সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

আয়কর রিটার্ন দাখিলে আওয়ামী লীগ এগিয়ে, বিএনপি পিছিয়ে

দাখিল করেনি জাতীয় পার্টি, জামায়াতসহ বামপন্থি দলগুলোও

নিজস্ব প্রতিবেদক

আয়কর রিটার্ন দাখিলে আওয়ামী লীগ এগিয়ে, বিএনপি পিছিয়ে

রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য বাধ্যবাধকতা থাকা আয়কর রিটার্ন দাখিলে এগিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নির্ধারিত সময়ের প্রায় তিন মাস আগে আওয়ামী লীগ আয়কর রিটার্ন দাখিল করলেও এ প্রক্রিয়ায় পিছিয়ে বিএনপি। তবে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, বামপন্থি দলগুলো এবং যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতসহ ইসলামপন্থি দলগুলোর অনেকেই আয়কর রিটার্ন দাখিল করেনি বলে জানা গেছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), ১৯৭২ অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত দেশের সব রাজনৈতিক দলকে ২০০৮ সাল থেকে তাদের আয়-ব্যয়ের বিবরণী বা আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর)। নিতে হয় করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর— টিআইএন। তবে রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের আয়ের ওপর কোনো কর দিতে হয় না। তবে ইসিতে বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দিতে হয় নিবন্ধিত দলগুলোকে। এমন প্রেক্ষাপটেই ৭ সেপ্টেম্বর চলতি ২০১৬-১৭ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছে আওয়ামী লীগ। তবে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও দেশের অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো জানিয়েছে, শিগগিরই তারা আয়কর রিটার্ন দাখিল করবে। অতীতে প্রতিবছর ৩০ সেপ্টেম্বর আয়কর বিবরণী দাখিলের শেষ দিন হলেও এবার ৩০ নভেম্বর কর দিবসের মধ্যেই রিটার্ন দাখিল করতে হবে। এরপর আর সময় বাড়ানোর সুযোগ আইনে নেই। এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন, আগামী মাসের মধ্যেই জাতীয় পার্টির আয়কর রিটার্ন দাখিল করা হবে। এদিকে মগবাজারে কর অঞ্চল-১৫-এর ৩১৩ কর সার্কেলের করদাতা সংগঠন বিএনপি। দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বিএনপির আয়কর আইন পরামর্শক অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএনপির আয়কর রিটার্ন দাখিল করা হয়নি। তবে এ মাসের (সেপ্টেম্বর) মধ্যে জমা দেব।’ বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল—বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তাদের দল ২০১৫-১৬ করবর্ষের রিটার্ন দাখিল করলেও ২০১৬-১৭ করবর্ষের রিটার্ন দাখিল করেনি। তবে শিগগিরই রিটার্ন দাখিল করবে বাসদ। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের রিটার্ন দাখিল প্রসঙ্গে দলটির নেতারা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ দলের সব ক্ষেত্রেই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বজায় রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশে সাংগঠনিক কাজ করছে। এরই অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগের আয়কর রিটার্ন দাখিল করা হয়েছে। সেগুনবাগিচার কর অঞ্চল-১-এর করদাতা সংগঠন আওয়ামী লীগ ৭ সেপ্টেম্বর তাদের দাখিলে আয়কর বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়, ২০১৫ পঞ্জিকা বছর এবং ২০১৬-১৭ করবর্ষের রিটার্ন দাখিলে দলটি উদ্বৃত্ত আয় দেখিয়েছে ৩ কোটি ৩৮ লাখ ৭৯ হাজার ৯০৬ টাকা। তবে আওয়ামী লীগের মোট আয় দেখানো হয়েছে ৭ কোটি ১১ লাখ ৬১ হাজার ৩৭৫ টাকা। আর ব্যয় দেখানো হয়েছে ৩ কোটি ৭২ লাখ ৮১ হাজার ৪৬৯ টাকা। ফলে উদ্বৃত্ত আয় হয়েছে ৩ কোটি ৩৮ লাখ ৭৯ হাজার ৯০৬ টাকা। মোট আয়ের মধ্যে সদস্যদের চাঁদা থেকে ২ কোটি ৪৮ লাখ ৫৪ হাজার ৭৭০ টাকা, উপনির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিক্রি বাবদ ১৫ লাখ ২৫ হাজার, অনুদান সংগ্রহ বাবদ ২ কোটি ৩১ লাখ টাকা, প্রকাশনা বিক্রি ও বিজ্ঞাপন বাবদ ৬৩ লাখ ৯৪ হাজার ৯৩৫ টাকা, ব্যাংক থেকে পাওয়া সুদ বাবদ ১ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার ৭৯৯ টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৮৭১ টাকা আয় হয়েছে। আওয়ামী লীগ মোট সাংগঠনিক ব্যয়ের মধ্যে কর্মচারীদের বেতন বাবদ ৬২ লাখ ২১ হাজার ৫৭৫ টাকা, অনুষ্ঠান ও সভা-সমাবেশ বাবদ ১ কোটি ৯৮ লাখ ৩ হাজার ৩৯০ টাকা, প্রকাশনা বাবদ ৬৮ লাখ ৮২ হাজার ৭০৪ টাকা, ত্রাণকাজে ব্যয় ২১ লাখ ৬৯ হাজার ১৪৫ টাকা এবং অন্যান্য খাতে ব্যয় হয়েছে ২২ লাখ ৪ হাজার ৬৫৫ টাকা। এর আগে ২০১৪ সালের হিসাবে আওয়ামী লীগের আয় হয়েছিল ৯ কোটি ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪৩ টাকা এবং ব্যয় ছিল ৩ কোটি ৪৪ লাখ ৪০ হাজার ৮২১ টাকা। ২০১৪ সালের শেষে দলটি তহবিলের সমাপনী জের ছিল ২০ কোটি ৩৯ লাখ ৩৯ হাজার ১১৭ টাকা। এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ কোটি ৭৮ লাখ ১৯ হাজার ২৩ টাকায়। ইসি সূত্রমতে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), ১৯৭২ অনুযায়ী, বিগত পঞ্জিকা বছরে কোন খাতে কত টাকা আয়-ব্যয় হয়েছে, বিল-ভাউচারসহ তার পূর্ণাঙ্গ তথ্য ইসি নির্ধারিত ছক অনুযায়ী নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে অডিট ফার্মের মাধ্যমে তৈরি প্রতিবেদনে দাখিল করতে হয়। ইসিতে নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে রয়েছে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপি, সাম্যবাদী দল (এমএল), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি (জেপি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), জাকের পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), বিকল্পধারা বাংলাদেশ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, জমিয়তে উলামা ইসলাম বাংলাদেশ, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন ও বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), তরিকত ফেডারেশন, খেলাফত আন্দোলন, মুসলিম লীগ, গণফোরাম, গণফ্রন্ট, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), কল্যাণ পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ইসলামী ফ্রন্ট, জাতীয় গণতান্ত্রিক দল (জাগপা), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, খেলাফত মজলিশ, মুসলিম লীগ (বিএমএল) ও সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট।

সর্বশেষ খবর