চীনা প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফর ও অবকাঠামো খাতের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সম্পাদিত চুক্তির মূল্যায়নে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, এটা বাংলাদেশের বেলায় বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটা নতুন সংযোজন। এতে যেমন বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে তেমন দেশের অবকাঠামো খাতে ব্যাপক একটা পরিবর্তন আসবে। তবে এসব বিনিয়োগ বা ঋণসহায়তার ফলাফল পেতে বেশ সময় লাগবে। কেননা, যেসব প্রকল্পে চীন বিনিয়োগ করবে বা ঋণ দেবে সেগুলোর প্রতিটিই দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প। ফলে চীনা বিনিয়োগের ফল পেতে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে আরও বলেন, চীনের এসব বিনিয়োগ অবশ্য কোনো ম্যাজিক বুলেট নয় যে বাংলাদেশ রাতারাতি বদলে যাবে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ যে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পথে এগোচ্ছে সে ক্ষেত্রে চীনের এ বিনিয়োগ খুব একটা কাজে আসবে না। কারণ ২০২১ সাল আসতে বাকি আছে মাত্র পাঁচ বছর। আর চীন যেসব প্রকল্পে বিনিয়োগ বা অর্থায়ন করবে বা ঋণ দেবে সেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে আরও অনেক সময়ের ব্যাপার। তবে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অবশ্যই চীনা প্রেসিডেন্টের এ সফর একটা নতুন মাত্রা যোগ করবে। এতে আরও অনেক দেশের আগ্রহের জায়গা তৈরি হবে। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর বিষয়ে শি জিনপিংয়ের এ সফর কোনো কাজে আসবে কিনা— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রেসিডেন্টের সফর, ঋণ ও সমঝোতা স্মারক চুক্তি এক বিষয় আর বাণিজ্য ঘাটতি অন্য বিষয়। কেননা চুক্তির বেশির ভাগই অবকাঠামো খাতের। ফলে এখানে বাণিজ্য ঘাটতির বিষয়টা তেমন বিবেচ্য হবে না। কিন্তু চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর জন্য সরকারের উচিত হবে সেখানে রপ্তানি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া। এ ক্ষেত্রে চীন যদি এখানে কোনো শিল্প-কারখানা স্থাপন করে এবং সে কারখানায় উৎপাদিত পণ্য তাদের দেশে রপ্তানি করা যায় তাহলে সে ঘাটতি কমে আসবে। পাশাপাশি দক্ষিণ ও পশ্চিম চীনে বাংলাদেশের তৈরি ওষুধের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। গুণগত মান ঠিক রেখে তাদের বাজারে ওষুধ রপ্তানি করা যায় কিনা তা ভাবতে পারে সরকার। এতেও বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা কমবে। তিনি আরও বলেন, চীন বাংলাদেশের বাঁশখালীতে একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ঋণ দিতে চায়। অবশ্য বাঁশখালীতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জমি অধিগ্রহণ নিয়ে বেশ জটিলতা রয়েছে। ফলে এ প্রকল্প কবে নাগাদ বাস্তবায়ন করা যাবে তাও ভাবার বিষয়। তবে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণে চীন যে আর্থিক এবং কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে তা বেশ তাত্পর্যপূর্ণ। এখানে অবশ্য শুধু যে বাংলাদেশই লাভবান হবে তা নয়, চীনও লাভবান হবে। কেননা সরাসরি বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই। কর্ণফুলী টানেল হলে তাদেরও এ পথে যোগাযোগের একটা সুযোগ সৃষ্টি হবে। তবে এখানে আমাদের চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। নতুন যেসব গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ চলছে বা পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার, সেগুলোও দ্রুততার সঙ্গে করতে হবে।