শনিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ওদের পরিচয় এখন ক্রমিক নম্বর

আলী আজম

একসময় ওদের নাম-পরিচয় সব ছিল। ঘর থেকে পালিয়েই ওদের পরিচয় হয় জঙ্গি। গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ঘটনায় পাল্টা কমান্ডো অভিযানে নিহত পাঁচ জঙ্গির পরিচয় এখন পাল্টে গেছে। ওদের আর কোনো নাম নেই। নেই পরিচয়। কবরে একটি বাশের খুঁটি গেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে চিহ্নিত করার জন্য রাখা রয়েছে একটি করে ক্রমিক নম্বর। সেই ক্রমিক নম্বরই এখন তাদের পরিচয়। পরিবারের পক্ষ থেকে ‘লাশ নিতে না চাওয়ায়’ রাজধানীর জুরাইন কবরস্থানে পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জনের লাশের দাফন করা হয় বৃহস্পতিবার। তাদের প্রত্যেকের কবরের পাশে একটি করে বাঁশ গেড়ে দেওয়া হয়েছে। এতে প্রত্যেকের পরিচয় হিসেবে সাদা কালিতে ক্রমিক নম্বর লেখা হয়েছে। এখন এটাই তাদের পরিচয়। গত ১ জুলাই হলি আর্টিজানে হামলার পর পাল্টা কমান্ডো হামলায় পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন নিহত হয়। জঙ্গিরা মারা যাওয়ার পর তাদের লাশ মর্গে রাখা হয়। ময়নাতদন্ত হয়। দিন যায়, মাস যায় কিন্তু তাদের লাশ নিতে কেউ আসে না। নাম-পরিচয় থাকা সত্ত্বেও তাদের লাশ আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামে দেওয়া হয়। জঙ্গিদের শেষ পরিণতি হলো বেওয়ারিশ লাশ। জঙ্গিদের দাপটে গোটা দেশ থাকে আতঙ্কে। সেই দুর্ধর্ষ জঙ্গিদের পরিণতি বেওয়ারিশ লাশ। মর্গে তাদের লাশ পড়ে ছিল অযত্ন-অবহেলায়। পরিবারের কেউ লাশ দেখতে আসে না। পরিচয় দেয় না। তাদের জানাজায় কোনো লোক আসে না। নাম-পরিচয় হারিয়ে মৃতদেহগুলোর নতুন নাম হয় বেওয়ারিশ লাশ। সম্প্রতি গুলশান, শোলাকিয়াসহ বেশ কয়েকটি ঘটনায় নাম-পরিচয় থাকা এমন ২২ জঙ্গির মৃত্যুর পর তাদের লাশ হয় বেওয়ারিশ। দীর্ঘদিন পর ছয় জঙ্গিসহ সাতজনের লাশ দাফন হয়েছে। দাফনের অপেক্ষায় রয়েছে ১৫টি। উচ্চবিত্ত পরিবারের শিক্ষিত এই তরুণরা জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিয়েছিল। এসব তরুণের পরিবারে তাদের জন্য আর অবশিষ্ট নেই স্নেহ-ভালোবাসার কোনো অনুভূতি। লাশ পর্যন্ত নিতে আসেনি তারা। এই পাঁচ তরুণ জঙ্গির লাশ পড়েছিল ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) হিমঘরে। গুলশান হামলার ঘটনায় নিহত নিবরাস ইসলাম, মীর সামি মোবাশ্বের, রোহান ইমতিয়াজ, খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল ও শফিকুল ইসলাম ওরফে জুয়েলের দাফন হয় জুরাইন কবরস্থানে। একই সঙ্গে ওই সময় নিহত রেস্তোরাঁর কুক সাইফুল ইসলাম চৌকিদারের লাশও দাফন করা হয়েছে। এ ছাড়া শোলাকিয়ায় হামলার ঘটনায় নিহত নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবিরের দাফন হয় শোলাকিয়াতেই। তাদের জানাজায় কেউ অংশ নেয়নি। বেওয়ারিশ হিসেবে তাদের লাশ দাফন হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যারা জান্নাতপ্রাপ্তির লোভ দেখিয়ে তরুণ-যুব সমাজকে উগ্রপন্থার দিকে টানে, সেই তরুণরা বেওয়ারিশ লাশ হওয়ার পর তারা আর খোঁজও নেয় না। যারা জেএমবিতে যুক্ত হচ্ছে তাদের অনেকের মা-বাবা ঘৃণায় সন্তানের লাশ গ্রহণ করতে আসেন না। কারও কারও ক্ষেত্রে পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। অনেক পরিবার তাদের ত্যাজ্য করেছে। সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হওয়ার ভয়েও জঙ্গিদের লাশ গ্রহণ করতে আসেন না পরিবারের কেউ। ফলে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে এদের লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করতে হয়। গত ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় অস্ত্রধারী জঙ্গিরা হামলা চালায়। প্রতিরোধ করতে গিয়ে জঙ্গিদের গ্রেনেড হামলায় ডিবির এসি রবিউল করিম ও বনানী থানার ওসি সালাহউদ্দিন খান নিহত হন। রাতে দেশি-বিদেশি ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। পরদিন সকালে যৌথবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন নিহত হয়।

সর্বশেষ খবর