বুধবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

শেখ হাসিনার জন্মদিন আজ

বাদল নূর

শেখ হাসিনার জন্মদিন আজ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭০তম জন্মদিন আজ। ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের বড় মেয়ে শেখ হাসিনা। রাজনীতির সুদীর্ঘ পথ পরিক্রমায় শেখ হাসিনা ছাত্রনেত্রী থেকে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন জননেত্রীতে। হয়েছেন রাষ্ট্রনেতা। আজ তিনি শুধু আওয়ামী লীগের সভাপতি কিংবা একজন সফল সরকারপ্রধানই নন, অসাম্প্রদায়িক শক্তির প্রতীক। কেবল একজন জাতীয় নেতা নন, নিজ প্রজ্ঞা, মেধা ও বিচক্ষণতা দিয়ে রাষ্ট্রনায়কসুলভ ভূমিকায় নিজেকে তিনি বিশ্বনেতার কাতারে দাঁড় করিয়েছেন। তার নেতৃত্বে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে ছাত্রজীবনেই প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন শেখ হাসিনা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পিতা-মাতা-ভাইসহ পরিবারের সদস্যদের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রবাসে নির্বাসিত অবস্থায় জাতীয় রাজনীতিতে আসেন তিনি। ১৯৮১ সালে সেই শুরু। এরপর দীর্ঘ ৩৪ বছরের রাজনৈতিক পথ পরিক্রমায় শেখ হাসিনা জেল-জুলুম, মামলা-হামলা, হত্যাপ্রচেষ্টাসহ হাজারো হুমকির মুখে অটল থেকে নেতৃত্বের অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ৭০তম সাধারণ অধিবেশনে যোগদান শেষে বর্তমানে ওয়াশিংটনে অবস্থান করছেন। তিনি সেখানে ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা হোসেন ওয়াজেদ, ছোট বোন শেখ রেহানাসহ ভাগ্নে-ভাগ্নি, নাতি-নাতনিদের সঙ্গে পারিবারিক পরিবেশে তার জন্মদিনটি কাটাবেন। ঢাকাসহ সারা দেশে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠন তার জন্মদিন উপলক্ষে কর্মসূচি নিলেও সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের মৃত্যুতে তা স্থগিত করা হয়েছে। ১৯৭৫ সালের পট পরিবর্তনের পর ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে দলীয় প্রধানের দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা। এরপর আড়াই যুগ ধরে কখনো সেনাশাসনের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলন, মানুষের ভোট ও ভাতের লড়াইয়ের মাধ্যমে বিরোধীদলীয় রাজনীতির মূল স্রোতধারার প্রধান নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন তিনি। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে তার নেতৃত্বে দীর্ঘ ২১ বছর পর সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। ২০০৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারির পর ১৬ জুলাই গ্রেফতার করে তাকে সংসদ ভবন চত্বরের বিশেষ কারাগারে প্রায় ১১ মাস বন্দী রাখা হয়। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে তার নেতৃত্বে দ্বিতীয়বারের মতো রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের এই প্রাচীন রাজনৈতিক দলটি তার ৬৮ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে। আর সেই সঙ্গে টানা সাড়ে সাত বছর ধরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় অল্প বয়স থেকেই তার রাজনীতিতে পদচারণা। ১৯৬৫ সালে শেখ হাসিনা ঢাকার আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৭ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন ঢাকার বকশীবাজারের ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজ (বর্তমানে বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে। ওই বছরই ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে। ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদস্য এবং রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে তিনি আইয়ুববিরোধী আন্দোলন এবং ছয় দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬৮ সালে পরমাণুবিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনার বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর শুরু হয় ১১ দফা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান। শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ নেত্রী হিসেবে তাতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই শেখ হাসিনা গৃহবন্দী অবস্থায় তার প্রথম সন্তান ‘জয়’-এর মা হন। ১৯৭২ সালের ৯ ডিসেম্বর কন্যাসন্তান পুতুলের জন্ম হয়। ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার আগে ছোট বোন শেখ রেহানাসহ শেখ হাসিনা ইউরোপ যান। সেখানে অবস্থানকালে তিনি সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর নিহত হওয়ার খবর পান। তাত্ক্ষণিকভাবে দেশে ফেরার কোনো পরিবেশ না থাকায় তিনি ইউরোপ ছেড়ে স্বামী-সস্তানসহ ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। ১৯৮১ সালের ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলন। জাতির এক ক্রান্তিলগ্নে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। সামরিক শাসকদের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন শেখ হাসিনা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর