বৃহস্পতিবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

মোনায়েম খান শহীদ!

সৈয়দ নোমান, ময়মনসিংহ

১৯৬২ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর নিযুক্ত হয়েছিলেন মোনায়েম খান। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে তার পতন হয়। মোনায়েম খান ছিলেন স্বাধীনতাবিরোধী। ১৯৭১ সালে তিনি নিহত হন মুক্তিবাহিনীর হাতে। এখন সেই মোনায়েম খানকেই শহীদ আখ্যায়িত করেছে ময়মনসিংহের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল— অন্বেষা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল।  ইতিহাস বিকৃত করে স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এমন পাঠদানে ক্ষুব্ধ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও নব্বইয়ের গণআন্দোলনের ছাত্রনেতারা। দোষীদের বিচার করে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন তারা। আর ঘটনা তদন্তে কমিটি করেছে জেলা প্রশাসন। ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় অন্বেষা। পরবর্তীতে কলেজে (ও লেভেল) উন্নীত করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান অধ্যক্ষ মোনায়েম খানের ছোট মেয়ে নাসরিন মোনায়েম খান। তিনি বেশির ভাগ সময়ই থাকেন ঢাকায়। দেখা যায়, স্কুলটির প্রধান ফটকের দেয়ালে খোদাই করা চাঁদ ও তারার প্রতীক। আর দাফতরিক কাগজপত্রে লেখা হয় স্কুলটি শহীদ মোনায়েম খান এইচপি (হিলালী পাকিস্তান)-কে উৎসর্গ করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা ও নব্বইয়ের ছাত্রনেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার পরপরই দেয়ালে খোদাই করে লেখা হয় যার নামে উৎসর্গকৃত শহীদ মোনায়েম খান। তখন মুক্তিযোদ্ধা ও নব্বইয়ের ছাত্রনেতারা ধৃষ্টতাপূর্ণ এসব বাক্য মুছে ফেলেন। সম্প্রতি আবার মোনায়েম খানকে শহীদ আখ্যায়িত করতে উঠেপড়ে লেগেছে স্কুলটি। শিক্ষার্থীদের বলা হচ্ছে, মোনায়েম খানকে ডাকাতরা হত্যা করেছে, তাই তিনি শহীদ। তবে প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা তৌফিকুর রহমান সাফাই গেয়ে বলেন, ‘মোনায়েম খান স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন এটি ঠিক নয়। এটি একটি প্রচারিত কথা।’ ফারিদ হাসান নামের এক শিক্ষার্থী জানায়, ‘একবার এ বিষয়টি নিয়ে ম্যাডামের (মোনায়েম খানের মেয়ে নাসরিন) সঙ্গে কথা হয়েছিল। তখন তিনি বলেছিলেন, কেউ যদি অন্য কারও হাতে মারা যান তাহলেই সে শহীদ।’ মুক্তিবাহিনীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মোজাম্মেল হক বীরপ্রতীক হত্যা করেন মোনায়েম খানকে। এ তথ্য জানিয়ে নব্বইয়ের গণ-আন্দোলনের ছাত্রনেতা অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, ‘সেই ব্যক্তিটিকেই আজ শহীদ আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। ইতিহাস বিকৃতি করে তা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে। এ প্রতিষ্ঠানটিতে কখনই স্বাধীনতা, বিজয় দিবসসহ কোনো দিবসই পালন করা হয় না। আমরা দ্রুত এর সমাধান চাই। নইলে কঠিন আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আনোয়ার হোসেন আক্ষেপ করে বলেন, ‘মোনায়েম খান যদি শহীদ হন তাহলে আমরা রাজাকার। মোজাম্মেল রাজাকার।’ জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক খলিলুর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসন বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে আহ্বায়ক করে তদন্ত কমিটি করেছে। ১০ কার্যদিবসে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। এরপরই আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর