রবিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

এবার অপেক্ষা নতুন নেতৃত্বের

রফিকুল ইসলাম রনি

এবার অপেক্ষা নতুন নেতৃত্বের

সম্মেলনে হাত নাড়ছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, পাশে সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, ওবায়দুল কাদের

আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের প্রথম পর্ব শেষ হওয়ায় নতুন নেতৃত্বের প্রতি এখন সবার আগ্রহ। আগামী তিন বছরের জন্য কারা থাকছেন দলটির নতুন কমিটিতে, তা জানার অপেক্ষায় আছেন সবাই।

আজ সকালে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সম্মেলনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্ব কাউন্সিল অধিবেশন বসবে। এ অধিবেশনেই কাউন্সিলররা তাদের নতুন নেতা নির্বাচন করবেন।

টানা অষ্টমবারের মতো সভানেত্রী পদে নিশ্চিতভাবে নির্বাচিত হচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তবে সাধারণ সম্পাদক পদে আসছে নতুন মুখ। এ পদে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। প্রথাগতভাবে কাউন্সিলররা দলীয় সভানেত্রীকে নতুন নেতা নির্বাচনের ক্ষমতা অর্পণ করেন। সুতরাং দলের সাধারণ সম্পাদকসহ নেতৃত্বে কারা আসবেন, তা তিনিই চূড়ান্ত করবেন।

সভানেত্রী ও সাধারণ সম্পাদক পদ ছাড়াও প্রেসিডিয়াম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ সম্পাদকীয় পদে কারা আসছেন, তা জানার আগ্রহেরও কমতি নেই আওয়ামী লীগসহ সংশ্লিষ্ট সবার। বিগত দুটি সম্মেলনে নেতৃত্বে তেমন কোনো পরিবর্তন না এলেও এবার ব্যাপক রদবদল হবে বলে দলে আলোচনা আছে।

এবারের নেতৃত্বে চমক থাকে কিনা, তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন দলের নেতা-কর্মীরা। বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ব্যবসায়ী সমাজের প্রতিনিধিরাও তাকিয়ে আছেন আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্বের দিকে। তাকিয়ে আছেন বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরাও।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহে দলের জাতীয় কমিটির এক বৈঠকে দলীয় সভানেত্রী কমিটিতে ব্যাপক পরিবর্তনের আভাস দেন। তিনি এখনই ‘চারা রোপণের’ সেরা সময় বলেও মন্তব্য করেন। কাজেই এবার নেতৃত্বে বড় ধরনের চমক যে থাকছে তা বলা যায়। জানা গেছে, শীর্ষ দুই পদের বিষয় আজকের কাউন্সিল অধিবেশনে চূড়ান্ত হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে কারা আসছেন, তা জানতে দু-এক দিন সময় লাগতে পারে। তবে গত শুক্রবার রাতে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, আজ শীর্ষ পদে, সম্ভব হলে পূর্ণাঙ্গ কমিটিই ঘোষণা করা হবে। অথবা দু-এক দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে।

সূত্রমতে, দলকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যেতে নতুন অপেক্ষাকৃত তরুণ ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতৃত্ব রাখার চিন্তাভাবনা করছেন দলীয় সভানেত্রী। কেন্দ্রীয় কমিটিতে কাদের সরিয়ে দেওয়া হবে, আর কাদের নিয়ে আসা হবে তার খসড়া করেছেন তিনি। কমিটিতে তার সুনজরে থাকা নেতাদের সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া যারা বিতর্কিত ও সাংগঠনিক অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন, তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে না রাখার চিন্তাভাবনা চলছে। নেতৃত্বে কর্মীবান্ধব, দক্ষ সংগঠকদের আনা হচ্ছে বলে দলের সর্বত্র আলোচনা চলছে।

আওয়ামী লীগের সম্মেলন উপলক্ষে তৃণমূলের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী ঢাকায় আসেন কাউন্সিলর ও ডেলিগেট হয়ে। তাদের কাছে সম্মেলনের প্রথম দিন কেমন ছিল— জানতে চাইলে বলেন, ‘আজ শুনতে এসেছি, কাল জানব ও জানাব আগামী দিনের নেতৃত্বে কারা আসছেন।’

সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মিরাজ উদ্দিন বলেন, ‘আজ নয়, সম্মেলনের মূল আকর্ষণ কাল (রবিবার)। সম্মেলনে প্রথম দিন মিলনমেলা ঘটে। আর শেষ দিন সবার মধ্যে আগ্রহ থাকে— কে নেতা হচ্ছেন।’

মৌলভীবাজার জেলা সাধারণ সম্পাদক নেহার আহমদ বলেন, ‘প্রতি তিন বছর পর সম্মেলন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীর মিলনমেলা ঘটে। তখন খুব আনন্দ লাগে। সব কেন্দ্রীয় নেতাকে একসঙ্গে দেখতে পাই। তবে সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন থাকে মূল আকর্ষণ। তখন আওয়ামী লীগের আগামী দিনের নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। এ নিয়ে সবার মধ্যে একটা উত্তেজনা বিরাজ করে।’

এ ছাড়া পটুয়াখালী ও ভোলা জেলার কয়েকজন কাউন্সিলরের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, ‘আজ আমাদের কোনো কাজ ছিল না, শুধু দেখছি। কাল আমরাই ভোট দিয়ে নেতা নির্বাচন করব।’

সিলেট মহানগর ছাত্রলীগ নেতা আফজাল হোসেন তুহিন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর হাত তথা দলকে আরও বেশি শক্তিশালী করতে কমিটিতে তরুণদের প্রাধান্য চাই। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যাদের যোগাযোগ রয়েছে, তাদের নেওয়া হোক কমিটিতে।’

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হক বলেন, ‘নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে একটি যোগ্য কমিটি চাচ্ছি। যে কমিটির নেতারা হবেন কর্মীবান্ধব।’

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের ডেলিগেট আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া ও আবু রায়হান বলেন, ‘এ সম্মেলন ইতিহাসের সবচেয়ে সফল ও সুন্দর সম্মেলন। কেন্দ্রীয় সম্মেলনের মতোই জেলা ও উপজেলায় এ রকম সম্মেলন চাই। মাঠপর্যায়ে কাজ করে আসা এবং তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করেন, এমন নতুন নেতৃত্ব চাই।’

সৈয়দ আশরাফের সঙ্গে শেখ সেলিমের চার দফা কথা : গতকাল সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন চলাকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে মঞ্চে ও নিচে চার দফা কথা বলেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। কী কথা হয়েছে তা জানা না গেলেও সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা হতে পারে, এমনটি জানিয়েছেন কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। এদিকে গতকাল সকাল থেকেই ওবায়দুল কাদেরকে ফুরফুরে মেজাজে থাকতে দেখা গেছে।

সর্বশেষ খবর