বুধবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা
রাজনীতির হালচাল

আওয়ামী লীগের পদ চায় সবাই

রফিকুল ইসলাম রনি

আওয়ামী লীগের পদ চায় সবাই

আলালের ঘরের দুলাল, নব্য আওয়ামী লীগার, ২০১৩ সালের রাজনৈতিক সংকটের সময়ে দেশত্যাগী, সিনিয়র-জুনিয়র ও সাবেক ছাত্রনেতা, সাবেক আমলা, বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতা সবারই পদ চাই। বলা যায়, আসন্ন কাউন্সিল ঘিরে আওয়ামী লীগে এখন পদপ্রত্যাশী বেশুমার। এ নিয়ে এখন রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে। শুরু হয়েছে তদবির, লবিং ও গ্রুপিং। ধরনা দেওয়া হচ্ছে দলের সিনিয়র নেতাদের বাড়ির ড্রইংরুম, অফিসে। দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা হচ্ছে সর্বাত্মকভাবে। গত কয়েক দিন দলীয় সভাপতির ধানমন্ডির কার্যালয়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্থাপিত মঞ্চ সাজসজ্জা এবং স্বেচ্ছাসেবক ও শৃঙ্খলা উপকমিটির অস্থায়ী কার্যালয়ে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে। এসব জায়গায় এখন কর্মীর সংখ্যা কম, নেতার সংখ্যাই বেশি। সবাই এখন নেতা। তবে বিষয়টিকে ‘নেতা’ হওয়ার প্রতিযোগিতা নয়, সারা দেশের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা বলে মনে করেন দলের নীতিনির্ধারকরা। ২২ ও ২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় এ কাউন্সিলের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসায় কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সর্বত্রই এখন আলোচনার মূল বিষয় : কারা আসছেন নতুন নেতৃত্বে। পুরনোদের আধিক্য থাকছে নাকি নতুন মুখ আসছে। কাউন্সিলের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই দৌড়ঝাঁপ বাড়ছে নেতা-কর্মীদের। উপকমিটির সহ-সম্পাদক, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এবং জেলা নেতারাই নন বরং সহযোগী, অঙ্গ ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের অনেক নেতাও কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসতে লবিং-তদবির করছেন। পিছিয়ে নেই সাবেক আমলা, শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবী কিংবা প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পেশাজীবীও। বিশেষ করে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ ও যুব মহিলা লীগের বেশ কয়েকজন নেতা কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেতে মরিয়া হয়ে আছেন। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন সংগ্রামের ছবি পোস্ট করে নিজেদের জানান দেওয়ার চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি গণভবনে দলীয় প্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণেরও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ছাত্রলীগের বেশকিছু নেতাকে সহযোগী সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, কিন্তু তারা সেখানে কাজ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না দীর্ঘদিন ধরেই। এখন তারা কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ প্রত্যাশা করছেন। যে কোনো প্রোগ্রামের আগেই অনুষ্ঠানস্থলে হাজির হচ্ছেন। বিগত দিনে নিজেদের কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি নিয়ে হাজির হচ্ছেন নেতাদের দ্বারে দ্বারে। কেউবা আবার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেরও ‘সাহায্য’ নিচ্ছেন। নিজের ত্যাগ-তিতিক্ষার প্রমাণাদি পাঠিয়ে দিচ্ছেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ২০১৩ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় এদের অনেকেই বিদেশ পাড়ি জমিয়েছিলেন। তারাই এখন সবচেয়ে বেশি সক্রিয় বলে জানা গেছে। এদিকে বিভিন্ন দেশের প্রবাসী নেতারাও এবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ-পদবি চান। তাদের যুক্তি, সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ঢাকার নেতাদের কেউ কেউ দলীয় সভাপতির সঙ্গে বেইমানি করেছিলেন, প্রবাসী নেতারা তখন তার প্রতিবাদসহ ওই সময়কার সরকারের ওপর নির্বাচন দিতে চাপ প্রয়োগ করেছিলেন। কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের অর্ধশত নেতা এখন ঢাকায়। এদের অনেকের টার্গেট আন্তর্জাতিক সম্পাদকের পদ। কারও যে কোনো একটি জায়গায় রাখলেই চলবে।

অন্যদিকে ভিন্ন চিত্র বিরাজ করছে বিগত দিনে রাজপথের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা-কর্মীদের ক্ষেত্রে। প্রায় দেড় ডজন সাবেক ছাত্রনেতা রয়েছেন, যারা দীর্ঘদিন কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাননি। তারা অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছেন দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের প্রতি। কর্মমূল্যায়ন আর সাংগঠনিক দক্ষতায় তাদের সুদিন আসবেই, এমন ধারণা নিয়ে আগের মতোই কাজ করে যাচ্ছেন। এর পরও আশঙ্কা সুবিধাবাদীদের দাপটে শেষ পর্যন্ত মূল্যায়নের সোনার হরিণ হয়ে যাবে না। গত কয়েক দিন ধানমন্ডিতে সরেজমিনে দলটির সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে খুব ভিড় দেখা যায়। এদের মধ্যে বেশির ভাগ নেতা উপকমিটির সহ-সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা। একটি অংশ রয়েছেন বিভিন্ন জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা। একেকজন কেন্দ্রীয় নেতার পেছনে শতাধিক পদপ্রত্যাশী নেতা। কাউন্সিল প্রস্তুতি উপকমিটিগুলোর সভায় ‘উপযাচক’ অনেক সময় জায়গা পান না কমিটির সদস্যরা। পদপ্রত্যাশী নেতাদের আধিক্যের কারণে ধানমন্ডি কার্যালয়ে প্রায়ই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যস্থতায় সেগুলো মীমাংসা হচ্ছে বলেও জানা গেছে। এই অতি উৎসাহী নেতার ভিড়ে ত্যক্ত-বিরক্ত কেন্দ্রীয় নেতারাও। গত শুক্রবার এই অতি উৎসাহীদের ওপর বিরক্তি প্রকাশ করে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আসন্ন কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে কেউ অতি উৎসাহী হয়ে সীমা লঙ্ঘন করবেন না। দলের চেইন অব কমান্ড সবাইকে মেনে চলতে হবে। আমরা কেউ কারও প্রতিদ্বন্দ্বী না। নেত্রীর প্রতি আমাদের শতভাগ আস্থা আছে। যা করার উনিই করবেন।’ এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘দেশের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীনতম দলের কাউন্সিল উপলক্ষে সারা দেশে নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসব আমেজ বিরাজ করছে। মূল দলের কাউন্সিল আর সহযোগী সংগঠন ও সাবেক ছাত্রনেতারা দলীয় কার্যালয়ে আসবেন না, এটা হতে পারে না। এখানে নেতা হওয়ার প্রতিযোগিতা নেই। এটা তাদের মধ্যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা এবং ভালোলাগা, ভালোবাসা থেকেই নেতা-কর্মীদের পদচারণ বাড়ছে। এতে দোষের কিছু নেই।’

প্রস্তুতি দেখলেন কেন্দ্রীয় নেতারা : কেন্দ্রীয় নেতারা গতকাল সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মঞ্চ ও প্যান্ডেলসহ অন্যান্য প্রস্তুতিমূলক কাজ পরিদর্শন করেন। সকালে পরিদর্শন করেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মঞ্চ সাজসজ্জা উপ কমিটির আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সদস্য সচিব মির্জা আজম এবং স্বেচ্ছাসেবক ও শৃঙ্খলা উপকমিটির আহ্বায়ক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম সার্বক্ষনিক তদারকি করেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দফায় দফায় পরিদর্শনে আসেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, আবদুস সাত্তার, এস এম কামাল হোসেন, এনামুল হক শামীম, শফি আহমেদ, ড. আওলাদ হোসেন, লিয়াকত সিকদার, শাহে আলম মুরাদ, ড. আওলাদ হোসেন, মাহমুদ হাসান রিপন, মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, বদিউজ্জামান সোহাগ, সাইফুর রহমান সোহাগ, এসএম জাকির হোসাইন প্রমুখ।

খাদ্য সরবরাহে বুথ নির্ধারণ : প্রায় ৪০ হাজার লোকের ২দিনের খাবার সুশৃঙ্খল ও নিরবিচ্ছিন্নভাবে সরবরাহে সম্মেলনস্থলে খাদ্য বুথের ব্যবস্থা করেছে সম্মেলনের খাদ্য উপ-কমিটি। গতকাল সকালে খাদ্য উপকমিটির আহ্বায়ক এবং দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সদস্যসচিব ও খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরম্নল ইসলামসহ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা মাঠ ঘুরে ঘূরে এ ১০টি বুথের স্থান নির্ধারণ করেন। সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের ভিতরে উন্মুক্ত মঞ্চের ৯টি গ্যালারিতে ৯টি ও মঞ্চের প্রবেশমুখে মহিলাদের জন্য একটি খাদ্যবুথ হবে। বিভাগ ভিত্তিক এসব বুথ নির্ধারিত থাকবে। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, মহানগর নেতা আসলামুল হক আসলাম এমপি, তারেক শামস হিমু, মুকুল চৌধুরী, আব্দুল হক সবুজ, হেদায়েতুল ইসলাম স্বপন, সহিদুল ইসলাম মিলন, গোলাম সরোয়ার কবির, ছাত্রলীগের সৈয়দ মিজানুর রহমান, বায়জিদ আহমেদ খান, সাব্বির হোসেন প্রমুখ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর