বাংলাদেশে গণতন্ত্রের শূন্যতা বিরাজ করছে বলে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। জবাবে চীনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, চীন শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ দেখতে চায়।
গতকাল বিকালে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে মেরিডিয়ান হোটেলে বাংলাদেশ সফররত চীনের প্রেসিডেন্টকে বেগম জিয়া এ কথা বলেন। হোটেলের ১৪ তলায় প্রেসিডেন্ট স্যুটে বেগম জিয়ার প্রায় ৪০ মিনিট বৈঠক হয়। এ বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় ও উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে অংশ নেওয়া দলের স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ তথ্য জানান। বিএনপির আট সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপি প্রধানের সঙ্গে ১৫ মিনিটের বৈঠকের সময় নির্ধারিত থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা ৪০ মিনিটে গড়ায়। এর আগে হোটেল স্যুটে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বিএনপির প্রতিনিধি দলে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান (অব.), নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান ও বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস ছিলেন।
বৈঠকের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের জানান, ভূ-রাজনীতিতে চীন যে ভূমিকা রাখছে, বাংলাদেশ তার পাশে থাকবে- খালেদা জিয়ার কাছে এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তিনি বলেন, ‘চীনের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ আশা করে, চীন তাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সবসময় সহযোগিতা করবে ও পাশে থাকবে। একই সঙ্গে চীনও আশা করে, চীনের যে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে চীন যে ভূমিকা পালন করছে বিশেষ করে উন্নয়ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তীব্র সমর্থন জোগাবে।বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অত্যন্ত সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া উল্লেখ করেছেন, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের উদ্যোগে। তারপর থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের অকৃত্রিম সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। চীন বাংলাদেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অকৃত্রিম বন্ধু।’
বৈঠকে অংশ নেওয়া দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, ‘বৈঠকে আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, চীনের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। বিএনপি এ সম্পর্ক দিন দিন আরও জোরালো দেখতে চায়। তবে বাংলাদেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হচ্ছে না। দেশের সাধারণ মানুষ কষ্টে আছে। দেশে গণতন্ত্র অনুপস্থিত। আমরা গণতন্ত্র ফিরে পেতে সংগ্রাম করছি। চীন জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাস করে। তারাও গণতন্ত্র চায়।’ এর জবাবের শি জিনপিং বলেছেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ পৃথিবী চাই। শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ দেখতে চাই। সে লক্ষ্যে আমরা ‘ওয়ান বেল্ট’ ‘ওয়ান জোন’ এর কথা বলছি। সে লক্ষ্যে চীন কাজও করছে। আমরা আশা করি, এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আরও সমৃদ্ধ হবে। চায়নার এটাই স্বপ্ন। বাংলাদেশ দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে। আরও এগিয়ে যাবে। চীন বাংলাদেশের উন্নয়নে পাশে থাকবে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আড়াই ঘণ্টা পর বিকাল ৫টা ২৫ মিনিটে মেরিডিয়ান হোটেলে চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে খালেদা জিয়ার এ বৈঠক হয়। চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আসা কয়েকজন মন্ত্রী ও ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিং কিয়াং উপস্থিত ছিলেন।