শনিবার, ১ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

অধরা মাস্টারমাইন্ড জিয়াসহ ১০ জন

গুলশান হামলার ৩ মাস

আলী আজম

অধরা মাস্টারমাইন্ড জিয়াসহ ১০ জন

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার আজ তিন মাস। তবে এখনো অধরাই রয়ে গেছেন নৃশংস এ ঘটনার মাস্টারমাইন্ড বরখাস্তকৃত মেজর জিয়াউল হকসহ অন্তত ১০ জন। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় দেশি-বিদেশিসহ ২২ জন নিহত হন। অন্যদিকে ওই গা শিউরে ওঠা হামলার স্মৃতিচিহ্ন বয়ে বেড়ানো অভিজাত হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁটি গতকাল পর্যন্ত মালিকপক্ষকে হস্তান্তর করেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ২৪ ঘণ্টাই পুলিশ পাহারা থাকছে ওই রেস্তোরাঁর সামনে। এখনো স্বাভাবিক হয়নি গুলশান এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য। কড়া নিরাপত্তার মাঝেও চাপা আতঙ্ক কাজ করছে গুলশান-বনানী ও বারিধারার বাসিন্দাদের মাঝে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইতিমধ্যে জঙ্গি মোকাবিলায় সফল হয়েছে। একের পর এক অভিযানে নিহত হয়েছেন ২১ জঙ্গি। এর মধ্যে ১৫ জনকে বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। অনেকে আটক আবার অনেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেও এসেছেন। যারা এখনো পলাতক, তাদের শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।

জানা গেছে, হলি আর্টিজানে হামলার পর কূটনৈতিক জোনে অবস্থানরত বিদেশিসহ স্থানীয়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরাপত্তাবলয় গড়ে তুলেছে। গুলশান-বনানী-বারিধারার সব পয়েন্ট, বিপণিবিতানসহ প্রায় সব বাসাবাড়ি সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে। নিরাপত্তার অংশ হিসেবে এরই মধ্যে কূটনৈতিক জোনে বিশেষ বাস ও রিকশা নামানো হয়েছে।

এদিকে, হলি আর্টিজান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর র‌্যাব-পুলিশের অপারেশনে কল্যাণপুর, নারায়ণগঞ্জ, রূপনগর ও আজিমপুরে ২১ জঙ্গি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন মাস্টারমাইন্ডদের অন্যতম তামিম আহমেদ চৌধুরী ও সমন্বয়ক তাওসিফ হোসেন। তবে এখনো অধরা মেজর (চাকরিচ্যুত) সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়া, নুরুল ইসলাম মারজান, আবু ইউসুফ বাঙ্গালী ও রাজীব গান্ধী। এ ছাড়া জঙ্গি হামলায় ব্যবহূত গ্রেনেড প্রস্তুতকারী হিসেবে জেএমবির থেকে নব্য জেএমবিতে যোগ দেওয়া সোহেল মাহফুজকে খুঁজছে পুলিশ।

জানা গেছে, গুলশান হামলার অপারেশনাল কমান্ডার ছিলেন নুরুল ইসলাম মারজান। পরিকল্পনায় যুক্ত ছিলেন জোনায়েদ খান, খালেদ ও মানিক। এ ছাড়া নব্য জেএমবি নেতা রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী গুলশানে হামলা চালাতে দুজনকে নিয়োগ দিয়ে তামিম চৌধুরীর কাছে পাঠিয়েছিলেন। ওই হামলার বিষয়ে জানতেন নব্য জেএমবির আরেক নেতা রিপন। তাদের ধরতে অভিযান চলছে।

হলি আর্টিজানে হামলার ঘটনার মামলায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজাউল করিমকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এ মামলায় তাকে আট দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সন্দেহভাজন হিসেবে শিল্পপতিপুত্র তাহমিদ হাসিব খানকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে আট দিন ও ছয় দিনের দুই দফা রিমান্ডের পর তারা বর্তমানে কারাগারে। পরে আজিমপুরে জঙ্গি আস্তানা থেকে গ্রেফতার নিহত জঙ্গি তানভীর ওরফে করিমের কিশোর ছেলে তাহরীম করিমকে (১৪) গুলশানের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। ২২ সেপ্টেম্বর তাহরীম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

জঙ্গিদের কাছে বাসা ভাড়া দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ভারপ্রাপ্ত প্রো-ভিসি অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, দক্ষিণ পীরেরবাগ থেকে গ্রেফতার সাবেক শিক্ষক নুরুল ইসলামসহ চারজনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

এদিকে, গুলশান হামলায় আহত র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ জানান, তার হাঁটুর ওপরে স্প্লিন্টার বিদ্ধ হওয়ার পর অপারেশন করা হয়েছে। ২১টি সেলাইর পর এখন কিছুটা সুস্থের দিকে। তবে প্রায়ই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়। এখনো ক্ষতস্থানটি পুরোপুরি সেরে ওঠেনি।

আরেক আহত পুলিশের গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার আবদুল আহাদ চিকিৎসা নিতে সিঙ্গাপুরে গেছেন। যাওয়ার আগে তিনি বলেন, ‘শরীরে স্প্লিন্টার বিদ্ধ হওয়ার পর খুব যন্ত্রণায় দিন যাপন করছি। ডান পায়ের যন্ত্রণাটা বেশি। স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারি না।’

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, গুলশান হামলার পর জঙ্গিদের দমনে পুলিশ মাঠে নামে। সফলতাও এসেছে। জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে।

গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সালাউদ্দিন মিয়া জানান, হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর সামনে এখনো ২৪ ঘণ্টা পুলিশ পাহারা রাখা হচ্ছে। এখনো রেস্তোরাঁটি মালিককে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। প্রসঙ্গত, ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি অ্যান্ড রেস্তোরাঁয় অস্ত্রধারী জঙ্গিরা হামলা চালান। প্রতিরোধ করতে গিয়ে জঙ্গিদের গ্রেনেড হামলায় ডিবির এসি রবিউল করিম ও বনানী থানার ওসি সালাহউদ্দিন খান নিহত হন। রাতে দেশি-বিদেশি ২০ জনকে হত্যা করেন জঙ্গিরা। পরদিন সকালে যৌথ বাহিনীর কমান্ডো অভিযানে পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন নিহত হন। সর্বশেষ কল্যাণপুর জঙ্গি আস্তানা থেকে আহত অবস্থায় গ্রেফতার রাকিবুল হাসান রিগ্যানকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ছয় দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর