রবিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

তালিকা করুন, দারিদ্র্যশূন্য করব দেশ : শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

তালিকা করুন, দারিদ্র্যশূন্য করব দেশ : শেখ হাসিনা

বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির সোপানে নিতে এবং দেশকে দারিদ্র্যশূন্য করতে আগামী দিনের রোডম্যাপ ঘোষণা করলেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার কথায়, আজ দারিদ্র্যমুক্তির পথে যাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশ। এ দারিদ্র্য বলে আর কিছু বাংলাদেশে থাকবে না। গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে দলের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীকে দরিদ্রদের সঠিক তালিকা প্রণয়নের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা স্ব স্ব এলাকায় গিয়ে বের করুন কতজন দুস্থ, হতদরিদ্র, নিঃস্ব-রিক্ত ছিন্নমূল, বয়োবৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও গৃহহারা মানুষ আছে।

আমরা সবাইকে বিনা পয়সায় ঘর করে দেব, ঠিকানা করে দেব, তারা যেন ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারে সেই ব্যবস্থা করে দেব। আপনারা যদি সঠিক তালিকা করতে পারেন, তবে দৃঢ়ভাবে বলতে পারি দেশে আর কোনো দরিদ্র থাকবে না। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ ও ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে সরকারের মহাপরিকল্পনার কথাও সারা দেশ থেকে আসা কাউন্সিলর, ডেলিগেটর, বিদেশি অতিথি, রাজনীতিকসহ দেশবাসীর সামনে তুলে ধরেন।

প্রতিবেশী দেশগুলোসহ বিদেশি অতিথিদের সামনে বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তার সরকারের কঠোর অবস্থানের কথাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার। জিরো টলারেন্স অ্যাগেইনেস্ট টেররিজম। আমরা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদকে কখনই প্রশ্রয় দেব না। এ দেশের ভূখণ্ড কেউ কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করতে পারবে না। প্রতিবেশী দেশে সন্ত্রাসবাদ চালাতে কাউকে আমাদের দেশের মাটি ব্যবহার করতে দেব না।’

সম্মেলনের মূল বক্তৃতায় আগামী দিনের উন্নয়ন পরিকল্পনার রোডম্যাপ ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ। কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষে কোনো বৈষম্য থাকবে না। জলবায়ুর বিরূপ মোকাবিলায় ব্যবস্থা নেব। শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাবে, সবার ঘরে আলো জ্বলবে। দেশে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। অর্থনীতিকে আরও গতিশীল, প্রবৃদ্ধি ৮ ভাগে উন্নীত, ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলব। প্রতিটি সেক্টরে যেন উন্নয়ন হয় সেজন্য ব্যাপক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। মাইক্রো ক্রেডিটের পরিবর্তে মাইক্রো সেভিং করে দারিদ্র্য দূর করতে সফল হচ্ছি। বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে ‘প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের সেতুবন্ধ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনাও জানান তিনি। দলের প্রতিটি নেতা-কর্মীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর অবৈধভাবে মার্শাল ল দিয়ে ক্ষমতা দখলকারীরা আমাকে দেশে ফেরার অনুমতি দেয়নি। প্রায় সাতটি বছর আমাদের দুই বোনকে রিফিউজি হিসেবে কাটাতে হয়েছে। সে সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী তার দেশে আমাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। ‘৮১ সালে আমার অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর তারা শত চেষ্টা করেও আমার দেশে ফেরানো ঠেকাতে পারেনি। আমি গণমানুষের সমর্থনে বাংলাদেশে ফিরে আসি। সেদিন আওয়ামী লীগই আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করে দেশে আসার সুযোগ করে দিয়েছিল। এজন্য সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।

প্রধানমন্ত্রী শোকাবহ ১৫ আগস্টের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলেন, আমরা দুই বোন বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যাই। কিন্তু সব হারানোর ব্যথা-বেদনা যে কী কষ্টের, তা আমরা সব সময় অনুভব করি। তিনি বলেন, দেশে ফেরার পর দলের নেতা-কর্মীসহ দেশবাসীর মধ্যেই আমি ফিরে পেয়েছিলাম আমার বাবা, মা ও ভাইদের। তাদের ভালোবাসা ও স্নেহই আমাকে সাহস জুগিয়েছে, দেশের জন্য কাজ করার উৎসাহ পেয়েছি। তিনি বলেন, আমাদের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা আত্মত্যাগ, শত আঘাত ও শত ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে এই সংগঠনকে ধরে রেখেছে। তারাই এ দলের প্রাণ।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা, ভাষার মর্যাদা, সামরিকতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণ, উন্নয়ন-সমৃদ্ধি দেশের মানুষ যা কিছু পেয়েছে তা আওয়ামী লীগের কাছ থেকেই পেয়েছে। আওয়ামী লীগ জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে বাংলাদেশে সব অর্জন এনে দিয়েছে। আজকের বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতিই হচ্ছে জনগণের জন্য, জনগণের কল্যাণে। আর এ কাজটা করতে পারলে বাংলাদেশ দারিদ্র্যমুক্ত হবে। বাংলাদেশে দারিদ্র্য বলে কিছু থাকবে না। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমরা দেশ চালাচ্ছি। ২০০৮ সালে দেশের মানুষ আমাদের ভোট দেয়, ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পরে দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করেছি, দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছি। তিনি বলেন, ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর দেশে শুরু হয় হত্যা-ক্যুর রাজনীতি। বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন নিয়ে এ দেশকে স্বাধীন করেছিলেন তা ধূলিসাৎ করে দেওয়া হয়। অবৈধ দখলকারীরা গণতন্ত্রের বদলে সামরিকতন্ত্র উপহার দেয়। দেশের মানুষ দীর্ঘ ২১টি বছর হয়েছে শোষিত-বঞ্চিত। ’৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা ফের দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফিরিয়ে আনি। আজ দারিদ্র্যমুক্তির পথে যাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশ। যে শিক্ষা পিতার (বঙ্গবন্ধু) কাছ থেকে পেয়েছি, সেই শিক্ষা নিয়ে দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। ২০৪১ সালে এমন বাংলাদেশ আমরা দেখতে চাই যে দেশে দারিদ্র্য থাকবে না, প্রবৃদ্ধি ৮ ভাগ হবে, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাবে, নারী-পুরুষের কোনো বৈষম্য থাকবে না, দারিদ্র্যের হার শূন্যের কোটায় আসবে, উন্নত-সমৃদ্ধ ও ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ হবে। এমন বাংলাদেশই আমরা গড়ে তুলব। তিনি আওয়ামী লীগকে আরও শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে নেতা-কর্মীদের নিরলসভাবে কাজ করারও আহ্বান জানান।

সর্বশেষ খবর