রবিবার, ২ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা
ফিলিপাইন আদালতের রায়

তারপরও ফেরত আসছে না ১৫ মিলিয়ন ডলার

মানিক মুনতাসির

নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম (ফেড) থেকে চুরি হওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ১৫ মিলিয়ন বা দেড় কোটি ডলার (১২০ কোটি টাকা) ফেরত দিতে ফিলিপাইনের আদালত নির্দেশ দিলেও তা ফেরত আসছে না সহসাই। এর জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে বলে জানা গেছে। শুধু তাই নয় এর জন্য বাংলাদেশকে আরও কয়েকটি আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে যেতে হবে। এদিকে চুরি হওয়া অর্থের আরও ২০ মিলিয়ন ডলার আন্তর্জাতিক লেনদেন সম্পন্নকারী ফিলিপাইনের প্রতিষ্ঠান ফিলরিমের কাছে আছে বলে জানিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু ফিলরিম বলছে, তাদের হাতে সে ধরনের কোনো অর্থ নেই। সেটা তারা হংকংয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে। এদিকে হংকং বলছে তাদের কাছে কেউ এ ধরনের কোনো অর্থ পাঠায়নি। ফলে এ নিয়ে নতুন করে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর ফিলিপাইনের একটি আদালত সে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে জমা থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি হওয়া রিজার্ভের ১৫ মিলিয়ন ডলার ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয়। রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়ী কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এখনো কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনকি ফিলিপাইনের ব্যাংক আরসিবিসি বা ফেডের বিরুদ্ধে অর্থ উদ্ধারে কোনো মামলা করবে কিনা—সে ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। চুরি হওয়া অর্থের পুরোটাই কীভাবে ফেরত আনা যায় সে ব্যাপারে আলোচনা করতে গত ২৮ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের ফিলিপাইন সফর করার কথা ছিল। কিন্তু কোনো কারণ ছাড়াই তা বাতিল করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অপর একটি সূত্র বলছে, নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাষ্ট্র সফররত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ৬ অক্টোবর ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠেয় বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভায় যোগ দেবেন। সেখানে ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির বিষয়ে আলোচনা হতে পারে বলে জানা গেছে।

এ ছাড়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের বাকি অর্থ কোথায় গেছে, তার হদিস এখনো মেলেনি। ফিলিপাইন সরকার জুয়ার আখড়ার আরও আড়াই কোটি ডলার জব্দ করেছে। ওই অর্থের দাবি বাংলাদেশ করলেও তার সুরাহা হয়নি এখনো। এ ঘটনায় বাংলাদেশ সরকারের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ না করতে অনুরোধ জানিয়েছে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারা বলেছে ঘটনা তদন্তাধীন অবস্থায় এ ধরনের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলে তদন্ত কাজ ব্যাহত হতে পারে। সে জন্য সরকার ওই প্রতিবেদন আপাতত প্রকাশ করছে না বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। বাংলাদেশ ব্যাংকের গোয়েন্দা ইউনিট বিএফআইইউ-এর অপারেশনাল প্রধান দেবপ্রসাদ দেবনাথ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দুই দেশের বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি সরকারের একাধিক সংস্থা কাজ করছে। ফিলিপাইন সরকার আমাদের শুরু থেকেই সহযোগিতা করছে। এ কারণেই এখন আমরা চুরি হওয়া অর্থের একটি বড় অংশ ফেরত পাচ্ছি। শ্রীলঙ্কায় যাওয়া অর্থ নিয়ে সেদেশের সরকার কাজ করছে। অগ্রগতিও হয়েছে। এটি এখন বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা দেখছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও যোগাযোগ রাখছে। পুরো ঘটনার সঙ্গে একটি চক্রই জড়িত। সেখানে আন্তর্জাতিক বিষয়ও জড়িত আছে। শুধু আমাদের একক বিষয় নয়। ফিলিপাইনের অর্থ ফেরত দ্রুত পাওয়া যাবে বলে আমরা আশা করছি। এখন কোনো জটিলতা নেই।

সর্বশেষ খবর