বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

গঠনতন্ত্রে আসছে চমক

থাকবে ভিশন ২০২১ ও ২০৪১

নিজস্ব প্রতিবেদক

গঠনতন্ত্রে আসছে চমক

আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে দলের নেতা-কর্মীদের জন্য থাকছে সাংগঠনিক কর্মপরিকল্পনা ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকনির্দেশনা। দেশবাসীর জন্য থাকবে ভিশন ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগ কী কী করতে চায় এর রোডম্যাপ। জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের অর্জন এবং একাদশ নির্বাচন সামনে রেখে কর্মসূচি ও পরিকল্পনাবিষয়ক বেশ কিছু নতুন সংযোজন। থাকছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার না রাখা, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা, ব্লু ইকোনমি, পররাষ্ট্রনীতি এবং যুদ্ধ নয় শান্তির বার্তা। দলীয় রাজনীতির লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কর্মকৌশল নির্ধারণে উন্নয়নমুখী রাজনীতিতে এবারের কাউন্সিলে আওয়ামী লীগ ৪৬ পৃষ্ঠার ঘোষণাপত্র প্রস্তুত করেছে। প্রথম অধ্যায়ে বাংলাদেশ ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দলের বিভিন্ন ভূমিকা, দ্বিতীয়  অধ্যায়ে ঘোষণা ও কর্মসূচিতে নির্বাচনী ইশতেহারের আদলে আওয়ামী লীগের উন্নয়ন দর্শন, তৃতীয় অধ্যায়ে উন্নয়ন ও সুশাসনের সাত অগ্রাধিকার—যেখানে রয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও আইসিটি, বেসরকারি খাত ও বাজারব্যবস্থা সম্প্রসারণের মতো বিষয়গুলো। চতুর্থ অধ্যায়ে খাতওয়ারি চলমান অগ্রযাত্রা শিরোনামে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের কথা। গঠনতন্ত্রেও আনা হয়েছে বেশ কিছু সংশোধনী। এতে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির আকার ৭৩ থেকে বাড়িয়ে ৮১ করা, জেলা কমিটি ৭৫, উপজেলা ৭১, ইউনিয়ন ৬৯ ও ওয়ার্ড কমিটি ৫৫ করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলের মনোনয়ন প্রক্রিয়া ও বোর্ড গঠন, যুদ্ধাপরাধীর সন্তানরা আওয়ামী লীগের সদস্য হতে পারবেন না ইত্যাদিসহ বেশ কিছু সংশোধনী। আর ঘোষণাপত্রের অঙ্গীকারনামায় থাকবে সংসদীয় গণতন্ত্রের সুস্থ বিকাশ, প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান, জনগণের পছন্দমতো ভোটাধিকার প্রয়োগের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ।

গঠনতন্ত্রের যেসব উল্লেখযোগ্য সংশোধনী : এবারের সম্মেলনে বেশ কিছু সংশোধনী আনা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির আকার ৭৩ থেকে বাড়িয়ে ৮১ করা। এতে প্রেসিডিয়াম সদস্য ১৫ থেকে বাড়িয়ে ১৯, যুগ্ম সম্পাদক ৩ থেকে বাড়িয়ে ৪ জন, সাংগঠনিক সম্পাদক ৭ থেকে বাড়িয়ে ৮ এবং সদস্য পদে দুটি পদ বাড়ানো হয়েছে। এদিকে যুদ্ধাপরাধী এবং ১৫ আগস্টের খুনিদের উত্তরাধিকারীরা কেউ আওয়ামী লীগের কোনো পর্যায়ের সদস্য হতে পারবে না মর্মে একটি ধারা খসড়া গঠনতন্ত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে গঠনতন্ত্রের ২৭ নম্বর ধারায় একটি উপধারা সংযোজন করা হচ্ছে। এখানে স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই বোর্ড হবে ১৯ সদস্যবিশিষ্ট। আর ৪৬-এর ঠ ধারায় জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে স্থানীয় সরকার নির্বাচন শব্দটি যোগ করা হচ্ছে। বর্তমান গঠনতন্ত্রের ৫-এর ৩ ধারায় সদস্য পদের মেয়াদ বৈশাখ থেকে চৈত্র মাসের পরিবর্তে জানুয়ারি-ডিসেম্বর মাস করার সিদ্ধান্ত খসড়া গঠনতন্ত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। দলের প্রাথমিক সদস্য, কাউন্সিলর, এমপি ও মন্ত্রীদের চাঁদার বিধানসংবলিত ধারাগুলোয় চাঁদা বাড়ানোর বিষয়টি উল্লেখ থাকবে। গঠনতন্ত্রে ৪৭ ধারায় কাউন্সিলরদের ১০০ টাকার পরিবর্তে ২০০ টাকা, ৪৮ ধারায় প্রাথমিক সদস্যদের চাঁদা আগে ১০ টাকার পরিবর্তে ২০ টাকা নির্ধারণ করা হচ্ছে। ২৮-এর ঙ ধারায় বর্ণিত এমপিদের ৫০০ টাকার স্থলে চাঁদা ২০০০ টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে। আর ৪৯ ধারায় বর্তমান সদস্যদের চাঁদার টাকা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের যৌথ স্বাক্ষরে ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা এবং ত্রিবার্ষিক কাউন্সিলের আগে অডিট করে তা সম্মেলনে জমা দেওয়ার পরিবর্তে প্রতিবছর ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে এনবিআরে ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল এবং নির্বাচন কমিশনে জমা ও খরচ দাখিলের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমান গঠনতন্ত্রের ৫০ ধারায় বর্ণিত ‘নির্বাচন পরিচালনা কমিশন’ শব্দের স্থলে এখন থেকে ‘কাউন্সিল অধিবেশন নির্বাচন পরিচালনা কমিশন’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।

ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প নয়, ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্প : ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের বিরুদ্ধে ঘোষণা থাকছে আওয়ামী লীগের ঘোষণাপত্রে। এতে বলা হচ্ছে, ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প নয়, ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্প চালু করা হবে, যার মাধ্যমে দূর করা সম্ভব হবে হতদরিদ্র।

ব্লু ইকোনমি-সমুদ্রসম্পদভিত্তিক উন্নয়ন : আওয়ামী লীগের উন্নয়ন দর্শনে এবার নতুন যুক্ত হয়েছে ব্লু ইকোনমি। ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, ‘শেখ হাসিনার কূটনৈতিক সাফল্যের সুবর্ণ ফসল মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমার শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি। এর ফলে মিয়ানমারের সঙ্গে বঙ্গোপসাগরের ২০০ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে সমুদয় অর্থনৈতিক অঞ্চল ও এর বাইরে মহাদেশীয় বেষ্টনী এবং একইভাবে ভারতের সঙ্গে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহাদেশীয় বেষ্টনীর মধ্যে সব ধরনের সম্পদের ওপর বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সমুদ্র খাত, যা ব্লু ইকোনমি নামে অভিহিত, বাংলাদেশের উন্নয়নে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন : দেশের উন্নয়নের চাকায় নতুন গতি সঞ্চারের জন্য বড় ধরনের বিনিয়োগ প্রকল্পের প্রয়োজন হয়। অর্থনীতির ভাষায় যাকে ‘সজোরে ধাক্কা’ (বিগ পুশ) বলা হয়। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে ১০টি অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত করা হয়েছে। এগুলো হলো—স্বপ্নের পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকা দ্রুত গণপরিবহন, এলএনজি ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট, মাতারবাড়ী ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা সমুদ্রবন্দর, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ এবং চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২৯.৫ কিমি রেললাইন স্থাপন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিরুদ্ধে জনমত গঠন : তত্ত্বাবধায়ক সরকার না রাখার বিষয়টিকেও এবার বেশ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে দলের ঘোষণাপত্রে। এ ক্ষেত্রে ভিন্ন কোনো দল সরকার গঠন করলেও যাতে ‘তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা’ ফিরতে না পারে, সে জন্য জনমত গঠন করা হবে। পাশাপাশি নির্বাচিত সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের ধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা থাকছে।

পশ্চিমে উন্নয়ন সহযোগিতা ও চীন-রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক : ঘোষণাপত্রের শেষ দিকে পররাষ্ট্রনীতি অংশে বলা হয়েছে, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, কানাডাসহ উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগিতার সম্পর্ক জোরদার এবং তা ব্যাপকভাবে বিস্তৃত করা হবে। সুদৃঢ় করা হবে রাশিয়া, চীন এবং আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।

শেখ হাসিনার দুটি শান্তির মডেল আওয়ামী লীগের দর্শন : ২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ‘বিশ্বশান্তি, জনগণের ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নের মডেল’ শীর্ষক ধারণা এবং দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়েছে। এই মডেল জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর সব সদস্য রাষ্ট্র সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন করে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর