সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

জেলা প্রশাসকদের দলবাজি, গণসংবর্ধনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

জেলা প্রশাসকদের দলবাজি, গণসংবর্ধনা

বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রাজার পোশাকে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুস্তাকিম বিল্লাহ ফারুকী —বাংলাদেশ প্রতিদিন

জেলা প্রশাসকসহ উচ্চপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া ও গণহারে সংবর্ধনা নেওয়া নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সমালোচনার ঝড় উঠছে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুস্তাকিম বিল্লাহ ফারুকী ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিনের মাসব্যাপী রেকর্ডসংখ্যক রাজকীয় সংবর্ধনা গ্রহণে, যা ছাড়িয়ে গেছে রাজনৈতিক কর্মীদেরও। এ অবস্থাকে দুঃখজনক বলে আখ্যায়িত  করেছেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমদ বলেছেন, ‘জেলা প্রশাসকরা যা করেছেন, তা হাস্যকর। আমি মনে করি, এটা সরকারি কর্মচারীদের চাকরিবিধির শৃঙ্খলার পরিপন্থী। ইতিপূর্বে আর কোনো জেলা প্রশাসককে এভাবে সংবর্ধনা নিতে দেখা যায়নি। যিনি এ ধরনের সংবর্ধনা নিচ্ছেন তিনি কি আর চাকরি করতে চান না? বিভাগীয় কমিশনারসহ তার চেয়ে জ্যেষ্ঠ অনেক সরকারি কর্মকর্তা আছেন। সংবর্ধনা নেওয়ার সময় কি এসব বিষয় বিবেচনা করেননি?’ জানা যায়, ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী তিন বছর দায়িত্ব পালন শেষে সম্প্রতি ঢাকায় মন্ত্রণালয়ে যোগ দিয়েছেন। এর আগে আগস্টে শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু করে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি নিয়েছেন ৩৫টি সংবর্ধনা। বিভিন্ন নামি-বেনামি সংগঠন ও ব্যক্তি তাকে এসব সংবর্ধনা দিয়েছেন। ডিসি এসব অনুষ্ঠানে যোগও দিয়েছেন সানন্দে। কোথাও কোথাও সপরিবারে যোগ দিয়েছেন সংবর্ধনায়। এর মধ্যে ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে রাজার পোশাকও পরেছেন এই সদ্য সাবেক ডিসি। উপহার নিয়েছেন সোনার কোটপিন। তাকে সংবর্ধনা দিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোদে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে স্কুলের শিশু শিক্ষার্থীদের। ৫ সেপ্টেম্বর ঈশ্বরগঞ্জ বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবর্ধনায় মুস্তাকীম বিল্লাহকে চার আনা ওজনের একটি সোনার কোটপিন দেওয়া হয়। এ উপলক্ষে গফরগাঁও উপজেলায় স্কুল শিক্ষার্থীদের রাস্তায় দাঁড় করিয়ে জেলা প্রশাসককে বরণ করার অভিযোগও রয়েছে। ১৬ সেপ্টেম্বর জেলা শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃক আয়োজিত সংবর্ধনা উপলক্ষে জেলা প্রশাসক ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে নিজ বাসভবন থেকে সংবর্ধনাস্থলে যান। সেখানে একটি নাট্যগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে তাকে রাজার পোশাক পরিয়ে মঞ্চে বসানো হয়। সব মিলিয়ে ১৫ দিন জেলা প্রশাসক বিভিন্ন স্টাইলে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। ময়মনসিংহ সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম ওয়ালিদ এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘ত্রিশ বছরের রাজনৈতিক জীবনে আমি কোনো দিন একজন জেলা প্রশাসকের এত বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান দেখিনি।’ অন্যদিকে ২৩ আগস্ট জনপ্রশাসনের এক প্রজ্ঞাপনে জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিনকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে বদলির আদেশ দেওয়া হয়। এর পর থেকে তিনি মাসজুড়ে চট্টগ্রাম মহানগর, জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন স্থানে শতাধিক সংবর্ধনা নিয়েছেন। শুরু হয়েছিল সৎসঙ্গ বিহার নামের একটি ভুঁইফোড় সংগঠনের সংবর্ধনার মাধ্যমে। এর পর থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন নামি-বেনামি সংগঠন প্রতিদিনই তাকে সংবর্ধনা দিতে থাকে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে এসব সংবর্ধনা গ্রহণ করেছেন ডিসি মেজবাহ উদ্দিন। এর বাইরে রাজনৈতিক নেতাদের মতোই জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সরকারদলীয় নেতা-কর্মী, জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংগঠনের কর্মকর্তারা প্রতিদিন দলে দলে ফুলের তোড়া দিয়ে গেছেন ডিসিকে। অভিযোগ উঠেছে, এই বিদায় সংবর্ধনাকে কেন্দ্র করে গ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় হাটের ইজারাদারদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থ আদায় করার অভিযোগও পাওয়া গেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক নিজেই সংবর্ধনার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এ কারণেই নগরীর ছোটখাটো আবৃত্তি সংগঠনও তাকে সংবর্ধনা দেওয়া থেকে বাদ যায়নি।

সর্বশেষ খবর