রবিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা
ঢামেকে বেপরোয়া অ্যাম্বুলেন্স

পিষ্ট হয়ে মর্মান্তিক মৃত্যু চারজনের

নিজস্ব প্রতিবেদক

মানুষের জীবন বাঁচাতে যে অ্যাম্বুলেন্স সারাক্ষণ ছুটে বেড়ায় সেই অ্যাম্বুলেন্সের চাপায় প্রাণ গেল মা আমেনা বেগম সূর্যি ও তার গর্ভে থাকা ছয় মাসের শিশুটির। আর মাত্র মাস চারেক পরই শিশুটির থাকার কথা ছিল মায়ের কোলে। মায়ের গন্ধ মেখে তার বাহুতে তুলতুলে ছোট্ট দেহ নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমানোর কথা। অথচ পৃথিবীর আলো দেখারই সুযোগ পেল না সে। অদক্ষ চালকের কারণে মায়ের গর্ভেই মৃত্যু হলো শিশুটির। একই ঘটনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে লাশ হলেন মা গুলেনুর বেগম ও ছেলে সাকিব। তাদের সঙ্গে না ফেরার দেশে চলে গেছেন অজ্ঞাত আরেক ভিক্ষুক। তার বয়স আনুমানিক ৪৫ বছর। গতকাল সকাল ৯টার দিকে দুর্ঘটনাটি ঘটে। ঢামেকের জরুরি বিভাগের গেটে ‘মানবসেবা’ নামে একটি অ্যাম্বুলেন্স (সিলেট-ছ-৭১-০০৬৪) কেড়ে নেয় তাদের জীবন। আরও পাঁচজন আহত হয়েছেন। আহতদের তিনজন ঢামেকের ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ফিরে গেছেন। এ ঘটনায় অ্যাম্বুলেন্সের চালকের সহকারী সোহেল শাহবাগ থানায় আটক রয়েছেন। ঘটনার পর থেকে চালক সোহাগ, অ্যাম্বুলেন্সের মালিক নাসির ও মাহফুজ পলাতক। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মিজানুর রহমান জানান, হাসপাতালের আশপাশে কোনো অ্যাম্বুলেন্সের স্ট্যান্ড থাকবে না। সব পরিষ্কার করা হবে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ঢামেক সূত্র জানায়, গতকাল সকালে চালক সোহাগ সহকারী সোহেলকে চানখারপুল থেকে অ্যাম্বুলেন্সটি ঢামেকের জরুরি বিভাগের সামনে নিয়ে যেতে বলেন। সোহেল অ্যাম্বুলেন্সটি নিয়ে দ্রুতগতিতে চালিয়ে জরুরি বিভাগে যাচ্ছিল। এ সময় জরুরি বিভাগের গেটে চাপা পড়ে অজ্ঞাত এক ভিক্ষুক ও সাকিব নামের সাত বছরের এক শিশু ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এতে আহত হয় ছয়জন। আহত সাকিবের মা গুলেনুর বেগম বেলা পৌনে ৩টায় এবং আমেনা বেগম সূর্যি সন্ধ্যায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। অন্য আহতরা হলেন— আমেনা বেগম সূর্যির ছেলে সজিব, রমজান আলী, সাকিবের ছোট ভাই আকাশ, বাচ্চু মিয়া ও রিকশাচালক মাহতাব। এদের মধ্যে আকাশ, বাচ্চু মিয়া ও মাহতাব প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে গেছেন। অ্যাম্বুলেন্সের ধাক্কায় মারাত্মক জখমপ্রাপ্ত হয়ে আমেনা বেগম সূর্যির গর্ভের ছয় মাসের অনাগত সন্তান মারা যায়। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ক্যাজুয়ালটিতে অপারেশনের মাধ্যমে সেই মৃত সন্তান বের করেন চিকিৎসকরা। হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মো. আশরাফ উদ্দিন খান বলেন, সূর্যির পেটের ছয় মাসের সন্তানটি এ দুর্ঘটনার কারণেই মারা গেছে। জানা গেছে, সূর্যির স্বামী জাকির হোসেন একজন ট্রাকচালক। গত ২৫ আগস্ট চট্টগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার দুই দিন পরই ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন তিনি। মৃত গুলেনুর বেগমের স্বামী ফেরদৌস জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর রাঙাবালির বাইজদা এলাকায়। দুই দিন আগে তাদের গ্রামের বাড়িতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাত পেয়ে আহত হয় তার ছেলে সাকিব। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য শুক্রবার সপরিবারে পুরান ঢাকার সূত্রাপুরে শ্যালক ফারুকের বাসায় উঠেছিলেন তারা। সকালে ঢামেক হাসপাতালে এলে তার স্ত্রী গুলেনুর ও ছেলে সাকিবকে চাপা দেয় অ্যাম্বুলেন্সটি। ঘটনাস্থলেই সাকিবের মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গুলেনুরের মৃত্যু হয়। তাদের আরেক সন্তান আকাশও আহত হয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। জানতে চাইলে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. খাজা আবদুল গফুর বলেন, দুর্ঘটনার পরই পুলিশ একজনকে ধরে নিয়ে গেছে। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে আমরা রবিবার আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।

সর্বশেষ খবর