সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

শাবাশ তামিম সাকিব তাসকিন

লড়াই করা অনন্য জয় টাইগারদের

আসিফ ইকবাল

শাবাশ তামিম সাকিব তাসকিন

শেষ বলটি করার আগে গ্যালারির জায়ান্ট স্ক্রিনের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলেন তাসকিন আহমেদ। স্ক্রিনে তখন ভেসে আছে টার্গেট টপকাতে আফগানিস্তানের দরকার ৮ রান। বাংলাদেশের জয় দেখতে পেয়েই দুই হাত উঁচিয়ে দর্শকদের অভিবাদন জানালেন তাসকিন! হারের লজ্জা থেকে বেঁচে যাওয়ায় মিড অফে দাঁড়িয়ে অধিনায়ক মাশরাফি দাঁত দিয়ে নখ কাটছেন। ডিপ মিড উইকেটে আলসে হাঁটছেন সাকিব   আল হাসান। মাঠের এমন হালকা মেজাজি পরিস্থিতিতে ম্যাচের শেষ বলটি করেন নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফিরে আসা তাসকিন। আর ততক্ষণে স্টেডিয়ামজুড়ে শুরু হয়ে গেছে জয়োল্লাস। শূন্যে ভাসিয়ে দেওয়া দাওলাতের বলটি সাব্বির রহমান তালুবন্দী করতেই তাসকিন দুই হাতকে পাখির ডানা বানিয়ে উড়তে শুরু করেন মিরপুরের সবুজ ঘাসে। দম বন্ধ করা অবিশ্বাস্য জয়ের নায়ক তাসকিনের পেছনে পেছনে তখন দৌড়াতে শুরু করেন সৌম্য সরকার, নাসির হোসেন, তাইজুল ইসলামরা। খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা বাংলাদেশকে ৭ রানের অবিশ্বাস্য জয় উপহার দেন তাসকিন শেষ দুই ওভারের জাদুকরী স্পেলে। বুধবার তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয়টিতে মাশরাফি বাহিনী খেলতে নামবে এগিয়ে থেকে। ম্যাচটি জিতলে সিরিজ নিশ্চিতের পাশাপাশি ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজেদের শততম জয়টিও তুলে নেবে টাইগাররা। দুই বছর আগে ফতুল্লা স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপে বাংলাদেশ হেরেছিল ৩২ রানে। আইসিসির সহযোগী দেশটির কাছে হারে লজ্জায় ঢি ঢি পড়ে গিয়েছিল গোটা দেশে। সমালোচনার তির্যকবাণে এফোঁড়-ওফোঁড় হয়েছিলেন সাকিব, মুশফিকরা। লজ্জাজনক হারের প্রতিশোধ নিয়েছিল বিশ্বকাপ ক্রিকেটে। ক্যানবেরায় আফগানদের ১০৫ রানে হারিয়েছিলেন মাশরাফিরা। গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে মুখোমুখি হওয়ার আগে দুই দলের সাফল্য-ব্যর্থতার পরিমাণ ছিল সমান; এক জয়ের বিপরীতে এক হার। ফলে জয়ী দল এগিয়ে যাবে-এমন সমীকরণের ম্যাচ খেলতে মাশরাফিরা মাঠে নামেন ৩১৮ দিনের ব্যবধানে। ২০১৫ সালের ১১ নভেম্বর টাইগাররা বছর শেষ করেছিল জিম্বাবুয়েকে ৬১ রানে হারিয়ে। চলতি বছরের প্রথম ওয়ানডে খেলল গতকাল এবং জয় দিয়ে শুরু করল। যদিও মার্চ-এপ্রিলে টি-২০ বিশ্বকাপ খেলেন মাশরাফিরা। এ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা বলতে এতদিন টি-২০ বিশ্বকাপই ছিল সম্বল। চলতি বছরের প্রথম ওয়ানডেতে ২৬৫ রানে গুটিয়ে যায় টাইগাররা। দীর্ঘদিনের বিরতি অবশ্য খুব প্রভাব ফেলেনি তামিম, মাহমুদুল্লাহদের ব্যাটিংয়ে।

ভালো ব্যাটিং করেছেন ইমরুল কায়েস ও সাকিব আল হাসান। তামিম ও মাহমুদুল্লাহর বছর শেষ হয়েছিল হাফসেঞ্চুরিতে। দুজনেই বছর শুরু করেন হাফসেঞ্চুরিতে। তামিম ৮০ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলেন ৯৮ বলে ৯ চারে। ইনিংসটির ১৫ রানের মাথায় বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট, ওয়ানডে এং টি-২০ ফরম্যাট মিলিয়ে ৯ হাজারী ক্লাবে নাম লিখেন তামিম। তিন ফরম্যাটের ২৪৮ ইনিংসে তামিমের রান ৯০৫৯। এর মধ্যে ১৫৪ ওয়ানডেতে রান ৪৭৯৩। ৬ সেঞ্চুরির বিপরীতে হাফসেঞ্চুরি ৩৩টি। ৪২ টেস্টে রান ৩১১২ এং ৫২ টি-২০ ম্যাচে রান ১১৫৪। তার পেছনে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিবের রান ৮৩৭২। সাকিব কাল রান করেছেন ৪৮। তৃতীয় স্থানে থাকা মুশফিকুর রহিমের রান ৭২৭৯। তামিমের রেকর্ডের ম্যাচে হাফসেঞ্চুরি করেন মাহমুদুল্লাহও। ৬২ রানের ইনিংটি খেলেন ৭৪ বলে। চার ব্যাটসম্যান ছাড়া বাকি ছয় টাইগারের মিলিত রান ৩৮। বাংলাদেশ শেষ ৭ উইকেট হারায় ৬২ রানে, ৯.৪ ওভারে।

২৬৬ রানের টার্গেটে ৪৭ রানে দুই ওপেনারকে হারিয়ে বসে সফরকারীরা। এরপর তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৩২.৫ ওভারে ১৪৪ রান যোগ করেন রহমতশাহ ও হাশমতউল্লাহ। ৪০.৩ ওভারে দলীয় ১৯০ রানে সাকিবের বলে রহমতশাহ স্ট্যাম্পিং হতেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে বাংলাদেশ। রহমত ব্যক্তিগত ৭১ রানে সাজঘরে ফিরলেও ৬৩ রানে ডিপ মিড উইকেটে মাহমুদুল্লাহর হাতে সহজ জীবন পান। ৪৩.৩ ওভারে হাশমতউল্লাহকে (৭২) ফেরত পাঠান তাইজুল। দুই প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যানের পর দলের দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিলেও বেশি দূর নিয়ে যেতে পারেননি মোহাম্মদ নবী। ফলে শেষ ওভারে জয়ের জন্য আফগানিস্তানের দরকার হয় ১৩ রান। তাসকিন মাত্র ৪ রানের খরচে দুই উইকেট তুলে সফরকারীদের বেঁধে ফেলেন ২৫৮ রানে। সাকিব ৪৮ রানের পাশাপাশি ২৬ রানে দুই উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হন। বোলিং অ্যাকশন শুধরে ফিরে আসা তাসকিনের বোলিং স্পেল ৮-০-৫৯-৪।

সর্বশেষ খবর