শুক্রবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

আলোচনার শীর্ষে কাদের

দিনভর নেতা-কর্মীদের অভিনন্দনে সিক্ত ওবায়দুল কাদের । গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবর্তনের আভাস

রফিকুল ইসলাম রনি

আলোচনার শীর্ষে কাদের

সম্মেলনকে ঘিরে জমকালো আয়োজন সারা দেশে। সার্বিক প্রস্তুতিও শেষ পর্যায়ে। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তৈরি করা হয়েছে নৌকার আদলে দৃষ্টিনন্দন স্টেজ —রোহেত রাজীব

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের এক দিন বাকি থাকলেও দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ সাধারণ সম্পাদকে পরিবর্তনের আভাস পাওয়া গেছে। দলের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন প্রেসিডিয়াম সদস্য সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বুধবার রাতেই নতুন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তার নাম দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগের কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার রাতে গণভবনে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক শেষে ওবায়দুল কাদেরকে ডেকে নিয়ে তাকে পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর ইঙ্গিতের বিষয়টি ওবায়দুল কাদের দলের অন্য দু-এক জন সহকর্মীর কাছে স্বীকার করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট নেতারা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন।

এ ছাড়া গতকাল আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির কার্যালয়ে দলের সিনিয়র নেতারাও তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। সারা দেশে কাউন্সিলরদেরও এমন বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তবে কেবল সাধারণ সম্পাদকই নয়, আরও গুরুত্বপূর্ণ   পদেও আসছে পরিবর্তন। সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তনের আভাসের মাধ্যমে এমন বার্তা বলে মনে করেন দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতারা।

বুধবার রাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক করার সবুজ সংকেত পাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে নেতা-কর্মীদের মধ্যে শুরু হয়েছে উল্লাস। আগেভাগেই মিষ্টি বিতরণও হয় নিজেদের মধ্যে। তবে ওবায়দুল কাদের এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে কিছু জানাননি। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জানান, ওবায়দুল কাদের মাঠের রাজনীতিক। তিনি সারা দেশের নেতা-কর্মীদের কাছে জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য নেতা। একজন নেতা বলেন, ওবায়দুল কাদের কর্মীবান্ধব। তিনি মাঠের কর্মীদের খোঁজখবর নেন। তাদের বিপদে আপদে ছুটে যান।

গতকাল ধানমন্ডির কার্যালয় ও  সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনস্থলে ওবায়দুল কাদেরকে ঘিরে নেতা-কর্মীদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো।  সকাল ৯টার আগেই ধানমন্ডির কার্যালয়ে আসেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে সম্মেলন বিষয়ে আলাপ-আলোচনায় ব্যস্ত ছিলেন তিনি। জেলা নেতাসহ বিভিন্ন জায়গায় কয়েক দফা ফোনেও কথা বলেন। বেলা সাড়ে ১১টায় তিনি নেতা-কর্মীদের নিয়ে বের হয়ে যান দলীয় কার্যালয়ের পাশেই প্রিয়াঙ্কা কমিউনিটি সেন্টারে। সেখানে পরিদর্শন করেন কাউন্সিলরদের কার্ড ও গেঞ্জি বিতরণের স্থান। এ সময় দলীয় কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায়। ওবায়দুল কাদেরও ছিলেন বেশ ফুরফুরে মেজাজে।

দুপুর ১২টার দিকে ধানমন্ডির কার্যালয়ে প্রবেশ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগনে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। সেখানে তিনি ওবায়দুল কাদেরকে পেয়ে তাকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘কনগ্রাচুলেশন কাদের, কনগ্রাচুলেশন’। এ সময় খোজ মেজাজে থাকা ওবায়দুল কাদের আসন থেকে দাঁড়িয়ে ‘লিডার লিডার’ বলে করমর্দন এবং কোলাকুলি করেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, বীর বাহাদুর, বি এম মোজাম্মেল হক, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুর রহমান, এস এম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছার, আওয়ামী লীগের উপকমিটির সহ-সম্পাদক শফি আহমেদ, লিয়াকত শিকদার, মাহমুদ হাসান রিপন প্রমুখ। এর কিছুক্ষণ পরই দলীয় কার্যালয়ে এসে দফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী আবদুস সোবহান গোলাপ ঘোষণা দেন— ‘ওবায়দুল কাদের ভাই ‘সেক্রেটারি’, জেলার কাউন্সিলরদের বলে দাও’। গোলাপের এমন ঘোষণার তথ্য জানিয়েছেন উপস্থিত একাধিক নেতা। তখন দৃশ্যপট পাল্টে যেতে শুরু করে।

দুপুর পৌনে ১টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনস্থলে মঞ্চ ও প্যান্ডেল প্রস্তুতির কার্যক্রম পরিদর্শন করতে আসেন ওবায়দুল কাদের। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘নেত্রীর প্রতি আমাদের বিশ্বাস, আস্থা আছে। তিনি আমাদের যে পদে দায়িত্ব দেবেন, সেখানেই আমরা কাজ করব। তবে কে কোন পদে আসছেন তা জানার জন্য ২৩ তারিখ বিকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম, এনামুল হক শামীম, সাইফুজ্জামান শিখরসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর একজন সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যে গুঞ্জন উঠেছে তার সত্যতা আছে বলে মনে হয়।’ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বললে তারাও এর সত্যতা নিশ্চিত করেন। তবে সবাই বলছেন, বিষয়টি দলীয় সভানেত্রীর একান্ত সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। তাই ২৩ অক্টোবর সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

গুরুত্বপূর্ণ পদেও আসছে ব্যাপক পরিবর্তন : আওয়ামী লীগের সম্মেলনে নেতৃত্বের ব্যাপক পরিবর্তন আসছে বলে আভাস পাওয়া গেছে দলের শীর্ষ নেতাদের কথায়। প্রেসিডিয়াম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ সদস্য পদে আসছে ব্যাপক পরিবর্তন। এসব পদে যারা দায়িত্বে রয়েছেন, তাদের অধিকাংশকেই বাদ দিয়ে নতুনদের দায়িত্ব দেওয়ার চিন্তাভাবনা হচ্ছে। তবে বেশির ভাগ পরিবর্তন আসতে পারে সম্পাদকীয় পদগুলোয়। সূত্র জানায়, তৃণমূলে সংগঠন শক্তিশালী করতে না পারা, ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচনে বিতর্কিতদের অনৈতিক সুবিধা নিয়ে মনোনয়নসহ বিভিন্ন অভিযোগের কারণে শেখ হাসিনা এদের বাদ দিয়ে কার্যনির্বাহী সংসদে পরিবর্তন আনার কথা ভাবছেন। হাইব্রিড, বিতর্কিত, জামায়াতকে দলে ভেড়ানো নেতা, পদপদবি বিক্রি করে টাকার কুমির হয়েছেন, নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারকারী— এমন নেতাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে দেখতে চান না তৃণমূলের কর্মীরা। তারা চান ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন। নতুন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে গুরুত্ব দেওয়াসহ যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তোলার জন্যই বিতর্কিত ও অদক্ষদের বাদ দেওয়া হচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর