শিরোনাম
সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ধনীদের খেলাপি ঋণ ব্যাংক খাতের দুষ্ট ক্ষত

নিজস্ব প্রতিবেদক

ধনীদের খেলাপি ঋণ ব্যাংক খাতের দুষ্ট ক্ষত

ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেছেন, দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের সংস্কৃতি বাড়ছে। ধনী ব্যক্তিদের খেলাপি ঋণ ব্যাংকিং খাতের দুষ্ট ক্ষতের মতো। ব্যাংক খাতে কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা কমে যাচ্ছে। অনিয়ম, দুর্নীতি জেঁকে বসছে। এমন পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সঠিক বাস্তবায়ন ও প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে উৎপাদনশীলতা ও প্রবৃদ্ধি বাড়াতে     হবে। ব্যাংক খাতে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে নজরদারি বাড়াতে হবে। গতকাল রাজধানীর মিরপুরের বিআইবিএম (বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট) মিলনায়তনে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এসব কথা বলেন। ফরাসউদ্দিন আরও বলেন, দেশের ব্যাংক খাতে যে হারে খেলাপি ঋণ বাড়ছে, সেটা খুবই আশঙ্কাজনক। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এজন্য ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। তিনি বলেন, বিচ্ছিন্ন দু-একটি ঘটনা বাদ দিলে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত শক্তিশালী অবস্থানেই রয়েছে। বাড়তে থাকা খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। দেশের ব্যাংকগুলো যদি তাদের তদারকি বাড়ায় তাহলেই খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমে আসবে বলে মনে করেন গভর্নর। বিআইবিএম-এর সঙ্গে এ সম্মেলনের সহ-আয়োজক অস্ট্রেলিয়ান একাডেমি অব বিজনেস অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্স, টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ অস্ট্রেলিয়া এবং সেন্ট্রাল কুন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটি। দুই দিনের সম্মেলনে ব্যাংকিং সংক্রান্ত ১৩৭ জন গবেষকের তৈরি ৬৪টি গবেষণাপত্র উপস্থাপিত হচ্ছে। ব্যাংকার, অর্থনীতিবিদ, গবেষকদের জন্য এ সম্মেলন একটি গুরুত্বপূর্ণ নেটওয়ার্ক তৈরি করবে বলে আশা আয়োজকদের। সম্মেলনে ব্যাংক, পুঁজিবাজার ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিবিষয়ক একটি সেশন পরিচালনা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ। তিনি বলেন, শেয়ারবাজারের প্রতি মানুষের আস্থা নেই। এর মূল কারণ বিএসইসিতে যারা কাজ করেন তাদের একটি অংশ শেয়ার ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। নিয়ন্ত্রক সংস্থার লোকজন শেয়ার বেচাকেনা করলে আস্থা থাকবে কীভাবে এ প্রশ্ন তোলেন তিনি। তিনি মনে করেন, শেয়ারবাজারে আস্থা না থাকার আরেকটি কারণ, যেভাবে শেয়ারবাজার ডিমিউচুয়ালাইজেশন (মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা আলাদা) হওয়ার কথা তা হয়নি। এ ছাড়া যেভাবে ও যাদের নিয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পুনর্গঠন করার কথা তা করা যায়নি। এসব কারণে পুঁজিবাজারের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরছে না। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার কথা বলেন তিনি। পুঁজিবাজারবিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নেহাল আহমেদ। আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ইয়াসিন আলী বলেন, শেয়ারবাজার থেকে টাকা তুলতে গিয়ে না পাওয়ার নজির অন্য দেশে থাকলেও বাংলাদেশে নেই। এরপরও এখানকার উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে টাকা নিতে বেশি আগ্রহ দেখান। আইডিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ খান বলেন, মিউচুয়াল ফান্ডের উন্নতি করতে হলে তহবিল ব্যবস্থাপকদের স্বচ্ছতা বাড়াতে হবে। বিনিয়োগকারীর টাকা কোন খাতে ব্যয় হচ্ছে তার তথ্য প্রকাশ করতে হবে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমানসহ দেশের খাতনামা অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা এতে বক্তব্য রাখেন। ‘টুওয়ার্ডস রিসার্স এক্সিলেন্স ইন বিজনেস অ্যান্ড সোশ্যাল সাইন্স’ শীর্ষক দুই দিনের এ ব্যাংকিং সম্মেলন আজ সোমবার শেষ হবে। শেষ দিনে পেশাজীবীদের নিয়ে তিনটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর