মঙ্গলবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

সমুদ্রপথে অস্ত্র আনার পরিকল্পনা জঙ্গিদের

সাখাওয়াত কাওসার

সমুদ্রপথে অস্ত্র আনার পরিকল্পনা জঙ্গিদের

সমুদ্রপথেই অস্ত্র এবং বিস্ফোরক আনার পরিকল্পনা করেছিল জঙ্গিরা। স্থল ও আকাশপথে বেশি মাত্রায় নজরদারি থাকার কারণে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল সমুদ্রপথ। অন্যদিকে নব্য জেএমবির আস্তানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একের পর এক অপারেশন এবং প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন অপারেশনে ব্যবহূত হওয়ার ফলে অস্ত্র ও বিস্ফোরকের মজুদ ফুরিয়ে আসছিল। তবে নিজেদের টার্গেট পূরণের লক্ষ্যে এবং সাংগঠনিক অবস্থান ধরে          রাখার স্বার্থে সমুদ্রপথে অত্যাধুনিক অস্ত্র-বিস্ফোরকসহ অপারেশনের জন্য প্রয়োজন এমন দ্রব্যাদি সমুদ্রপথে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এ জন্য দেশের বাইরের অস্ত্র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল নব্য জেএমবির জঙ্গিরা। গত ৮ অক্টোবর আশুলিয়ায় নব্য জেএমবির  আমির সারোয়ার জাহানের আস্তানায় অভিযানে উদ্ধারকৃত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এরই মধ্যে এসব বিষয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা। র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহ্মুদ খান বলেন, আশুলিয়ার আস্তানা থেকে অনেক কিছুই উদ্ধার করা হয়েছে। এগুলোর বিশ্লেষণ চলছে। তবে জঙ্গিরা নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য যে পরিকল্পনা করছিল এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। গ্রেফতার হাসিবুল এবং নয়ন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশে তাদের সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এখন জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে বলে ধারণা তাদের। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, সীমান্ত এলাকায় অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এমন কয়েকজনের সঙ্গে জঙ্গিরা যোগাযোগ করেছিল। তাদের কয়েকজন সমুদ্র তীরবর্তী জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের। নব্য জেএমবির জঙ্গিরা মিয়ানমারের আরএসএস-এর সদস্যদের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখত। আরএসএস-এর সদস্যদের মাধ্যমে মিয়ানমারের অস্ত্র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল। প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল আরাকান আর্মিদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের। মজলিশে শূরার সিদ্ধান্ত অনুসারে সমুদ্রপথে নৌকায় করে অস্ত্র ও বিস্ফোরক সংগ্রহের বিষয়ে এগোচ্ছিল তারা। পর্যাপ্ত অর্থ সরবরাহ থাকায় বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নিতেও তাদের ভয় কাজ করত না।

র‍্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ সম্প্রতি গণমাধ্যম কর্মীদের বলেছিলেন, বর্তমানে তাদের কাছে একটি একে-২২ রাইফেল, ৫টি হ্যান্ডগান, ৩৩ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছে। সে হিসাবে ৮ তারিখের অভিযানের পর বর্তমানে নব্য জেএমবির কাছে একে-২২ রাইফেল এবং কোনো হ্যান্ডগান নেই। কারণ গাজীপুর থেকে গত ৮ অক্টোবরই একটি একে-২২ রাইফেল এবং ৫টি হ্যান্ডগান উদ্ধার করা হয়েছে। আশুলিয়ায় অভিযানের দুই দিন আগে ৬ অক্টোবরের সারোয়ার জাহানের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ৩৩ জন নব্য জেএমবির নাম জানা গেছে। যদিও সেগুলো সাংকেতিক নাম। এই ৩৩ জনের মধ্যে ১২ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছে। বাকি ২১ জনকে আমরা খুঁজছি। এদের মধ্যে তিনজন শূরা সদস্য। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই জঙ্গিরা অস্ত্র সংগ্রহ করবে। বর্তমানে বেশ চাপের মধ্যে থাকলেও তারা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে এটা ভেবেই আমরা আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। অস্ত্র সংগ্রহের জন্য নৌপথকেই তাদের কাছে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ মনে হয়েছে। সেদিকেও আমরা নজরদারি করছি। আদালত সূত্র জানায়, আবেদনে বলা হয়, হাসিবুল ইসলাম ও নফিজ আহম্মেদ ওরফে নয়ন নব্য জেএমবির সক্রিয় সদস্য। হাসিবুল জঙ্গি কার্যক্রমের অর্থায়নের কাজে নিয়োজিত— এমন তথ্য পাওয়া গেছে। তার কাছ থেকে জঙ্গিদের কাজে ব্যবহারের জন্য ২৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। অপর আসামি নফিজও অর্থ বিতরণের সঙ্গে জড়িত। আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সংগঠনের মূল হোতা ও জড়িত অন্যদের সম্পর্কে তথ্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে। আশুলিয়া থানায় দায়ের হওয়া সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র‍্যাব-৪ এর সহকারী পুলিশ সুপার উলু মং আসামিদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শাহজাদী তাহমিদা সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

সর্বশেষ খবর