রবিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

সাকিবের পাঁচ উইকেট তবুও এগিয়ে ইংল্যান্ড

মেজবাহ্-উল-হক, চট্টগ্রাম থেকে

সাকিবের পাঁচ উইকেট তবুও এগিয়ে ইংল্যান্ড

শ্রাবণের আকাশের সঙ্গে দারুণ মিল টেস্ট ক্রিকেটের! এই মেঘ, এই রোদ্দুর! আবার বিনা মেঘে বজ পাত হতেও সময় লাগে না! যেন শ্রাবণের আকাশের মতোই গতকাল ক্ষণে ক্ষণে বদলে গেল চট্টগ্রাম টেস্টের চেহারা! দিনের দ্বিতীয় বলেই সাকিব আল হাসানকে  হারিয়ে হতাশা। সেই সাকিবের বোলিংয়েই দিন শেষে স্বস্তিতে বাংলাদেশ। জয়ের রাস্তাটা এখনো খোলা! তবে পরাজয়ও হাতছানি দিয়ে ডাকছে। তৃতীয় দিন শেষে এখনো সরল দোলকের মতো দুলছে ম্যাচের ভাগ্য। দুই দলের সামনেই রয়েছে সমান সম্ভাবনা। প্রথম ইনিংসে ৪৫ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ৮ উইকেট হারিয়ে ২২৮ রান করেছে ইংল্যান্ড। সব মিলে এখন পর্যন্ত ইংলিশদের লিড ২৭৩ রান। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও শুরুতে বিপদে পড়েছিল ইংল্যান্ড। মাত্র ৬২ রানে পঞ্চম উইকেট পতনের পরও ষষ্ঠ উইকেটে বেন স্টোকস ও জনি বেয়ারস্টো মিলে ১২৭ রানের জুটি ইংল্যান্ডকে জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। প্রথম ইনিংসের হাফ সেঞ্চুরিয়ান বেয়ারস্টো কাল ৪৭ রানে আউট হয়ে গেলেও ৮৫ রানের নান্দনিক এক ইনিংস খেলেছেন স্টোকস। তবে প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও স্টোকসকে ফিরিয়ে দিয়েছেন সাকিব। আর বেয়ারস্টোকে ফিরিয়ে দিয়েছেন পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বি। ব্যাট হাতে ভুল করলেও বল হাতে ইংল্যান্ডকে ছেড়ে কথা বলেননি সাকিব। একাই নিয়েছেন ৫ উইকেট।

গতকাল বাংলাদেশ ব্যাকফুটে গিয়েছিল সকালের সেশনে। আগের দিনের ২২১ রানের সঙ্গে মাত্র ২৭ রান যোগ করতেই কাল বাকি ৫ উইকেট হারিয়েছেন মুশফিকরা। অবশ্য সকালের সেশনটাই ছিল ভয়ঙ্কর। মধ্যাহ্ন বিরতির আগে ইংল্যান্ডও ২৮ রানের মধ্যেই হারিয়ে ফেলে ৩ উইকেট। এক সেশনেই পতন ঘটে ৮ উইকেটের। আর এই সেশনে ইংল্যান্ডের চেয়ে বড় ক্ষতি হয়ে গেছে বাংলাদেশেরই। দিনের প্রথম সেশনটাই ম্যাচের গতিপথ নির্ধারণ করে দিতে পারে, এমনটা জানার পরও শুরুতেই ভুল করে বসেন সাকিব। দিনের দ্বিতীয় বলেই যেভাবে আউট হয়েছেন, দৃশ্যটি ছিল খুবই হাস্যকর! মঈন আলীর বল সামনে এগিয়ে খেলতে গিয়ে স্টাম্পিং। এই আউটের কোনো ব্যাখ্যা থাকতে পারে না। এটা বোকামির দণ্ড ছাড়া কিছুই নয়! যেখানে সাকিবের উইকেটে থাকাটা ছিল খুবই জরুরি সেখানে উল্টো নিজের উইকেটটা যেন ইংলিশদের উপহার দিয়ে এলেন। এমনিতেই সকালের উইকেট হয়েছিল বোলারদের স্বর্গ, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে ফিরিয়ে দেওয়ার পর ইংলিশ বোলাররা যেন আরও অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন। মাত্র ২৭ রানের মধ্যেই বাংলাদেশকে আটকে দেন সফরকারীরা। ৫ উইকেটে ২২১ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করেও বাংলাদেশ তৃতীয় দিনে অলআউট হয়ে যায় ২৪৮ রানে। প্রথম ইনিংসে লোয়ার অর্ডারের ব্যাটিংয়েই দুই দলের মধ্যে একটা ব্যবধান তৈরি হয়ে যায়। যেখানে ইংল্যান্ডের শেষ পাঁচ ব্যাটসম্যানের রানের যোগফল ১২৮, সেখানে বাংলাদেশের শেষ পাঁচ ব্যাটসম্যান মিলে করেছেন মাত্র ২৫ রান। অথচ টপ অর্ডাররা কী দুর্দান্ত ভিত্তিটাই না দিয়েছিলেন। যেখানে মাত্র ১০৬ রানে ইংল্যান্ডের পঞ্চম উইকেটের পতন ঘটে, সেখানে পাঁচ উইকেটে বাংলাদেশ করেছিল ২২১ রান। তবে লোয়ার বোলারদের অসতর্কতার পরও বাংলাদেশকে লড়াইয়ে রেখেছেন বোলাররা। ম্যাচের এমন পরিস্থিতিতেও জয়ের সম্ভাবনা দেখছেন কিংবদন্তি কোর্টনি ওয়ালশ, ‘সকালে খুব দ্রুত নিতে হবে ইংল্যান্ডের দুই উইকেট। তারপর ব্যাটিং বড় দু-তিনটি জুটি করতে পারলে জয়ের ভালো সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের। তবে ম্যাচটা এখনো ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় আছে।’

এমন ম্যাচে জিততে পারলে, নিঃসন্দেহে তা হবে টেস্টের ইতিহাসে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঘটনা। আর হারলেই বা কী! ১৫ মাস পর খেলতে নেমে ইংল্যান্ডের মতো ‘টেস্ট মাস্টার’ দলের বিরুদ্ধে তিন দিন সমানতালে লড়াই করাও তো আর চাট্টিখানি কথা নয়!

 

সর্বশেষ খবর