সোমবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

কাশ্মীরে ভারতীয় সেনা ঘাঁটিতে ফের হামলা

ঋতুপর্ণা রায়, নয়াদিল্লি

কাশ্মীরে ভারতীয় সেনা ঘাঁটিতে ফের হামলা

কাশ্মীরে ভারতের সেনাঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলার পর সতর্ক প্রহরা —এনডিটিভি

কাশ্মীরে ভারতীয় একটি সেনাঘাঁটিতে ফের সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। উত্তর কাশ্মীরে গতকাল রাতের এ হামলায় বিএসএফের এক জওয়ান নিহত এবং অপর একজন আহত হয়েছেন।

কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরের বারামুলা জেলা শহরে ভারতের ৪৬ রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের একটি ঘাঁটি ও এর পাশের  বিএসএফের ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীরা রাত সাড়ে ১০টায় এ হামলা চালায়। হামলার পর উভয় পক্ষে গোলাগুলি চলার কথা জানিয়েছেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র। বারামুলার এসপি ইমতিয়াজ হুসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ওই সেনাঘাঁটির কাছে ব্যাপক গোলাগুলি চলছে। নিকটবর্তী এলাকার বাসিন্দা আবিদ নবী বলেন, ‘আমরা বড় বড় বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ শুনতে পাচ্ছি।’ এর আগে ১৮ সেপ্টেম্বর এই বারামুলা জেলার উরি সেনাঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলায় ১৮ সেনাসদস্য নিহত হন। পাকিস্তান সীমান্তের ঘাঁটিতে এ হামলার জন্য প্রতিবেশী দেশটির সন্ত্রাসীদের দায়ী করছে ভারত। এর প্রতিক্রিয়ায় বুধবার পাকিস্তানের ভেতরে ঢুকে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ নামে অভিযান চালানোর কথা জানিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী বলেছে, তাদের অভিযানে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সন্ত্রাসী হতাহত হয়েছেন। তবে তাদের মাটিতে এ ধরনের কোনো হামলার কথা নাকচ করেছে পাকিস্তান। এদিকে পাকিস্তানের হাতে আটক ভারতীয় সেনাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে দিল্লি। চন্দু বাবুলাল চৌহান নামে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ওই সদস্য কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে গিয়ে পাকিস্তানের হাতে ধরা পড়েন। এর পর থেকে তাকে ফিরিয়ে আনতে দিল্লি সামরিক পর্যায়ে তত্পরতা শুরু করেছে। তবে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ উদ্যোগের কথা জানালেও ওই সেনাকে ফিরিয়ে আনতে যে সময় লাগতে পারে, তাও স্বীকার করেছেন তিনি। অন্যদিকে ভারতীয় ওই সেনা তাদের হাতে ধরা পড়েছে বলে জানানোর পর সরকারিভাবে এ ব্যাপারে আর কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি পাকিস্তান। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, অন্য সময়ে এ ঘটনা ঘটলে ও সেনাকে হয়তো সহজেই ফিরিয়ে আনা যেত। কিন্তু দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজমান থাকায় চন্দু বাবুলাল চৌহানের ভারতে ফেরা সম্ভবত জটিল হয়ে পড়বে। উরির সেনাঘাঁটিতে হামলায় ১৮ ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের শেষে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে পাকিস্তানে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ চালানোর কথা জানায় ভারতীয় বাহিনী। আর সেদিন ভোরের দিকেই মানকোটের কাছে পাকিস্তানি সেনার হাতে ধরা পড়েন চন্দু বাবুলাল চৌহান। তবে ভারতীয় সেনার বক্তব্য, ৩৭ রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের এই জওয়ান ওই হামলার অংশ ছিলেন না। সীমান্তে রুটিন টহল দিতে গিয়ে তিনি অনিচ্ছাকৃতভাবে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে গিয়েছিলেন। তবে ভারতের ওই জওয়ান নেহাত ভুল করে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়েছিলেন, পাকিস্তান সে কথা বিশ্বাস করছে বলে মনে হয় না। বরং জাতিসংঘে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত মালিহা লোধির আল-জাজিরা চ্যানেলকে যে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তাতে অন্য রকম ইঙ্গিতই ছিল। তিনি সেখানে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ভোররাতে আমরা দেখি সীমান্ত পেরিয়ে ভারত শেলিং ও মর্টার ফায়ার শুরু করেছে। আমরা একজন ভারতীয় সেনাকে আটক করেছি, যিনি সীমান্ত পেরোনোর চেষ্টা করছিলেন। আমাদেরও দুজন সৈনিক ওই ঘটনায় শহীদ হয়েছেন।’ মালিহা লোধির ওই সাক্ষাৎকারের পর ধৃত ভারতীয় সেনাকে নিয়ে পাকিস্তানের কাছ থেকে আর কোনো বক্তব্য আসেনি। অন্যদিকে মহারাষ্ট্রে চন্দু বাবুলাল চৌহানের গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। নাতির পাকিস্তানের হাতে ধরা পড়ার খবর পেয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তার নানী। শৈশবেই বাবা-মা হারানো চন্দুকে মানুষ করেছেন যে নানা, তিনি জানান, এ খবরের ধাক্কা সামলাতে পারেননি তার স্ত্রী, চন্দুর নানী। খবর শুনেই অসুস্থ হয়ে তিনি মারা যান। ইতিমধ্যে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং এই পরিবারটিকে নিজে ফোন করে আশ্বাস দিয়েছেন, চন্দুকে ফেরানোর জন্য ভারত চেষ্টার ত্রুটি রাখবে না। বস্তুত বছর দুয়েক আগে পাকিস্তানে ভেসে যাওয়া ভারতের এক বিএসএফ জওয়ানকে ফেরানো সম্ভব হয়েছিল বেশ সহজেই। তৎকালীন বিএসএফ প্রধান ডি কে পাঠক জানিয়েছিলেন, চেনাব নদীতে ভেসে যাওয়া সত্যশীল যাদব নামে ওই জওয়ানের সঙ্গে পাকিস্তানে সবাই খুব ভালো ব্যবহার করেছিলেন। কোনো কর্মকর্তা বা সেনা তার সঙ্গে অসদাচরণ করেননি। এমনকি নদীতে দীর্ঘক্ষণ ভেসে অসুস্থ হয়ে পড়া ওই জওয়ানের উপযুক্ত চিকিৎসারও ব্যবস্থা করেছিল পাকিস্তান। কিন্তু ২০১৪ সালে ওই ঘটনার সময় তো দুই দেশের মধ্যে বড় কোনো উত্তেজনা ছিল না, যা এখন আছে পুরো মাত্রায়। আবার এমন দৃষ্টান্তও আছে, ১৯৯৯ সালে কারগিল যুদ্ধের সময় পাকিস্তানে ধরা পড়া ভারতীয় সেনা ক্যাপ্টেন সৌরভ কালিয়ার দেহ ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় ফেরত এসেছিল। এখন চন্দু বাবুলাল চৌহানের পরিণতি সত্যশীল যাদবের মতো হবে, নাকি সৌরভ কালিয়ার মতো, তা-ই দেখার বিষয়।

ভারতীয় টিভি চ্যানেল নিষিদ্ধ : সম্প্রতি আপত্তিকর বিষয়বস্তু প্রচারের অভিযোগ এনে ভারতীয় সব টিভি চ্যানেল বন্ধ করে দিয়েছে পাকিস্তান। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার জের ধরে এর আগে বলিউডের ছবি প্রচার বন্ধ করে দেয় পাকিস্তান। আগামী ১৫ অক্টোবরের পর যেসব টিভি চ্যানেল ও ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশ পালনে ব্যর্থ হবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের ইলেকট্রনিক মিডিয়া নিয়ন্ত্রক পেমরা।

‘অন্য দেশের ভূখণ্ড দখলে লোভ নেই’ : ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত উত্তেজনা যখন তুঙ্গে, ঠিক সেই সময়ই গতকাল প্রবাসী ভারতীয় মঞ্চকে ব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানিয়ে দিলেন ভারত যুদ্ধবাজ নয়! মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর জন্মদিনের সকালে তার বার্তা, ‘আমাদের দেশ কখনোই অন্যের ভূখণ্ডের জন্য লালায়িত নয়। কখনো কোনো দেশকে আক্রমণ করিনি আমরা।’

সর্বশেষ খবর