শিরোনাম
সোমবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ছাত্রলীগ নেতা থেকে আওয়ামী লীগ সম্পাদক

শাবান মাহমুদ

উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীনতম ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন একসময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা ওবায়দুল কাদের। গত ২২ ও ২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলন অধিবেশনে সর্বসম্মতভাবে ওবায়দুল কাদেরকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে      ওবায়দুল কাদেরের নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে মুহূর্তেই উচ্ছ্বাস আর আবেগে ফেটে পড়েন সম্মেলনে আসা আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা। ছাত্র রাজনীতি থেকে জাতীয় রাজনীতি। ওবায়দুল কাদের যেন এক কিংবদন্তি। ঐতিহাসিক ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন তিনি। ওবায়দুল কাদেরের সাংগঠনিক দক্ষতা আর ক্যারিশমার কারণেই সে সময়ে সারা দেশে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সংগঠন ছাত্রলীগ হয়ে উঠে জনপ্রিয় সংগঠনে। ছাত্র রাজনীতির অধ্যায় চুকিয়ে সাংবাদিকতা আর লেখালেখির জগতেও পাঠকসমাজে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন ওবায়দুল কাদের। একসময়ে অভিসিক্ত হন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে। দলে পর্যায়ক্রমে সাংস্কৃতিক সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, আর প্রেসিডিয়াম সদস্য পদে সফল নেতৃত্বের কারণেই ওবায়দুল কাদের আজ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। দলীয় কর্মীদের এমনই মন্তব্য ওবায়দুল কাদের সম্পর্কে। দেশের অভিজ্ঞ রাজনীতিবীদ ওবায়দুল কাদের ছাত্রনেতা থেকে গণমানুষের নন্দিত নেতায় পরিণত হয়েছেন দীর্ঘ ত্যাগ আর কর্মীদের ভালোবাসার কারণেই। আওয়ামী লীগের দুর্দিনে, দুঃসময়ে রাজপথ কাঁপানো নেতা ওবায়দুল কাদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি কখনো। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ওবায়দুল কাদের কারানির্যাতিত হয়েছেন বার বার। স্বৈরাচারবিরোধী আর গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সাহসী ভূমিকা রেখে কর্মীদের কাছে বারবার আলোচিত হয়েছেন ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগে তিনি নিজ অবস্থান তৈরি করেছেন অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতা আর শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি অবিচল থেকে। দলের যে কোনো দুর্যোগ আর সংকটে ওবায়দুল কাদের নিজেকে প্রকাশ করেছেন আপসহীন চেতনায়। সর্বশেষ ওয়ান-ইলেভেনের অগ্নিপরীক্ষায়ও ওবায়দুল কাদের শেখ হাসিনার প্রতি অন্ধ অনুগত থেকেই কর্মীদের হৃদয়ে স্থায়ী জায়গা করে নেন। আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের জন্ম ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি, নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ থানার বড় রাজাপুর গ্রামে। তার বাবা মোশারফ হোসেন সরকারি চাকরি ছেড়ে জনশিক্ষা স্বার্থে উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। ওবায়দুল কাদের ছাত্রজীবনে মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন সর্বত্র। বসুরহাট সরকারি এএইচসি উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে মেধা তালিকায় স্থান করে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্সসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালে গণআন্দোলন ও ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন ওবায়দুল কাদের। ১৯৭১ সালে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং কোম্পানীগঞ্জ থানা মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) অধিনায়ক ছিলেন। রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন সময়ে তিনি একাধিকবার কারাবরণ করেন। ১৯৭৫-এর পর এক নাগাড়ে দীর্ঘ আড়াই বছর তাকে কারাগারে থাকতে হয়। কারাগারে থাকা অবস্থায়ই তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন এবং পরপর দুবার ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। ওবায়দুল কাদের দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতা ও লেখালেখির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি দৈনিক বাংলার বাণী পত্রিকার সহকারী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। রচনা করেছেন আটটি গ্রন্থ। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে— বাংলাদেশের হৃদয় হতে, পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধু, এই বিজয়ের মুকুট কোথায়, তিন সমুদ্রের দেশে, মেঘে মেঘে অনেক বেলা, রচনা সমগ্র, কারাগারে লেখা অনুস্মৃতি : যে কথা বলা হয়নি। ওবায়দুল কাদের ১২ জুন ’৯৬-এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নোয়াখালী-৫ আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২৩ জুন ’৯৬ সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন এবং একই দিনে যুব ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তিনি ২০০১ সালের ১৫ জুলাই পর্যন্ত প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব সৎ ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন। ২০০২ সালের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন থেকে ২০০৯-এর সম্মেলন পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। ১/১১ পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে তিনি ২০০৭ সালের ৯ মার্চ জরুরি বিধিতে গ্রেফতার হয়ে ১৭ মাস ২৬ দিন কারাবরণ করেন। ২০০৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তিনি জামিনে মুক্ত হন। কারাগারে থাকাকালে কারাজীবনের বর্ণনা দিয়ে ‘অনুস্মৃতি : যে কথা বলা হয়নি’ লেখেন। তিনি ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর পুনরায় দ্বিতীয়বারের মতো নোয়াখালী-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং তথ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রথমবারের মতো তিনি দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১১ সালের ২৮ নভেম্বর বঙ্গভবনে মহাজোট সরকারের মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ২০১২ সালে তিনি যোগাযোগ রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ছিলেন। এ ছাড়া তিনি কিছুদিনের জন্য রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও পালন করেন। বর্তমানে তিনি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। পেশাগত জীবনে তিনি সফর করেছেন অনেক গুরুত্বপূর্ণ দেশ। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা, চীন, জার্মানি, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, ইতালি, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভুটান, নেপাল, ফিলিপাইন, জাপানসহ বিভিন্ন দেশও সফর করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর