বুধবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা
জিনপিং আসছেন শুক্রবার

বিদ্যুৎ-জ্বালানিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিদ্যুৎ-জ্বালানিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের আসন্ন বাংলাদেশ সফরে বিভিন্ন খাতের মধ্যে গুরুত্ব পাবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। এরই মধ্যে বাংলাদেশের কাছে চীন প্রাথমিকভাবে বাছাইকৃত যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, শিল্প, বিদ্যুৎ, জ্বালানিসহ  মোট ২১টি প্রকল্পে অর্থসহায়তার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। যার মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কয়েকটি প্রকল্পও আছে। এ সফরে পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে ঋণচুক্তিও স্বাক্ষর হবে। শি জিনপিংয়ের আগামী ১৪ অক্টোবর শুক্রবার ঢাকায় আসার কথা রয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এ সফরে বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে সংশ্লিষ্ট খাতের উন্নয়নের জন্য এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় ঋণ চাইবে। বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, শি জিনপিংয়ের সফরকালে চীনের কাছ থেকে বিদ্যুৎ খাতের ২১টি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ ২৭ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৭০০ কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা) ঋণ চাইতে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছে। উৎপাদন, সঞ্চালন, বিতরণ, প্রি-পেইড মিটারসহ বিদ্যুৎ খাতের বিভিন্ন উন্নয়নকাজের জন্য এ ঋণ চাওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২৮ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয় থেকে এ প্রকল্পগুলোর জন্য অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) পাঠানো হয়। এতে চায়না এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়নে জি টু জি ভিত্তিতে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন ও চীনের প্রেসিডেন্টের সফরকালে অর্থায়নের বিষয়টি প্রক্রিয়াকরণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়। এ প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় ঋণ নেওয়া হবে পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য। এতে প্রায় ২ বিলিয়ন বা ২০০ কোটি ডলার ঋণ দেবে চীনা এক্সিম ব্যাংক এমনটি আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় কয়লাভিত্তিক আরও একটি ৩০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ঋণ চাওয়া হয়েছে। আর ঢাকা শহরের বিদ্যুৎ-ব্যবস্থার উন্নয়ন ও মাটির তলদেশ দিয়ে বিতরণ লাইন স্থাপনেও ঋণ চাওয়া হচ্ছে। আরও আছে ১৬ কোটি ৬০ লাখ ডলারে সিস্টেমলস কমাতে উন্নত মিটার, ২০৩ কোটি ৮০ লাখ ডলারের ঢাকায় ডিপিডিসির অধীন বিদ্যুৎ সরবরাহ উন্নয়ন ও ১৩২ কোটি ১৮ লাখ ডলারের সঞ্চালন উন্নয়ন। ময়মনসিংহের ৩৬০ মেগাওয়াট দ্বৈত জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মোল্লাহাট ১০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও ৫ হাজার ডিজেলচালিত সেচ পাম্পকে সৌর সেচ পাম্পে পরিণত করা ইত্যাদি। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গত ৪ অক্টোবর ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত লি গুয়ারজুর মাধ্যমে চীন বাংলাদেশের জন্য প্রাথমিকভাবে ২১টি প্রকল্প বাছাই করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। আর বড় কোনো নীতি পরিবর্তন না হলে এ তালিকাই চূড়ান্ত বলে জানিয়েছে চীন। জানা যায়, বাছাইকৃত ২১টি প্রকল্পের মধ্যে কয়েকটি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের; যার মধ্যে সিস্টেমলস প্রকল্পটি ‘পাওয়ার গ্রিড নেটওয়ার্ক স্ট্রেংদেনিং প্রজেক্ট’ এবং এক্সপানশন অ্যান্ড স্ট্রেংদেনিং অব পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক আন্ডার ডিপিডিসি এরিয়া প্রকল্প ও গজারিয়ার ৩৫০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক থারমাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য চীনের অর্থসাহায্য দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।

পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র : অন্যদিকে চীনা প্রেসিডেন্টের সফরকালে তার উপস্থিতিতে ১৪ অক্টোবর পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে ঋণচুক্তি স্বাক্ষর হবে। চীনের এক্সিম ব্যাংক এ কেন্দ্রটি স্থাপনে ঋণ দিতে যাচ্ছে। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন যৌথ মূলধনীতে এ কেন্দ্রটি স্থাপন করবে। এজন্য বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি গঠন করা হয়। গত মার্চে কোম্পানির সঙ্গে চীনের নর্থ ইস্ট ইলেকট্রিক পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি ও চায়না ন্যাশনাল এনার্জি ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানির মধ্যে ক্রয়, প্রকৌশল ও নির্মাণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কোম্পানির ৩০ শতাংশ অর্থ সমানভাবে বিনিয়োগ করবে চীন ও বাংলাদেশ। বাকি ৭০ শতাংশ ঋণ নেওয়া হচ্ছে চীনের এক্সিম ব্যাংক থেকে। প্রথমবারের মতো কোনো কোম্পানি ঋণচুক্তির আগেই কেন্দ্র স্থাপনে বিনিয়োগ শুরু করেছে। কারণ, দরপত্রের শর্তানুযায়ী ঠিকাদার কোম্পানি নিজেদের অর্থায়নে কাজ শুরু করে দিয়েছে। ঋণচুক্তির পর সে টাকা সমন্বয় করা হবে। এ টাকা দিয়ে ঋণচুক্তির আগেই কেন্দ্র স্থাপনের ২৫ ভাগ কাজ শেষ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর