রবিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

যাননি বিএনপি নেতাদের কেউই

তারা আসে না আমরাও যাই না : গয়েশ্বর

নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনকে স্বাগত জানালেও শেষ পর্যন্ত এতে যোগ দেয়নি বিএনপি। চলতি বছরের ১৯ মার্চ বিএনপির কাউন্সিলে আওয়ামী লীগ যোগ না দিলেও ক্ষমতাসীন দলের এ সম্মেলনে অংশ নেবেন বলে এক দিন আগেও জানিয়েছিলেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। এর আগে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সম্মেলনে যাওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখানোর পরও শেষ মুহূর্তে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। তবে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন অন্য কথা। এ সম্পর্কে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এক দলের সম্মেলনে আরেক দলের যাওয়া-আসার সংস্কৃতি দেশে এখন আর নেই। এটা আরও আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। তারাও (আওয়ামী লীগ) এখন আর আসে না, তাই আমরাও যাই না।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার রাত পর্যন্ত দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের বেশির ভাগই ছিলেন আওয়ামী লীগের সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পক্ষে। গণতান্ত্রিক উদার মনোভাব প্রদর্শনের লক্ষ্যেই তারা ক্ষমতাসীন দলের জাতীয় এ সম্মেলনে যোগ দেবেন বলে উল্লেখ করেছিলেন। একজন ভাইস চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলে দুজন যুগ্ম-মহাসচিবের নামও নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু বাদ সেধেছেন নীতিনির্ধারণী মহলের বেশ কয়েকজন সদস্য। তারা শুক্রবার রাতে দলীয় চেয়ারপারসনের সঙ্গে আলাপকালে ‘না যাওয়ার পক্ষে’ বেশ কিছু যুক্তি তুলে ধরেন। এর পরই সিদ্ধান্ত বদলে যায় বিএনপির। না যাওয়ার পক্ষে প্রধান যুক্তিগুলোর মধ্যে ছিল—১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যোগ দেওয়া দূরের কথা, বরং সে অনুষ্ঠানকে ‘বানচাল’ করার জন্য যা কিছু করা দরকার তার সবকিছুই আওয়ামী লীগ করেছিল। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের অনুমতি তো দেয়ইনি, বরং ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন চত্বরেও অনুমতি দিয়েছিল সম্মেলনের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে। বিএনপিকে প্রস্তুতি নিতেও দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া সারা দেশে দলীয় নেতা-কর্মীদের গুম-খুনের পাশাপাশি মামলা-হামলাসহ তাদের ওপর চলমান কঠোর দমন নীতির মধ্যে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে যোগদানের বিষয়টিকে বেমানান বলেও উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া নির্ভরযোগ্য আরেকটি সূত্র জানায়, ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম এবং বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগসহ বেশ কয়েকটি দলের পক্ষ থেকে শুক্রবার রাতে বিএনপিকে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে তাদের না যাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত করা হয়। এ তথ্য জানার পর বিএনপির তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল চূড়ান্ত করার পরও দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে সেই প্রতিনিধিদের সম্মেলনে অংশ না নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়। এর আগ পর্যন্ত দলীয় মহাসচিব চেয়ারপারসনের নির্দেশনার অপেক্ষায় ছিলেন নেতারা।

অন্যদিকে যুগ্ম-মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার কাছে কোনো খবর নাই রে ভাই। শেষ পর্যন্ত কোনো বার্তা মহাসচিবের কাছ থেকে পাইনি।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির আরেক যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ বিএনপির সম্মেলনে না আসার পাশাপাশি যে আচরণ করেছিল, বিশেষ করে বেগম খালেদা জিয়াকে যেখানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি আওয়ামী লীগ, সেখানে বিএনপি আওয়ামী লীগের সম্মেলনে যোগ দেয় কী করে? এ ছাড়া বিএনপি সেখানে যোগ দিলে আগত বিদেশি অতিথিদের দেখিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হবে যে, বিএনপিসহ দেশের সব রাজনৈতিক দলই এখন তাদের সঙ্গে আছে। তবে বিএনপি অংশ না নিলেও দলটির ঘনিষ্ঠ আরেকটি রাজনৈতিক দল বিকল্পধারার সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী আওয়ামী লীগের সম্মেলনে যোগ দেন।

প্রসঙ্গত, ১৯ মার্চ বিএনপির সর্বশেষ কাউন্সিলে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেই কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের কোনো প্রতিনিধি পাঠানো হয়নি। তবে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলই অন্যদের কাউন্সিলে প্রতিনিধি পাঠিয়েছিল।

সর্বশেষ খবর