বৃহস্পতিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
আইন পেশায় ৫০ বছর

আপন আলোয় একজন বাসেত মজুমদার

আহমেদ আল আমীন

আপন আলোয় একজন বাসেত মজুমদার

আইন পেশায় ৫০ বছর পূর্ণ করলেন গরিবের আইনজীবী হিসেবে খ্যাত অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার। ১৯৬৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর আইন অঙ্গনে তার যাত্রা। বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়েই বন্ধুর এই পথে আসা তার। তবে একসময় নিজেকে বেশ মানিয়ে নেন পেশার সঙ্গে। মনেপ্রাণে মিশে যান আইন পেশায়। ওকালতিকে কখনো ব্যবসা হিসেবে দেখেননি, নিয়েছেন ব্রত হিসেবে। গরিব-দুঃখী ও মেহনতি মানুষের কল্যাণে কাজ করছেন, দুস্থ আইনজীবীদের জন্য নিজের নামে ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছেন। দেশের বিভিন্ন আইনজীবী সমিতিতে এই ফান্ড থেকে টাকা দেওয়া হচ্ছে। দীর্ঘ পেশাজীবনে ২০ হাজারের বেশি মানুষকে বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে আইনি সহায়তা দিয়েছেন। আইন পেশায় ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে গতকাল আইনজীবীদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছায় সিক্ত হন তিনি। এরই এক ফাঁকে দুপুরে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতিতে নিজের চেম্বারে বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করেন বাসেত মজুমদার। আইন অঙ্গনে প্রথম দিনটির কথা স্মরণ করে আবদুল বাসেত মজুমদার বলেন, ‘১৯৬৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর যখন আইন পেশায় প্রবেশ করি, আজ সেই দিনটির কথাই বিশেষভাবে মনে পড়ছে। এই দিন আমার সিনিয়র আবদুস সালাম সাহেব বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর কোর্টে আমাকে একটি মামলায় সময়ের আবেদন জানানোর জন্য দাঁড় করালেন। তাদের দুজনকে আমি আজ স্মরণ করি। পরে আরও অনেক সিনিয়রকে আইন অঙ্গনে দেখার সুযোগ হয়েছে। তাদের অনেকেই আজ বেঁচে নেই। বিচারপতি হামিদুর রহমান সুপ্রিমকোর্টের বিচারক ছিলেন। তিনি যখন কোর্টে যেতেন, আমরা তার চলার ভঙ্গি, কথা বলার স্টাইল, ইংরেজিতে দক্ষতা ইত্যাদির প্রতি লক্ষ্য রাখতাম। পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টের বিচারপতি মোরশেদ সাহেব, বি এ সিদ্দিকীকে দেখার সুযোগ হয়েছে। যাদের সঙ্গে আইন পেশা শুরু করেছিলাম, তাদের অনেকেই আজ আর পৃথিবীতে নেই। কিন্তু আল্লাহ আমাকে সুস্থ-সবলভাবে এখনো কাজ করার তওফিক দিয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘ওকালতিকে আমি কখনই ব্যবসা হিসেবে দেখিনি। বিচারপ্রার্থী জনগণের জন্য আইনজীবী হিসেবে আমি দায়িত্ব পালন করেছি। ওকালতিকে ব্রত হিসেবে নিয়েছি। আমার ওকালতির ৫০ বছর পূর্ণ হয়েছে। পেশাজীবনে আইনজীবী, বিচারকসহ সবার কাছ থেকে যে সম্মান পেয়েছি, তাতে আমি ধন্য।’ বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘বার কাউন্সিলের ১৫ তলা ভবন নির্মাণ ও আইনজীবীদের বেনেভোলেন্ট ফান্ডে ৫০ কোটি টাকা অনুদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আবেদন করেছি। বিষয়টি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এ ছাড়া নবীন আইনজীবীদের পেশাগত মানোন্নয়নে দেশের প্রতিটি বিভাগে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ঢাকায় এ প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। অন্য বিভাগগুলোতেও শুরু হচ্ছে।’ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সাবেক সদস্য বাসেত মজুমদার বলেন, ‘দেশ ও জাতির জন্য আমার কিছু করার আছে। সেই অনুভূতি নিয়েই আমার জীবন অতিবাহিত করেছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের আমি একজন একনিষ্ঠ কর্মী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশ আরও এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের ক্ষেত্রে সারা বিশ্বের কাছেই রোল মডেল। আমি আইন অঙ্গনে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছি। ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করছি। তবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে হলে কিছু সোনার মানুষ তৈরি করতে হবে।’ বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের সভাপতি বাসেত মজুমদার দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বলেন, ‘বিরোধী দলগুলোকে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বাধার সৃষ্টি না করে গঠনমূলক সমালোচনা করতে হবে। বিরোধিতার নামে বিশৃঙ্খলা ও জ্বালাও-পোড়াও করা যাবে না। বর্তমানে দেশ যেভাবে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে আগাম নির্বাচনের নামে এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া ঠিক হবে না, যাতে এ উন্নয়নের ঘোড়ার মুখে লাগাম আঁটা পড়ে। এ সরকার আছে বলেই এত বাধা-বিপত্তি, এমনকি বিশ্বব্যাংকের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের হাত গুটিয়ে নেওয়ার পরও আমরা পদ্মা সেতু করতে পারছি।’ তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা হিসেবে শেখ হাসিনা অনেক গুণে গুণান্বিত। তিনি নিজের গুণে গুণান্বিত। পৃথিবীতে তিনি একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে, শান্তির দূত হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। জনগণের ক্ষমতায়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষার বিস্তার, দারিদ্র্য মুক্তি, স্বাস্থ্য, কৃষি ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিক দিয়ে তিনি যেভাবে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন তা ঈর্ষণীয়। তাই এখন নির্বাচন হলে তাতে উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি হতে পারে।

সর্বশেষ খবর