শিরোনাম
বুধবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

হিলারি না জিতলে নিরাপদে বাস সম্ভব হবে না

আশঙ্কা ৯০ ভাগ বাংলাদেশি আমেরিকানের

প্রতিদিন ডেস্ক

হিলারি না জিতলে নিরাপদে বাস সম্ভব হবে না

আসছে ৮ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও বেশ আবর্তিত হচ্ছেন। তবে আনন্দ-উল্লাসে নয়, চরম উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা এখন সর্বস্তরে। প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মধ্যকার দ্বিতীয় বিতর্কের পর অনেক প্রবাসী নিজেদের অবস্থানের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। অর্থাৎ নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে আরও জোরালোভাবে জড়িয়ে পড়েছেন। এ নির্বাচনকে তারাও নিজেদের অস্তিত্বের প্রশ্নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করছেন। খবর এনআরবি নিউজ। সোমবার দিনভর প্রবাসীদের এক জরিপে জানা যায়, বাংলাদেশি  আমেরিকানদের শতকরা ৯০ ভাগের আশঙ্কা, হিলারিকে জয়ী করতে না পারলে কারও পক্ষেই আর স্বপ্নের আমেরিকায় নিরাপদ/স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করা সম্ভব হবে না। তারা উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান সব নাগরিকের সমঅধিকার নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করলেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো রিপাবলিকানদের হাতে তা দলিত হতে বাধ্য।

এনআরবি নিউজের জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মাত্র ১০% মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাংবিধানিক ভিতকে নড়বড়ে করার একক অধিকার বা ক্ষমতা থাকবে না ডোনাল্ড ট্রাম্পের। তাই অযথা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার প্রয়োজন নেই। এ শ্রেণির প্রবাসীরা অবশ্য উল্লেখ করেছেন, কংগ্রেসের উভয় কক্ষ যদি ডেমোক্র্যাটদের দখলে এসে যায়, তাহলে ট্রাম্পের পক্ষে ‘যা খুশি তাই করা’ কখনই সম্ভব হবে না। ৬৫% এর ধারণা নির্বাচনে সিনেট ও হাউসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাবে রিপাবলিকানরা। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বারাক ওবামাকেই শুধু বিজয় দেয়নি, একই সঙ্গে কংগ্রেসের উভয় কক্ষই ডেমোক্র্যাটদের দখলে এসেছিল। এবারও একজন নারীকে বিশাল বিজয় দিয়ে কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণও ডেমোক্র্যাটরা পুনরুদ্ধারে সক্ষম হবে। ‘রিপাবলিকান ট্রাম্পের মতো লম্পট আর বাটপার কীভাবে জনমত জরিপে’ হিলারির কাছাকাছি অবস্থান করে-সেদিকে ইঙ্গিত করে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৪২% বলেছেন, ‘এটা আমেরিকানদের পশ্চাদমুখী দৃষ্টিভঙ্গির নগ্ন বহিঃপ্রকাশ।’ ‘বিগত কয়েক দশকের অভিজ্ঞতায় সিক্ত হিলারি ক্লিন্টনের সঙ্গে ‘মিথ্যুক, চাপাবাজ আর বাচাল’ ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোনো তুলনাই হওয়া উচিত নয়’— মন্তব্য ৬০% বাংলাদেশি আমেরিকানের। তারা উল্লেখ করেন, ‘নিজের স্বার্থে বরাবরই কঠোর পরিশ্রমী শ্রমিকদের ঠকাতে অভ্যস্ত এবং এ যাবৎ কমপক্ষে ৬ বার নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণাকারী ব্যক্তি (ট্রাম্প) কীভাবে রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন পেয়েছেন, সেটিও ভেবে দেখার অবকাশ রয়েছে। উল্লেখ্য যে, রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন দৌড়ে অবতীর্ণ হওয়ার পর থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসী, নারীশ্রমিক, মুসলমানদের বিরুদ্ধে অশালীন মন্তব্য/বক্তব্য দিচ্ছেন। মুসলমানদের আমেরিকায় নিষিদ্ধ করার কথা বার বার বলছেন। নিরাপদ জীবন-যাপনের অভিপ্রায়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের পর যারা অভিবাসনের মর্যাদা পাননি, এমন সোয়া কোটি বিদেশিকে ঢালাওভাবে বহিষ্কারের কথাও বলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিউইয়র্কে বাংলাদেশিদের অন্যতম বৃহৎ সংগঠন ‘বাংলাদেশ মুসলিম সেন্টার জামে মসজিদ’র প্রেসিডেন্ট আলহাজ আবুল হাশেম বলেন, ‘আগের যে কোনো নির্বাচনের চেয়ে এবারের নির্বাচনের গুরুত্ব অপরিসীম। একই সঙ্গে দুটি ইতিহাস রচিত হবে। একটি হচ্ছে একজন মহিলাকে প্রেসিডেন্ট বানানো, আরেকটি হচ্ছে মুসলিম আমেরিকানদের জোরালো অবস্থানের স্পষ্ট জানান দেওয়া।’ নিউইয়র্কের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও এশিয়ান আমেরিকান কাউন্সিলর আকতার হোসেন বাদল বলেন, ‘হিলারি ক্লিন্টন হচ্ছেন বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু। তাই প্রতিটি বাংলাদেশির উচিত তার ক্যাম্পেইনে শরিক হওয়া। এখন পর্যন্ত সেটিই ঘটছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে ভারতীয়, চাইনিজ, পাকিস্তানি, শ্রীলঙ্কান আমেরিকানদের নিয়ে কাজ করছি। হিলারির ভোটব্যাংক আরও সুসংহত করার আওয়াজ তুলে ফ্লোরিডা, পেনসিলভেনিয়া, ভার্জিনিয়া আর সাউথ ক্যারোলিনার মতো সুইং স্টেটে জনজোয়ারের প্রত্যাশায় রয়েছি। ইতিমধ্যে ট্রাম্প ঠেকানোর স্লোগান উঠেছে।’

দলগতভাবে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির লোকজনও হিলারির পক্ষে মাঠে রয়েছেন। জরিপে অংশগ্রহণকারীর অধিকাংশই মনে করছেন, বাংলাদেশিসহ দক্ষিণ-এশিয়ানদের প্রায় সবাই হিলারিকে ভোট দেবেন। এদিকে রবিবারের বিতর্কের প্রাক্কালে এনবিসি/ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক জরিপে দেখা যায়, ট্রাম্পের চেয়ে হিলারি ১১% এগিয়ে আছেন। হিলারিকে ৪৬% সমর্থন দিয়েছেন। ট্রাম্পের এ সমর্থনের হার ৩৫%। প্রথম বিতর্কের সময় পরিচালিত জরিপের চেয়ে হিলারির সমর্থন ৫% বেড়েছে।

সর্বশেষ খবর