শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বঙ্গবন্ধুর খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের সিদ্ধান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি এবং একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় সংসদ। গতকাল সংসদ অধিবেশনে সর্বসম্মতভাবে এ-সংক্রান্ত একটি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব গ্রহণ করেছে সংসদ। সরকারদলীয় সদস্য বেগম ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পির (মহিলা আসন-৩০) আনীত ‘সংসদের অভিমত এই যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের সকল স্থাবর  ও অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হোক’ সিদ্ধান্ত প্রস্তাবটি সংশোধিত আকারে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। সংশোধনীতে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের সঙ্গে মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িতদের সব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। নূরজাহান বেগম (মহিলা আসন-৪১), মো. মনিরুল ইসলাম (যশোর-২) ও সানজিদা খানম (মহিলা আসন-২৪) এ সংশোধনী প্রস্তাব করেন। পরে সংশোধিত আকারে উভয় প্রস্তাবই একসঙ্গে গৃহীত হয়। সংসদে সভাপতিত্ব করেন ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া। এর আগে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা পরিচালনার কথা বলতে গিয়ে সজল চোখে আইনমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে কোনো আইনের প্রয়োজন পড়বে না, তাই আগে তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হবে। কিন্তু মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে গেলে আইনের কিছুটা সংশোধনী আনতে হবে। আর যারা মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধ করেছেন তাদেরও কোনো সম্পত্তি থাকতে পারে না। তাদের নামে থাকা সব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করা হবে। এ লক্ষ্যে আইন মন্ত্রণালয় থেকে ইতিমধ্যে একটি বিল প্রস্তুত করা হচ্ছে। অবিলম্বে এই সংসদে বিল এনে পাসের মাধ্যমে দণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করা হবে। কিন্তু যতই আইন করি, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের ফাঁসি দিই, বঙ্গবন্ধুর হত্যার কলঙ্ক থেকে এ জাতি কখনো মুক্ত হতে পারবে না। দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বাতিলের ক্ষেত্রেও আইনগত প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। সংসদ এ প্রস্তাব গ্রহণ করতে চাইলে আপত্তির কিছু নেই। আইনের বিভিন্ন বিধান বিশ্লেষণ করে আইনমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু সব সময়ই নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি করে গেছেন। আর তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি করেন বলেই প্রচলিত আইনে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করেছেন। তাই বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের যে মুহূর্তে ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হয়েছে, সেই মুহূর্ত থেকে তাদের সব সম্পত্তি তাদের উত্তরাধিকারের কাছে চলে গেছে। তাই তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে হলে নতুন আইনের প্রয়োজন হবে।  আমি দৃঢ়ভাবে দেশবাসীকে জানাতে চাই, এ আইন প্রণয়নের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। খুনিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে গেলে কিছুটা সময় লাগবে।

 আর যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের আইন প্রণয়নের কাজও শুরু হয়ে গেছে।

বেসরকারি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব উত্থাপনকারী বেগম ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পি বলেন, জাতির পিতা আমাদের ভাষা, স্বাধীনতা, জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীত দিয়ে গেছেন। কিন্তু খুনি মোশতাক-জিয়ারা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেন। ইয়াহিয়া-ভুট্টো কবর খুঁড়েও বঙ্গবন্ধুর গায়ে হাত দেওয়ার সাহস দেখাতে পারেনি, যা করেছেন মোশতাক-জিয়ারা। ছোট্ট শিশু রাসেলকেও নির্মমভাবে হত্যা করে ঘাতকরা। এই ভয়াল হত্যাযজ্ঞ বিশ্বসভ্যতার কোথাও ঘটেনি। হামলার সময় বঙ্গবন্ধু পরিবারের একজনও ঘাতকদের কাছে প্রাণভিক্ষা চাননি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মোশতাক ও জিয়ারা খুনিদের বিচার না করে উল্টো পুরস্কৃত করেছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জিয়াউর রহমান যে জড়িত ছিলেন, তা মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণেই বেরিয়ে আসে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সবচেয়ে বড় বেনিফিশিয়ারি এই জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে স্বাধীন দেশ, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে হত্যা করতে চেয়েছিল ঘাতকরা। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়ারা প্রটেকশন দিয়েছেন, আমি তাদের ঘৃণা জানাই। তাই বঙ্গবন্ধুর খুনিদের স্বাধীন বাংলাদেশে কোনো স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি থাকতে পারে না, থাকতে পারবে না। অবিলম্বে খুনিদের সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার দাবি জানান তিনি। নোটিসদাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পির এ প্রস্তাবটি সমর্থন করে বক্তব্য দেন নূরজাহান বেগম, মনিরুল ইসলাম, আবদুল মতিন, বেগম সানজিদা খানম ও ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া। প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে পাস হওয়ার পর সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা তুমুল টেবিল চাপড়ে তাদের সমর্থন জানান।

সর্বশেষ খবর