রবিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

‘সেইফ জোন’ করার পরিকল্পনা ছিল নব্য জেএমবি জঙ্গিদের

সাখাওয়াত কাওসার

এজন্য অপেক্ষাকৃত নিরাপদ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল দেশের উত্তরাঞ্চলের ছয় জেলা। বগুড়া, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং লালমনিরহাটের চরাঞ্চলে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যথার্থ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে ঘাঁটি তৈরি করার পরিকল্পনা ছিল নব্য জেএমবির। সম্প্রতি গ্রেফতারকৃত দুজন এবং আশুলিয়ার আস্তানা থেকে উদ্ধারকৃত আলামত বিশ্লেষণ করে এমনই মন্তব্য করেছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

অন্যদিকে, অর্থদাতা এবং অর্থ সংগ্রহে সহায়তার অভিযোগে আটক সারোয়ার জাহানের দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগী নাফিস আহমেদ নয়ন ও হাসিবুল হাসানকে আশুলিয়ায় ৮ অক্টোবরের অভিযানের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। আজ তাদের ১০ দিনের রিমান্ড চাইবেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।

জানা গেছে, সেখান থেকেই ক্রমান্বয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় হামলার ছকও এঁকেছিল তারা। ঘাঁটি তৈরির জন্য তারা সব ধরনের রসদও সংগ্রহ করেছিল।

র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান বলেন, গ্রেফতারকৃত দুজনকে রিমান্ডে আনলে তাদের কাছ থেকে আরও অনেক তথ্য পাওয়া যাবে বলে আমাদের বিশ্বাস। তবে তারা যে বিভিন্ন সময় নব্য জেএমবিকে অর্থ দিয়ে সহায়তা করেছেন তার প্রমাণ আমরা ইতিমধ্যেই পেয়েছি।

গত ৮ অক্টোবর আশুলিয়ার ঘটনার পর আবদুর রহমানের বাসা থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা, অস্ত্র-গোলাবারুদসহ সাংগঠনিক অনেক নথি উদ্ধার করে র‌্যাব। পরে তার পাসপোর্টের সূত্র ধরে র‌্যাব নিশ্চিত হয় আবদুর রহমানের প্রকৃত নাম সারোয়ার জাহান। তার গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটের থুমরিভোজা এলাকায়।

র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ সম্প্রতি গণমাধ্যম কর্মীদের বলেছেন, সারোয়ার জাহান সর্বশেষ নব্য জেএমবি গঠন করে এবং আবু ইব্রাহিম আল হানিফ নামে এ সংগঠনের আমির হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এ বিষয়ে কিছু নথিপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। নিজেকে আমির হিসেবে ঘোষণার একটি কাগজে আবু ইব্রাহিম অর্থাৎ আবদুর রহমান ও তামিম চৌধুরী স্বাক্ষর করে। শেখ আবু নামটি তামিম চৌধুরীর সাংগঠনিক নাম।’ র‌্যাব সূত্র জানায়, সারোয়ার জাহানের আশুলিয়ার আস্তানা থেকে একাধিক চিঠি, মেইল এবং খুদে বার্তা পাওয়া গেছে। কয়েকটি চিঠিতে সারোয়ার নিজেকে শায়খ আবু ইব্রাহিম আল হানিফ নাম ব্যবহার করে স্বাক্ষর করেছে। এ ছাড়া, তার কাছ থেকে নব্য জেএমবির আমির হিসেবে জঙ্গিবাদে ব্যবহূত অর্থ লেনদেনের কিছু হিসাবও পাওয়া গেছে। এসব নথিপত্র পর্যালোচনা করেই নিশ্চিত হওয়া গেছে, সারোয়ার জাহানই আবু ইব্রাহিম। অভিযানের দুই দিন আগে সারোয়ার জাহানের ৬ অক্টোবরের প্রতিবেদনে ৩৩ জন নব্য জেএমবি সদস্যের নাম জানা গেছে। যদিও সেগুলো সাংকেতিক নাম। এই ৩৩ জনের মধ্যে ১২ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছে। বাকি ২১ জনকে আমরা খুঁজছি। এদের মধ্যে তিনজন শূরা সদস্য।’

সূত্র আরও বলছে, বর্তমানে তাদের একটি একে-২২ রাইফেল, ৫টি হ্যান্ডগান, ৩৩ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছে। সেই হিসাবে ৮ তারিখের অভিযানের পর বর্তমানে নব্য জেএমবির কাছে একে-২২ রাইফেল এবং কোনো হ্যান্ডগান নেই। কারণ গাজীপুর থেকে একটি একে-২২ রাইফেল এবং ৫টি হ্যান্ডগান উদ্ধার করা হয়েছে।

 

সারোয়ারের নির্দেশে নব্য জেএমবির সদস্যরা ‘ইনগিমাস বা গুপ্ত হামলা’ শুরু করে। গত বছরের ৩০ আগস্ট চট্টগ্রামে মিরসরাইয়ে আওয়ামী লীগ নেতা ইমরানকে গুলি করে ৬০ লাখ টাকা ছিনতাই করে নেয়। ৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের বাংলাবাজারে তারা ন্যাংটা বাবা ও তার এক সহযোগীকে হত্যা করে। মূলত এ দুটি অপারেশন সফলভাবে পরিচালিত হওয়ায় আবদুর রহমানকে নব্য জেএমবির শূরা সদস্যরা বাংলাদেশের নব্য জেএমবিতে বায়াত দেওয়ার জন্য অনুমতি দেয়।

র‌্যাব সূত্র আরও জানায়, উদ্ধারকৃত নথিপত্রে নব্য জেএমবির সদস্যরা বাংলাদেশে দাওয়াত, ইলেম ও তাসকীয়া, ইয়ানত, ইদাদ গ্রুপ, রিবাহ এবং কিসাক/ফিতনা নিরোধন ভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালনা করতো বলে জানা গেছে।

প্রথম দুই সফল অপারেশনের পর আবদুর রহমানের নির্দেশক্রমে নব্য জেএমবির সদস্যরা বিদেশি নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানসমূহের ওপর হামলার পরিকল্পনা করে। বিশেষ করে গুলশান, বনানী, বারিধারায় বসবাসরত বিদেশি নাগরিকদের ওপর হামলার পরিকল্পনা করে। এ ছাড়া, মন্দির, হোসনি দালান, শিয়া মসজিদসহ তাদের ভাষায় তাগুতের সৈনিক র‌্যাব, পুলিশ, সশস্ত্র বাহিনী এবং ব্লগার নাস্তিকদের যেখানে পাওয়া যাবে, সেখানেই আক্রমণের পরিকল্পনা করে।

সর্বশেষ খবর