সোমবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

শেষ মুহূর্তে যত নাটকীয়তা

নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে শেষ মুহূর্তে নাটকের পর নাটক জমে উঠেছিল। সদ্য বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম যখন বুঝতে পারছিলেন তিনি আর ওই পদে থাকতে পারছেন না, তখন তিনি ওই পদে বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। নতুন সাধারণ সম্পাদক পদে তার প্রস্তাব ছিল সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ অথবা আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। এসব নাম শুনে বিস্মিত হন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। তবে তিনি তখন কোনো মন্তব্য করেননি। দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্রমতে, দলের হাইব্রিড নেতাদেরও একটি গ্রুপ ‘কাদের ঠেকাও’ তত্পরতা শুরু করেন। তারা সৈয়দ আশরাফকে স্বপদে রাখতে সক্রিয় হয়ে উঠেন গণভবনের ভিতরে-বাইরের রাজনীতিতে। এ নিয়ে সারা দেশে কাউন্সিলরদের মাঝে বার্তাও পাঠান তারা। রুদ্ধদ্বার কাউন্সিলের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাদের তত্পরতা চলতেই থাকে। কিন্তু সাধারণ সম্পাদক পরিবর্তনে দৃঢ় অবস্থানে ছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। দলকে সামনের জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচনমুখী করতে দলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের পছন্দের নেতাকে গুরুত্ব দেন। মাঠপর্যায়ের গ্রহণযোগ্য নেতাদের মতামতের প্রতি ছিল শেখ হাসিনার নজর। পাশাপাশি দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যেও পরিবর্তনের সংকেত পান আওয়ামী লীগ প্রধান। দলের সিনিয়র এক নেতা জানান, এ কারণেই আওয়ামী লীগ পরিচালনার মতো সাংগঠনিক যোগ্যতাসম্পন্ন দক্ষ ও অভিজ্ঞ নেতা হিসেবে ওবায়দুল কাদেরের প্রতি পরোক্ষ সমর্থন ছিল শেখ হাসিনার। এর মধ্যে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ওবায়দুল কাদের দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফের সঙ্গে দেখা করতে তার বাসভবনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তাকে ফোনে যোগাযোগ করে পাননি। জানা যায়, পরে তার ঘনিষ্ঠভাজন নেতা অসীম কুমার উকিল ও ডা. বদিউজ্জামান ভূইয়া ডাবলুকে অনুরোধ করেন সৈয়দ আশরাফের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। কিছুক্ষণ পর তারা দুজনই জানান, সৈয়দ আশরাফ বাসার দোতলায় উঠে গেছেন। তিনি বিশ্রামে রয়েছেন। বিস্ময়কর হলো এর ঘণ্টাখানেক পরই সৈয়দ আশরাফ কাউন্সিলে আগত বিদেশি অতিথিদের সঙ্গে হোটেল সোনারগাঁওয়ে নৈশভোজে যোগ দেন। পরে বেরিয়ে এসে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথাও বলেন। এ সময় আবেগাপ্লুত হয়ে সৈয়দ আশরাফ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি জানি কী হবে, আমি আর সভানেত্রী ছাড়া কেউ জানেন না হোয়াট উইল গোয়িং টু হ্যাপেন। আফটার দ্য থ্রিল, আপনারা জানবেন হোয়াট হ্যাপেন্ড।’ ওবায়দুল কাদের দলের ঐহিত্য ও সৌহার্দকে বজায় রাখতে তার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলেন কাউন্সিলে। এই প্রক্রিয়ারই অংশ হিসেবে আশরাফ-কাদেরের হাস্যোজ্জ্বল ছবি গণমাধ্যমে আসে। শেষ পর্যন্ত কাউন্সিলের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে নতুন সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদেরের নাম প্রস্তাব করেন সৈয়দ আশরাফ। গত এক সপ্তাহ ধরে সাধারণ সম্পাদক নিয়ে নানামুখী আলোচনা চলছিল। অবশেষে সেই আলোচনার অবসান হলো। নেতা-কর্মীদের মতে, ওবায়দুল কাদের দলের প্রতি নিবেদিত। তিনি একদিকে দলীয় কার্যালয়ে যেমন সক্রিয় ছিলেন অন্যদিকে মন্ত্রণালয়েও ছিল তার সরব উপস্থিতি। মন্ত্রী হিসেবেও ঢাকাসহ সারা দেশেই চষে বেড়াচ্ছেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গেও তিনি তাদের সুখে-দুঃখেও কথা বলেছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর দলের কঠিন দুঃসময়ে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দেন। এরই ফসল হলো— এই প্রথম ছাত্রলীগের কোনো নেতা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হলেন।

সর্বশেষ খবর