ে দেশেই অবস্থান করছিলেন। ফটিকছড়িতে র‌্যাবের হাতে ক্রসফায়ারে নিহত শিবির ক্যাডার আজরাইল দেলোয়ারের কাছ থেকেই আকাশের অস্ত্র ব্যবসার বিষয়টি জানতে পারে র‌্যাব। ১৯৯৩ সালে ফেনীর শাহীন একাডেমি থেকে এসএসসি পাস করার পর তিনি শিবিরের কর্মকাণ্ডে যুক্ত হন। জড়িয়ে পড়েন অস্ত্র ব্যবসায়। আকাশের স্ত্রীর বড় ভাই ফেনী জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মো. ইউসুফ। ২০০৭ সালে তিনি দেশত্যাগ করে মালয়েশিয়ায় পাড়ি দেন। আখওয়ান গ্রুপের সহযোগিতায় মালয়েশিয়ায় আত্মগোপন করেন। আদম ব্যবসার সঙ্গে কুয়ালালামপুরে নাবিলা আল ইসলাম নামের রেস্ট্ররেন্ট খুলে নেপথ্যে থেকে জড়িয়ে পড়েন যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচালের প্রচারণায়। কৌশলে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগও রক্ষা করতেন মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের সঙ্গে। সূত্র আরও বলছে, প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে নানাভাবে জালিয়াতি, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও ছিল আকাশের বিরুদ্ধে। এ কারণে একপর্যায়ে আখওয়ান গ্রুপ তাকে চাকরিচ্যুত করে তার নামে মালয়েশিয়ায় মামলা করে। ২০১৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর গ্রেফতার হন তিনি। কিছুদিন জেল খেটে বের হয়ে সালাউদ্দিন নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে ব্যবসা শুরু করে ৪ লাখ ৭০ হাজার রিঙ্গিত হাতিয়ে নেন। এ নিয়ে আকাশের বিরুদ্ধে সালাউদ্দিনের মামলা চলমান আছে। পরে নাবিলা আল ইসলাম নামের হোটেলের ব্যবসা খোলেন আকাশ। সেখানেই বিভিন্ন জঙ্গি ভাবাপন্নের আনাগোনা শুরু হয়। আকাশের ছোট ভাই সালেহ আহমেদও প্রতারণার মামলায় ২৬ মার্চ আটক হয়ে বর্তমানে মালয়েশিয়ার কারাগারে রয়েছেন। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, ১৯ আগস্ট সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার সন্দেহে আকাশ ও আরও তিন বিদেশিসহ চারজনকে আটক করে মালয়েশিয়া পুলিশ। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদের পর মালয়েশিয়া পুলিশ নিশ্চিত হয় আর্টিজান হামলায় জড়িত আন্দালিবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করতেন আকাশ। আন্দালিব ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পর ইস্তানবুলে পাড়ি দিয়েছিলেন। পরে ২ সেপ্টেম্বর আকাশকে ঢাকায় ফেরত পাঠায় মালয়েশিয়া। একটি ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনের ব্যবহারের জন্য অস্ত্র পাচারে’ জড়িত থাকার অভিযোগ আনার বিষয়টি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করে রয়্যাল মালয়েশিয়ান পুলিশ। যদিও সেখানে তারা আকাশের নাম প্রকাশ করেনি। মালয়েশীয় পুলিশের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২ আগস্ট থেকে ১৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মালয়েশিয়ার পুলিশ ওই চারজনকে গ্রেফতার করে। বাকি তিনজন নেপাল, মরক্কো ও মালয়েশিয়ার নাগরিক। এর মধ্যে ওই নেপালি মালয়েশিয়ায় একটি বিনোদন আউটলেটের ব্যবস্থাপক ছিলেন। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্যদের ব্যবহারের জন্য ভ্রমণের ভুয়া কাগজপত্র তৈরির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়। আর মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সদস্য সন্দেহে মরক্কোর সেই নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়। সিরিয়ায় অনুপ্রবেশের চেষ্টার পর তুরস্কেও তিনি এর আগে গ্রেফতার হয়েছিলেন। গ্রেফতার চতুর্থ জন মালয়েশিয়ার নাগরিক, যিনি একজন ব্যবসায়ীর ব্যক্তিগত গাড়িচালক। ফেসবুকে আইএসের কর্মকাণ্ডের সক্রিয় সমর্থক মুহাম্মদ ওয়ানদি মোহাম্মদ জেদি নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে এই ড্রাইভারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার তথ্য পেয়েছে মালয়েশিয়া পুলিশ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনী জেলা পুলিশ সুপার রেজাউল হক বলেন, ‘ফেনী ও নোয়াখালীতে হওয়া দুটি অস্ত্র মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি আকাশ। এ কারণে তাকে সঙ্গে সঙ্গে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আকাশের ব্যাপারে অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত আমরা জানতে পেরেছি তারা চার ভাই মালয়েশিয়ায় বসবাস করেন। গ্রামের বাড়িতে কেবল তার বাবা থাকেন। ২০০৭ সাল থেকেই আমরা তাকে খুঁজছিলাম।’

সর্বশেষ খবর