মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

চলতি অর্থ বছরে জিডিপি হবে ৬.৮

অতি দরিদ্র কমে ১২.৯ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

চলতি অর্থবছর শেষে সরকারের লক্ষ্য অনুযায়ী জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ শতাংশ অর্জিত হবে না বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ না হওয়ায় ২০১৬-১৭ অর্থবছর শেষে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক  ৮ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি। টানা তিন বছর ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ অব্যাহতভাবে কমে যাওয়ায় আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ৬ দশমিক ২ শতাংশে নেমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি ভালো নয়। রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধিও কমছে। মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির পরিমাণ কমছে। আর বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকায় সাম্প্রতিক সময়ে দেশ থেকে অর্থ পাচারের পরিমাণ বেড়েছে। গতকাল সংস্থাটির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। আরও বক্তব্য রাখেন সংস্থার আবাসিক প্রতিনিধি চিমিয়াও ফান। এদিকে, ছয় বছরে দেশে অতি দরিদ্রের হার কমেছে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। অতি দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দক্ষিণএশীয়া অঞ্চলের দেশ ভারত, পাকিস্তান এবং ভুটানের চেয়েও এগিয়ে রয়েছে বলে তথ্য প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলছে, দেশে উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকায় এটা সম্ভব হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৫-১৬ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশে অতি দরিদ্রের হার কমে ১২ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আর ২০১০-১১ অর্থবছরে বাংলাদেশে এই হার ছিল ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী যাদের দৈনিক আয় ১ দশমিক ৯০ ডলারের (প্রায় ১৪৫ টাকা) কম। তারাই অতিদরিদ্র। আর এটা ২০১১ সালে ছিল সোয়া ১ ডলারের (১০০ টাকা) কম।

প্রতিবেদন তুলে ধরে জাহিদ হোসেন বলেন, গত অর্থবছরে অর্জিত ৭ দশমিক ১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে ভিত্তি ধরে তারা অতি দরিদ্রের হার হিসাব করেছেন। প্রত্যেক অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির ভিত্তিকে বিচার করে বিশ্বব্যাংক হতদরিদ্রের হার ঠিক করে। সেই হিসাবে ২০১০-১১ অর্থবছরে বাংলাদেশে অতিদরিদ্রের হার ছিল ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০১১-১২ অর্থবছরে ছিল ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ছিল ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ছিল ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছিল ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ। এবার তা কমে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৯ শতাংশে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে. জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার শূনে?্য নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। এ লক্ষ্য অর্জন করতে হলে বাংলাদেশকে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে বলে জানিয়েছেন জাহিদ হোসেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী দুর্বল প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকা এবং অভ্যন্তরীণ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এ জন্য সামনের দিনগুলোতে প্রবৃদ্ধি কমবে। বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নিরাপত্তা এবং আর্থিক খাতের অস্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগ সমস্যা। নিরাপত্তার অভাবে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে যেতে পারে। ইতিমধ্যে বিনিয়োগে আস্থা না থাকায় বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের পরিমাণ বেড়েছে। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, দেশে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ বাড়ছে না। সরকারি বিনিয়োগ বেড়েছে। বেসরকারি বিনিয়োগ তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম (জিডিপির ২১ দশমিক ৮ শতাংশ)। সঞ্চয়ের অভাবে নয়, বরং বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকায় এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। সঞ্চয়ের কিছু অর্থ যাচ্ছে রিজার্ভে আর কিছুটা পাচার হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ বাড়লেও এর নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা উন্নত করা হয়নি। এদিকে, আসন্ন ব্রেক্সিট ও যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনে বাণিজ্য সংরক্ষণের বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। সেটা হলে তার নেতিবাচক প্রভাব কিছুটা বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে পড়তে পারে। বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান বলেন, শিক্ষায় লিঙ্গ সমতা, সফল পরিবার-পরিকল্পনা এবং নগদ অর্থ ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী পদ্ধতির প্রয়োগ দরিদ্রের হার কমানো এবং নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়নের ক্ষেত্রেও ভূমিকা রেখেছে।

সর্বশেষ খবর