মঙ্গলবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

জঙ্গি ছিনতাইয়ে ফের ভয়ঙ্কর ছক

ব্লগার নাজিম জুলহাজ হত্যায় আনসার ইসলাম

নিজস্ব প্রতিবেদক

কারাবন্দী জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে তত্পরতা চালাচ্ছে আনসার আল ইসলাম সদস্যরা। জামিনে মুক্ত করতে ব্যর্থ হলে ময়মনসিংহের ত্রিশালের মতো প্রিজন ভ্যান থেকে আসামি ছিনতাইয়ের মতো দুর্ধর্ষ পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। আনসার আল ইসলামের কারাবন্দী আধ্যাত্মিক নেতা জসীম উদ্দীন রাহমানির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভয়ঙ্কর এসব কর্মকাণ্ডের সমন্বয়কের দায়িত্ব পেয়েছেন সালাউদ্দীন সালেহীন। গত রবিবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে ব্লগার নাজিম উদ্দীন সামাদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার আনসার আল ইসলামের সক্রিয় সদস্য রশিদুন নবী ভূইয়া ওরফে টিপু ওরফে রাসেল ওরফে রফিক ওরফে রায়হানের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই তথ্য জানান সংশ্লিষ্টরা। রশিদুন নবীকে গ্রেফতারের পর গতকাল দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ব্লগার ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাজিমউদ্দিন সামাদ হত্যাকাণ্ডের তিন মাস আগে পরিকল্পনা হয়। ওই হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া পাঁচজনের নেতৃত্বে ছিলেন গ্রেফতার রশিদুন নবী। আদালত প্রতিবেদক জানান, দুপুরে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক তাজুল ইসলাম আসামিকে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম মারুফ হোসেন আসামি রশিদুন নবীকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন। শুনানির সময় হাকিম আসামির কাছে মূল ঘটনা জানতে চান। তখন কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে রশিদুন নবী বলেন, স্যার আমার ভুল হয়ে গেছে। আমরা এই ঘটনা (হত্যাকাণ্ড) ঘটিয়েছি, বুঝতে পারিনি। আমাদের ক্ষমা করে দেবেন। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একের পর এক অভিযানে জঙ্গিরা কোণঠাসা হয়েছে ধারণা করা হলেও ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, বগুড়াসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় এখনো আগের মতোই সংগঠিত তারা। গত ৬ এপ্রিল রাতে পুরান ঢাকার সূত্রাপুর থানাধীন একরামপুর মোড়ে ঋষিকেশ দাশ রোডে নাজিমউদ্দিনকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের স্নাতকোত্তরের ছাত্র ছিলেন। সিলেট গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ছিলেন তিনি।

মনিরুল বলেন, গত রবিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সিটি ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যৌথ অভিযানে গ্রেফতার হয় নবী। হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া পাঁচজনের সবার হাতেই ছিল চাপাতি। একজনের কাছে একটি আগ্নেয়াস্ত্রও ছিল। নবীসহ দুজন চাপাতি দিয়ে নাজিমউদ্দিনকে কোপান। সংশ্লিষ্টরা জানান, নাজিমউদ্দিনকে হত্যার তিন মাস আগে পরিকল্পনা করে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম। হত্যার কয়েকদিন আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনে বাসা ভাড়া নেয় জঙ্গিরা। এরপর তারা সামাদের যাওয়া-আসার পথে কয়েকদিন তাকে অনুসরণ করে। নাজিমউদ্দিন মেসে থাকতেন। তাই মেসে গিয়ে তাকে হত্যা করা সম্ভব নয় বলে মনে করে জঙ্গিরা। এ কারণে বাসায় আসা-যাওয়ার পথে নাজিমউদ্দিনকে হত্যার পরিকল্পনা করে তারা। এরপর গত ৬ এপ্রিল রাতে রশিদুন নবীর নেতৃত্বে নাজিমউদ্দিনকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে।

অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, নাজিমউদ্দিনকে হত্যা করা ছাড়াও প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুল হত্যাচেষ্টা ও জুলহাজ মান্নান-মাহবুব তনয় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেও রশিদুন নবী জড়িত ছিল বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে। রশিদুন নবী ২০১৫ সালে আনসার আল ইসলামে যোগ দেয়। এর পর থেকে ঢাকা অঞ্চলের অনেক সদস্যকে দাওয়াতের মাধ্যমে সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করে। দাওয়াতি কাজের পাশাপাশি সে টিমের অপারেশন শাখার দায়িত্ব পালন করত। তার বাবার নাম আবদুল বারী ভূইয়া। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার নাঙ্গলকোট। সূত্র আরও বলছে, জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) এক সময়কার ভয়ঙ্কর জঙ্গি জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজান, জামাই ফারুক, কারাবন্দী তাসনিমসহ শীর্ষ অনেক জেএমবি সদস্য আনসার আল ইসলামে যোগ দেয়। এরা বর্তমানে কারাবন্দী জসীম উদ্দীন রাহমানীকেই আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে মনে করে। পলাতক সালাউদ্দীন সালেহীনও এক সময় জেএমবির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। সরকার আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পর আনসার আল ইসলাম নামের নতুন আরেকটি সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবিটি। এই সিদ্ধান্ত আসে কারাবন্দী জসীম উদ্দীন রাহমানির কাছ থেকে।

 

সর্বশেষ খবর