মঙ্গলবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

প্রেসিডিয়ামের মতোই হবে কেন্দ্রীয় কমিটি

আজই আসতে পারে পূর্ণাঙ্গ কমিটির ঘোষণা

রফিকুল ইসলাম রনি

প্রেসিডিয়ামের মতোই হবে কেন্দ্রীয় কমিটি

সাধারণ সম্পাদক পরিবর্তনই বড় চমক ছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এবারের সম্মেলনে। টানটান উত্তেজনা ছিল। কর্মীদের ছিল রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা। অনেক বছর পর দলের মাঠের নেতা-কর্মীরা এমন চমক পেলেন। এবারের সম্মেলনের গুরুত্ব বাড়িয়ে দেয় সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠপর্যায় থেকে উঠে আসা একজন নেতাকে দলের সাধারণ সম্পাদক পেয়ে উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছে নেতা-কর্মীদের মধ্যে। প্রেসিডিয়ামে ছিল না বড় মাপের চমক। তবে কয়েকজনকে নিয়ে বিস্ময় ছিল। সম্মেলন শেষে নতুন করে হিসাব-নিকাশ করছেন নেতা-কর্মীরা। তারা এখন অপেক্ষা করছেন পূর্ণাঙ্গ কমিটির। সূত্র জানায়, পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে অনেকটা দলের প্রেসিডিয়াম ও যুগ্ম সম্পাদক পদের মতোই। খুব একটা পরিবর্তন হবে না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দলের সাধারণ সম্পাদক ছাড়া আর কোথাও বড় পরিবর্তন এখনো দেখছেন না। প্রেসিডিয়ামে দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত আবদুল মান্নানকে দেখে অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। সদ্যবিলুপ্ত কমিটির দফতর সম্পাদক মান্নান খানকে নিয়ে দলের ভিতরে ও বাইরে অনেক বিতর্ক রয়েছে। মন্ত্রিসভায় থাকতে তার কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা হয়েছিল তীব্র ও ব্যাপক। তার অনেক কাজকর্ম তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন—দুদক। কমিউনিস্ট নেতাদের মধ্যে নুরুল ইসলাম নাহিদকে নিয়ে কারও আপত্তি না থাকলেও প্রশ্ন রয়েছে মতিয়া চৌধুরীকে নিয়েও। নিজের জেলা শেরপুরে তার কমিটি নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। তিনি নিজেই এ কমিটির বিপক্ষে। এ ছাড়াও আগের মতো তাকে দলে সক্রিয় দেখা যায় না। অন্যদিকে অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনসহ আরও কয়েকজন বয়সের ভারে ন্যুব্জ। দলের কাজে কতটা লাগবেন, সে হিসাব-নিকাশও করছেন অনেকে। নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রেসিডিয়ামে আসায় সিলেট বিভাগের নেতা-কর্মীরা বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছেন। অনেকের ধারণা ছিল যুগ্ম সম্পাদকদের মধ্যে মাহবুব-উল আলম হানিফ ও দীপু মনির পদোন্নতি হবে। প্রেসিডিয়ামে ঠাঁই পাবেন তারা। কিন্তু শেষতক তারা আগের পদেই থেকে গেলেন। এখানে শুধু যুক্ত হলেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান। তার পদোন্নতি ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছেন     নেতা-কর্মীরা। ছাত্রলীগের সাবেক নেতারাও খুশি তাদের আরেকজন নেতাকে পেয়ে। এদিকে প্রেসিডিয়ামে তিনটি পদ এখনো শূন্য রয়েছে। সে পদে কারা আসছেন তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে সম্পাদকীয় পদ থেকে আরও পদোন্নতি পেয়েছেন লে. কর্নেল মুহাম্মদ ফারুক খান (অব.), ড. আবদুর রাজ্জাক ও নুরুল ইসলাম নাহিদ। অন্যদিকে বাদ পড়েছেন নূহ-উল আলম লেনিন ও সতীশচন্দ্র রায়। তাদের দুজনকে উপদেষ্টা পরিষদে রাখা হতে পারে। নতুন করে যুক্ত হওয়া পীযূষকান্তি ভট্টাচার্য ও রমেশচন্দ্র সেন মাঠপর্যায়ের নেতা। তাদের নিয়ে আসায় তৃণমূল অনেকটা খুশি। তারা তাদের নিজের এলাকায় কাজ করতে পারবেন বলে অনেকেই মনে করেন। অনেকেই ভেবেছিলেন কোষাধ্যক্ষ পদে এবার হয়তো নতুন মুখ আসবে। শেষ পর্যন্ত তাও হয়নি। নেতা-কর্মীরা এখন তাকিয়ে আছেন কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটির দিকে। দলীয় সূত্র জানায়, পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তেমন একটা পরিবর্তন আসবে না। পুরনোদের প্রায় সবাই থেকে যাবেন। যুক্ত হবেন নতুন কয়েকজন মাত্র। সাংগঠনিক সম্পাদকের একটি পদ বাড়ার কারণে সেখানে নতুন মুখ দেখা যাবে। উপ-দফতর সম্পাদকসহ ছোটখাটো পদে পরিবর্তন দেখা যেতে পারে। কার্যনির্বাহী কমিটির দু-এক জন সদস্যও বাদ পড়তে পারেন। যুক্ত হতে পারেন মাত্র কয়েকজন। উপকমিটির সহ-সম্পাদক পদে বিতর্কিতদের না রেখে ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের বেশি রাখা হতে পারে। অনেক আলোচিত নেতা কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই নাও পেতে পারেন। অনেককেই হতাশ হতে হবে। কেন্দ্রীয় কমিটি অনেকটা চূড়ান্ত। আজ দু-একটি পদ বাদে পূর্ণাঙ্গ কমিটির ঘোষণা আসতে পারে। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে কমিটিতে থাকা সবাই বহাল হওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে। দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রেসিডিয়াম ও যুগ্ম সম্পাদকদের মতোই চমক ছাড়াই যে কোনো সময় ঘোষণা করা হবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি।

কোনো কথা হয়নি মন্ত্রিসভায় : এদিকে বার্তা সংস্থা বিডিনিউজ জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি গঠনের পরদিন গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। বৈঠকে উপস্থিত একজন মন্ত্রী জানান, বৈঠক শুরুর বেশ কিছুক্ষণ আগেই হাসিমুখে মন্ত্রিসভা কক্ষে প্রবেশ করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ফুরফুরে মেজাজে সবার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। মন্ত্রিসভার সদস্যরাও নতুন সাধারণ সম্পাদককে অভিনন্দন জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন মন্ত্রিসভার সদস্যদের মিষ্টিমুখ করান। কিন্তু মূল মন্ত্রিসভার বৈঠকে সম্মেলন নিয়ে কোনো কথা হয়নি, প্রধানমন্ত্রীও এ নিয়ে কোনো কথা বলেননি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভা কক্ষে প্রবেশের পর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান নিজের লেখা পদ্যের একটি সংকলন প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় ইয়াফেস ওসমান ও তার বাবা প্রখ্যাত সাহিত্যিক মরহুম শওকত ওসমানকে নিয়ে কথা বলেন। এরপর বৈঠকের সাধারণ কার্যক্রম শুরু হয়। অন্যদিকে, বৈঠক শেষে বেরিয়ে আওয়ামী লীগের নতুন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সবাইকে ধন্যবাদ, শুভেচ্ছা। ধানমন্ডি পার্টি অফিসে সবাই বসে আছেন। ওখানে গিয়েই আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলব।’ এর কিছুক্ষণ পরই সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ বৈঠক থেকে বেরিয়ে এলে সাংবাদিকরা তাকে ঘিরে ধরে একের পর এক প্রশ্ন ছুড়তে থাকেন। কিন্তু তিনি কোনো প্রশ্নের জবাব না দিয়ে এগিয়ে যান গাড়ির দিকে। যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের আশরাফ বলে যান, ‘আজ কিছু বলব না, সময় হলে অন্য একদিন বলব।’

সর্বশেষ খবর