বুধবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

তাজিয়া মিছিল ঘিরে কড়া নিরাপত্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক

শিয়া সম্প্রদায়ের তাজিয়া মিছিলকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে কড়া সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। বাড়তি সতর্কতায় চলছে তল্লাশি। গত বছরের নাশকতার অভিজ্ঞতার পর দুর্গাপূজার মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারিতে পুরান ঢাকায় তাজিয়া মিছিলের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেছে শিয়া মুসলিমরা। আজ পালিত হচ্ছে আশুরা। গত বছর আশুরার সময় হোসনি দালানে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় জঙ্গিদের বোমাহামলায় দুজন নিহত হন। এ কারণে এবার নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ। পাশাপাশি দুর্গাপূজা চলার কারণে সতর্ক নজরদারিও রয়েছে বলেছেন সংশ্লিষ্টরা।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, অতীত অভিজ্ঞতা থেকে আমরা তাজিয়া মিছিলসহ হোসনি দালান এলাকাকে নির্বিঘ্ন রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। পোশাকে এবং সাদা পোশাকে র‌্যাব সদস্যরা হোসনি দালান এলাকায় দায়িত্ব পালন করছে। জানা গেছে, কারবালার বিয়োগান্তক ঘটনা স্মরণ করে গতকাল সকাল ১০টার দিকে হোসনি দালান থেকে মিছিল বের হয়ে পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে পুনরায় হোসনি দালানে এসে শেষ হয়। পরে বিকাল ৩টা থেকে সূত্রাপুর বিবিকা রওজা থেকে মিছিল বের হয়ে সন্ধ্যা ৭টার সময় এসে শেষ হয়। নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে গতকাল মেয়র সাঈদ খোকন ইমামবাড়া পরিদর্শন করেন। তবে সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে পুরান ঢাকার ঈমামবাড়া ও বড় কাটরা থেকে কয়েক হাজার মানুষের দুটি তাজিয়া মিছিল বের করে আনুষ্ঠানিকভাবে আশুরা উদযাপন শুরু হয়। মিছিলে অংশ নিতে বিকাল থেকেই শিয়া মুসলিম নারী-পুরুষ-শিশুরা সমবেত হতে শুরু করে হোসনি দালানে। ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার মো. ইব্রাহীম খান বলেন, সব সম্ভাব্য বিষয়কে মাথায় রেখেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে। পোশাকে এবং সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরা অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। নিরাপত্তার স্বার্থে আজ রাতে হোসনি দালান থেকে সব ধরনের মিছিল বের না করতে ডিএমপির পক্ষ থেকে শিয়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের নিষেধ করা হয়েছিল। এদিকে পুরান ঢাকার হোসনি দালান এলাকায় তাজিয়া মিছিল থেকে ১৪ জন ‘পাইক’কে আটক করেছে পুলিশ। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ধারালো অস্ত্র বহন করায় গতকাল বিকালে তাদের আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চকবাজার থানার ওসি শামীমুর রশিদ তালুকদার। মহররমের তাজিয়া মিছিলে ‘হায় হোসেন’ মাতম তুলে যারা দা, ছোরা, কাঁচি, বর্শা, বল্লম, তরবারি নিয়ে নিজেদের শরীর রক্তাক্ত করে তাদের পাইক বলা হয়। গত বছর তাজিয়া মিছিলের আগে হোসনি দালানের ইমাম বাড়ায় বোমাহামলায় দুজন নিহত হওয়ার কারণে এবার কড়া নজরদারি রাখছে পুলিশ। এবার ১০ অক্টোবর সন্ধ?্যা ৬টা থেকে ৮টা, ১১ অক্টোবর সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা এবং আশুরার দিন ১২ অক্টোবর সকাল ১০টা থেকে দুপুরে নামাজের আগ পর্যন্ত তাজিয়া মিছিল বের করার সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে ডিএমপি। তাজিয়া মিছিলে ধারালো অস্ত্র কিংবা লাঠি বহন নিষিদ্ধ করেছে ডিএমপি। যদিও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ধারালো অস্ত্র ও লাঠি বহন করেছিলেন অনেকে। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, দেশের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সংস্থা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সাধারণ মানুষের মন থেকে আতঙ্ক দূর করতে পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কার্যক্রম চলছে। সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে সোয়াতকে। নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে থানা-পুলিশ, এপিবিএন, এসপিবিএন এর ৬৪টি প্যাট্রল। ওসি শামীমুর বলেন, ইমামবাড়ার সামনের রাস্তায় বিকাল বেলা কয়েকজন পাইক দল বেঁধে ‘হায় হোসেন-হায় হোসেন’ বলে চিৎকার করছিল। এরাই মানুষজনের ব্যাগ ও অন্যান্য জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়। এ বছর পাইকদের নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় ১৪ জনের মতো পাইককে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। ইমামবাড়া তাজিয়া মিছিল সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক মীর জুলফিকার আলী বলেন, পাইকদের এবার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তারপরও তারা রাস্তায় নেমেছিল এবং উচ্ছৃঙ্খলতা করছিল। পুলিশ ওদের আটক করলেও পরে ছেড়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে বলে জানান তিনি। আজ বুধবার বাংলাদেশে আশুরা পালন করা হবে। শিয়া সম্প্রদায় ঘটা করে দিনটি পালন করে থাকে। আশুরার আগে কয়েক দিন ধরে পুরান ঢাকায় তাজিয়া মিছিল বের হয়।

সর্বশেষ খবর