শিরোনাম
সোমবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

এবার ভোটারদের আগ্রহ একটু বেশি

ফরিদা ইয়াসমিন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে

এবার ভোটারদের আগ্রহ একটু বেশি

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে এবার জল্পনা-কল্পনা একটু বেশিই হচ্ছে। বরাবরই সাধারণ আমেরিকানরা নির্বাচন নিয়ে উদাসীন। কিন্তু এবারের ভোটের লড়াই সাধারণ মানুষকেও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে। যারা ভোটদানে বরাবরের মতোই অনাগ্রহী তাদের অনেকেই ভোট দিতে যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। চার বছর আগের নির্বাচনে ৯ কোটি ২০ লাখ আমেরিকান ভোট দেননি। বিশ্লেষকদের মতে, দেশটির কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অগ্রহণযোগ্যতা মানুষকে এবার ভোটদানে আকৃষ্ট করবে। কিছুদিন আগে এক নির্বাচনী প্রচারণায় ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা বলেন, নির্বাচন শুধু কারা ভোট দেবেন তাদের জন্য নয়, যারা ভোট দিচ্ছেন না, তারাও গুরুত্বপূর্ণ। মিশেল সতর্ক করে দিয়ে বলেন, আপনি যদি হিলারি ছাড়া অন্য কাউকে ভোট দেন বা আপনি আদৌ ভোট না দেন তাহলে আপনি হিলারির প্রতিদ্বন্দ্বীকে নির্বাচিত করতে সহায়তা করবেন। নিউ হ্যাম্পশায়ারে যুক্তরাষ্ট্রের সময় অনুযায়ী বৃহস্পতিবার ৩০ মিনিটের বক্তব্যে মিশেল ওবামা বিশেষ করে নারীদের ব্যাপারে ট্রাম্পের বিভিন্ন বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘একটা সময় ছিল আমাদের মা, নানি, দাদিরা তাদের পারিপার্শ্বিকতা পরিবর্তন করতে পারতেন না, কিন্তু বর্তমানে নারীরা অনেক শক্তিশালী। তারা তাদের শক্তিমত্তার পরিচয় দিতে পারেন এই নির্বাচনে। আমাদের জ্ঞান রয়েছে, আমাদের পছন্দ রয়েছে। আর আমাদের একটি করে ভোট রয়েছে।’ মিশেল ওবামার ভাষণ সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে, বিশেষ করে নারীদের মধ্যে। আমেরিকায় মিশেল ওবামা অন্যতম জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। গ্যালাপ জরিপ অনুযায়ী দেশের ৬৪ ভাগ মানুষ তাকে পছন্দ করেন। মাত্র তিন সপ্তাহ পরই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা ক্রমাগত কমছে। ট্রাম্প তার জনপ্রিয়তা হারাচ্ছেন স্বাধীন ভোটার, মডারেট রিপাবলিকান ও নারীদের মাঝে। নিউ হ্যাম্পশায়ারে মিশেলের বক্তৃতায় উঠে এসেছে ট্রাম্পের প্রতি ক্ষোভ ও ঘৃণা। নারীদের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের বক্তব্যকে নারীদের জন্য অসম্মানজনক উল্লেখ করে মিশেল বলেন, ‘একজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মুখ থেকে এমন কথা লজ্জাজনক। তিনি এমন কথা বলেছেন যা আমার অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে দিয়েছে। যা চিন্তারও অতীত। আমাদের একযোগে তার প্রতিবাদ করা উচিত।’ ট্রাম্পের একটি টেপ প্রকাশ করা হয়েছে যেখানে তাকে বলতে শোনা গেছে, ‘চাইলেই পাওয়া যায় সব নারীকে, শুধু সাহস করে এগিয়ে যেতে হয়।’ নির্বাচনের মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে প্রকাশিত এই টেপ ট্রাম্পকে বেকায়দায় ফেলেছে। মিশেল ট্রাম্পের সমালোচনা করতে গিয়ে বলেন, ‘নারীদের হয়রানি করা, জোর করে চুম্বন করাকে যিনি পৌরুষ বলে দাবি করেন তার আচরণগত সমস্যা রয়েছে। আপনি ডেমোক্রেট বা রিপাবলিকান কোনো নারীর সঙ্গে এমন আচরণ করতে পারেন না।’ মিশেল বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে এসব পুরুষকে ঘৃণা করি যারা বিশ্বাস করে চাইলেই নারীর শরীর পাওয়া যায়। এটা কোনো সভ্য মানুষের চিন্তা হতে পারে না। আর যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে চায় তার ভাবনা তো কোনোভাবে এমন হতে পারে না।’ এদিকে রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতার দৌড় থেকে সিটকে পড়া জেব বুশ ইতিমধ্যে বলেছেন, তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দেবেন না, তৃতীয় কোনো প্রার্থীকে ভোট দেবেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ও ২০১২ সালের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মিট রমনি বলেছেন, তারা ট্রাম্পকে ভোট দেবেন না। ট্রাম্পের মানসিক স্থিতি নিয়েও অনেক সিনিয়র রিপাবলিকান নেতা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এ পর্যন্ত ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকজন নারী হয়রানির অভিযোগ এনেছেন, এ সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসে দুজন নারী সাক্ষাৎকার দেওয়ায় ট্রাম্প পত্রিকাটির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক হাফিংটন পোস্টের জরিপে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন হিলারি। যদিও হিলারিকে নিয়েও ভোটারদের মনে যথেষ্ট উদ্বেগ রয়েছে। তার সততা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। এর ফলে লিবারটারিয়ান দলের প্রার্থী গ্যারি জনসনের সমর্থন কিছুটা বেড়েছে। সব মিলিয়ে এবারে মার্কিন ভোটাররা যে যথেষ্ট চিন্তাভাবনা করছেন তা স্পষ্টতই বোঝা যায়। ১৯৬০ সালে জন এফ কেনেডির নির্বাচনের পর কয়েক দশক ধরে ভোটার উপস্থিতি ছিল কম। তবে ২০০৮ সালে ভোটার উপস্থিতি বেড়ে দাঁড়ায় ৬১ দশমিক ৬ শতাংশে। সেবার ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের সিনেটর বারাক ওবামা দেশের প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এবারের নির্বাচন একটি ব্যতিক্রমধর্মী নির্বাচন। এবারই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে একজন নারী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হয়েছেন। ভোটার ও নন-ভোটারদের নিয়ে গবেষণা করে এমন একটি প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টার। তাদের সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি ১০ জনের ৮ জনেরও বেশি বলেছেন, প্রার্থীরা কী বলছেন তারা তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। ৪ জনের ১ জন বলেছেন, এবারে কে জিতবেন এটা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ২৫ বছরের মধ্যে এবারই ভোটারদের মধ্যে বেশি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। এদিকে সাম্প্রতিক জরিপগুলোয় হিলারির ক্রমাগত এগিয়ে থাকার বিষয় পর্যালোচনায় নিয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের বিজয় সুদূরপরাহত।

সর্বশেষ খবর