শিরোনাম
রবিবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

জঙ্গি নির্মূলে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ জরুরি

মাহমুদ আজহার

জঙ্গি নির্মূলে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ জরুরি

মোহাম্মাদ আলী শিকদার

জঙ্গিবাদ নির্মূলে বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন মেজর জেনারেল  এ কে মোহাম্মাদ আলী শিকদার পিএসসি (অব.)। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় উগ্রবাদী রাজনীতি রেখে জঙ্গিবাদ নির্মূল করা সম্ভব নয়। কারণ, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের শেকড় ধর্মভিত্তিক রাজনীতি। এটা বন্ধের পাশাপাশি আমাদের ফিরে যেতে হবে ’৭২-এর সংবিধানে। এতে হয়তো বৈশ্বিক জঙ্গিবাদ নির্মূল করা সম্ভব হবে না। তবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ জঙ্গিবাদ অনেকাংশেই নির্মূল করা সম্ভব হবে।’ গত রাতে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা। গতকাল গাজীপুর ও টাঙ্গাইলে পুলিশ-র‌্যাবের সঙ্গে গুলিবিনিময়ে ১১ জঙ্গি নিহত হয়। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধন্যবাদও জানান তিনি। মোহাম্মাদ আলী শিকদার বলেন, র‌্যাব-পুলিশকে ধন্যবাদ, জনগণ বা বাহিনীর কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই সফল অভিযান চালিয়েছে তারা। গোয়েন্দা রিপোর্টও যথাযথ ছিল বলে আমার মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘জঙ্গিবাদ নির্মূলে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে তাদের পরিত্যাগ করতে হবে। তাহলেই এটার শেকড় বাংলাদেশ থেকে চলে যাবে। এটা হলে তাদের উৎপাদন ও প্রশিক্ষণ বন্ধ হয়ে যাবে। বৈশ্বিক শেকড় কিছুটা থেকে যাবে। তবে বাংলাদেশ নিয়ে শঙ্কা তেমনটা থাকবে না। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি জনগণকে সজাগ থাকতে হবে।’ সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘অনেকেই বলছেন, নিহতরা নব্য জেএমবি। আমি মনে করি, এটা ঠিক নয়। তাদের শেকড় একটাই। ১৯৯৮ সাল থেকে তাদের তত্পরতা শুরু হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে তারা জঙ্গি কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। কখনো কম, কখনো বেশি। শায়খ আবদুর রহমান ও বাংলা ভাইয়ের ফাঁসি হলো। সাইদুর রহমান ধরা পড়ল। নাম পরিবর্তন করে আনসার উল্লাহ বাংলা টিম হলো। সে কারণে আমি বলব, নব্য জেএমবি বলতে কিছু নেই। তাদের শেকড় একটিই। বিভিন্ন সময় নাম পরিবর্তন হতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘জেএমবি বা জঙ্গি তত্পরতা যখন থেকে শুরু হয়েছে, ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে। হয়তো কোনো সময় ঘ্যাপ একটু বেশি হয়েছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য সাধনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় দুর্গা পূজা বা আশুরাকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতি নিচ্ছিল। যেহেতু এ ধরনের একটা হুমকি ছিল, সেই পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অতিরিক্ত সতর্ক অবস্থায় ছিল। গোয়েন্দারাও তত্পর ছিল। সাধারণ মানুষের মধ্যেও সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই আজ (শনিবার) যে তিন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়েছে, তাদের কাছে সঠিক তথ্য ছিল। এতে কয়েকজন জঙ্গি নিহত হয়েছে।’ মোহাম্মাদ আলী শিকদার বলেন, ‘নব্য জেএমবির কথা বলে গোড়ায় আড়াল করা যাবে না। এটা হলে বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হবে। জঙ্গি যারা নিহত হচ্ছে, তার উৎপাদন কিন্তু বন্ধ হবে না। নতুন নতুন জঙ্গি সৃষ্টি হবে। দেশি-বিদেশি সমর্থন নিয়ে তারা এ তত্পরতা চালাবে। তাদের অর্থের কোনো সমস্যা নেই। প্রশিক্ষণ দিতে পারবে। লন্ডন, নিউইয়র্ক সর্বত্রই তাদের যোগাযোগ রয়েছে। নব্য বললে ওই লিংকটাও বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এখন একজন ধরা পড়লে আরেকজন নতুন নেতা সৃষ্টি হচ্ছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হলি আর্টিজান থেকে শুরু করে ধারাবাহিকভাবে সফল অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের অবশ্যই অভিনন্দন জানাতে হয়। আশপাশে জনগণ আছে। বসতি রয়েছে। পুলিশের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। গোয়েন্দা তথ্য সঠিক ছিল, তারও প্রমাণ পাওয়া যায়। এতে মনে হচ্ছে, জঙ্গিরা আর কোনো তত্পরতা সহজেই চালাতে পারবে না। তবে একটি সতর্কতা হলো, জঙ্গিবাদ শূন্য হয়ে গেল— এ ধরনের কথা আত্মঘাতী ও বিভ্রান্তিকর। জঙ্গিদের শূন্যতা হবে না। কারণ দেশের ভিতর কন্ট্রিবিউটিং ফ্যাক্টরগুলো রয়েছে। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিকভাবেও তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। সুতরাং একজন বা পাঁচজন মারা গেলেও তাদের নেতৃত্বশূন্যতা আপাতত হবে না। নতুন নতুন লোক দিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে এ তত্পরতা চালাবে। সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তত্পরতায় আমরা আশাবাদী হতে পারি। নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের উদ্বেগও কিছুটা কমে যাচ্ছে। আমাদের এও মনে রাখতে হবে, তারা (জঙ্গিরা) অব্যাহতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যতদিন পর্যন্ত দেশি-বিদেশি সহযোগিতা বন্ধ না হবে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে এর শেকড় না উৎপাটিত হবে, ততদিন তাদের সমূলে উৎপাটন করা সম্ভব হবে না। সে জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সর্বস্তরের জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে। ধারাবাহিকভাবে এ অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে।’ জঙ্গিবাদের মূল শেকড় কারা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, জঙ্গিবাদের মূল শেকড় বলতে জামায়াত বা কট্টরপন্থি-উগ্রপন্থি ইসলামিক রাজনীতি বোঝাচ্ছি। তাদের রাজনীতি এখনো বন্ধ হয়নি। ‘আমরা হবো তালেবান, বাংলা হবে আফগান’— এই রাজনীতি তো রয়ে গেছে। সেই ইসলামী ঐক্যজোটের রাজনীতি তো বন্ধ হয়নি। তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক জোটও রয়েছে। তাদের এই শক্তিটা রয়ে গেছে। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করে আমাদের ’৭২-এর সংবিধানে ফিরে যেতে হবে।

সর্বশেষ খবর