বুধবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

পরিবার বিচ্ছিন্ন ছিল ওরা

পরিচয় মিলল পাঁচ জঙ্গির

নিজস্ব প্রতিবেদক

পরিবার বিচ্ছিন্ন ছিল ওরা

গাজীপুর ও টাঙ্গাইলের জঙ্গি আস্তানায় র‌্যাব-পুলিশের অভিযানে নিহত ১১ জঙ্গির মধ্যে পাঁচজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। এদের মধ্যে দুজন র‌্যাবের অভিযানে ও বাকি তিনজন পুলিশের অভিযানে নিহত হন। এই জঙ্গিরাও পরিবার বিচ্ছিন্ন ছিল বলে জানা গেছে। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহ্মুদ খান বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে নিহত দুই জঙ্গির পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছি। তাদের পরিবারের সঙ্গে  যোগাযোগ করা হয়েছে। এ দুজনের মধ্যে মো. আমিনুল এহসান গাজীপুরের অভিযানে নিহত হয়েছিলেন। তার বাবার নাম গাফফার মণ্ডল। গ্রামের বাড়ি জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার জিন্ডারপুর ইউনিয়নে।’ তিনি বলেন, টাঙ্গাইল অভিযানে নিহত মো. আহসান হাবিবের বাবার নাম আলতাফ হোসেন। গ্রামের বাড়ি নওগাঁর রানীনগর উপজেলা সদরের রানীনগর ইউনিয়নে। অন্যদিকে গাজীপুরের পাতারটেকে জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানে নিহত সাতজনের মধ্যে তিনজন হলো ঢাকার বংশালের মোগলটুলি এলাকার আজিমউদ্দীনের ছেলে ইব্রাহীম, সুনামগঞ্জের ছাতকের সাইফুল ইসলাম বাবুল ও সিরাজগঞ্জের ফরিদুল ইসলাম আকাশ। এদের মধ্যে দুজনের পরিবার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ। এ ছাড়া নিহতদের মধ্যে নব?্য জেএমবির ‘নেতা’ ফরিদুল ইসলাম আকাশ রয়েছেন বলে আগেই জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। নিহতরা সবাই গুলশানে হামলাকারীদের দল ‘নব?্য জেএমবি’র সদস?্য বলেও অভিযানের দিন জানান তিনি। পুলিশ সুপার বলেন, নিহতদের যে ছবি প্রকাশ করা হয়েছিল, তা দেখে দুজনের পরিবার যোগাযোগ করেছে।

শনিবার গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকার নোয়াগাঁওয়ের আফারখোলা পাতারটেকের ওই বাড়িতে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও সোয়াতের অভিযানে ওই সাতজন নিহত হয়। আধা কিলোমিটার দূরে আরেকটি বাড়িতে প্রায় একই সময় র‌্যাবের অভিযানে দুজন নিহত হয়। রবিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের ফেসবুক পাতায় নিহতদের ছবি প্রকাশ করে তাদের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়। সেখানে বলা হয় : ‘জঙ্গি অভিযান ও তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে আমরা দেখেছি, জঙ্গিরা বিভিন্ন সময়ে ও বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন নাম ব্যবহার করে থাকে। তদন্তের স্বার্থে তাদের প্রকৃত পরিচয় জানা জরুরি।’ পুলিশ বলছে, সেই ছবি দেখে গতকাল গাজীপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আসেন ইব্রাহীমের বাবা আজিমউদ্দীন। তিনি ঢাকায় একটি আবাসন কোম্পানিতে কাজ করেন। পুলিশকে তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ইব্রাহীম পড়ালেখা করেছেন তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসায়। ৮ আগস্ট ভোরে বাসা থেকে নামাজ পড়তে বের হওয়ার পর আর ফেরেননি। তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে পরদিন বংশাল থানায় একটি জিডিও করা হয় পরিবারের পক্ষ থেকে। আজিমউদ্দীন জানান, তারা চেয়েছিলেন ছেলে বড় আলেম হবে। কিন্তু মোবাইল ফোন আর আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সে যে মৌলবাদী গোষ্ঠীতে জড়িয়ে পড়েছে তা তারা বুঝতে পারেননি। পুলিশ সাতজনের যে ছবি প্রকাশ করেছে, তার মধ্যে তিন নম্বর ছবিটি ইব্রাহীমের বলে জানান তার বাবা। সিরাজগঞ্জ পুলিশের তথ?্য অনুযায়ী, কাজিপুর উপজেলার গান্ধাইল ইউনিয়নের পশ্চিম বড়ইতলী গ্রামের আবু সাঈদের ছেলে ফরিদুল ইসলাম আকাশ (২৫) এক বছর আগে নিখোঁজ হন। ৫ সেপ্টেম্বরে আকাশের মা, দুই বোন ও প্রতিবেশী এক নারীকে গ্রেফতার করে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা ‘জেএমবির আত্মঘাতী দলের’ সদস?্য। আর আকাশের বাবা আবু সাঈদ এক ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে ‘গাঢাকা দিয়ে আছেন’ বলে সিরাজগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশের ওসি ওয়াহেদুজ্জামান জানান।

সর্বশেষ খবর