মঙ্গলবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বেদনার সংখ্যা ২২

তীরে এসে ডুবল তরী

মেজবাহ্-উল-হক, চট্টগ্রাম থেকে

বেদনার সংখ্যা ২২

আউট হয়ে গেলেন তাইজুল ও শফিউল। ননস্ট্রাইকে সাব্বিরের করার ছিল না কিছুই। ভেঙে পড়লেন এভাবেই। সান্ত্বনা দিতে এগিয়ে গেলেন ইংল্যান্ডের জো রুট। ক্রিকেটীয় এই সৌন্দর্যের সাক্ষী হয়ে রইলেন দর্শকরা —এএফপি

৩৩ রান নয়, যেন ৩৩টি কাঁটা বিঁধেছিল বাংলাদেশের বুকে! সাব্বির ও তাইজুল মিলে একটি একটি করে কাঁটা উপড়ে ফেলতেও শুরু করেছিলেন। কিন্তু রিভিউ নামক বাধায় শেষ পর্যন্ত ২২টি কাঁটা রয়েই গেল। স্বপ্ন জাগিয়েও ২২ রানে হেরে গেল বাংলাদেশ। কাকতালীয়ভাবে গতকাল ২২ মিনিটেই গুটিয়ে গেল বাংলাদেশের ইনিংস। ২২ যেন বাংলাদেশের ক্রিকেটে বেদনায় সংখ্যা হয়ে থাকল। তীরে এসে তরী ডুবল টাইগারদের। এ হার হতাশার নয়, কষ্টের। এই পরাজয় লজ্জার নয়, গৌরবের। কিছু ভুল আর রিভিউর সিদ্ধান্তগুলো বিপক্ষে যাওয়া স্বপ্নটা ভেঙে গেল বাংলাদেশের। এক ম্যাচে ২৬টি রিভিউ। ২৬টি সিদ্ধান্তই এসেছে টিভি আম্পায়ার সুন্দরম রবির কাছ থেকে। বেশির ভাগ সিদ্ধান্তই চলে গেছে বাংলাদেশের প্রতিকূলে। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে যেখানে একটি সিদ্ধান্তই বদলে দেয় ম্যাচের ভাগ্য। প্রথম ইনিংসে সাব্বিরের ক্যাচ ইংলিশ অধিনায়ক কুক মাঠের সহায়তা নিয়ে তালুবন্দী করার পরও টিভি আম্পায়ার আউট দিয়েছেন। বাংলাদেশকে শেষ করে দিয়েছে গতকাল সকালে তাইজুলের লেগ বিফোরের সিদ্ধান্ত। মাঠের আম্পায়ার আউট দেননি। ইংল্যান্ডের রিভিউ আবেদনের পর রিপ্লেতে গ্রাফে দেখা গেল, লেগ স্ট্যাম্পের বাহির দিয়ে যাওয়ার সময় হালকা স্পর্শ করছে। ‘বেনিফিট অব ডাউট’ সুবিধার কথা বাদ দিলেও এমন পরিস্থিতিতে মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানোর কথা টিভি আম্পায়ারের। কিন্তু সুন্দরম রবি আউটের নির্দেশ দিয়েছেন। তা ছাড়া প্রতিটি রিভিউর পরই দেখা দেখা গেছে, রিপ্লে দ্রুত দেখালেও গ্রাফটা দেখানো হচ্ছিল দেরিতে। সেখানেও ছিল সংশয়! গ্রাফটা কী ইংল্যান্ডের পছন্দমতো করার জন্যই বেশি সময় নেওয়া হয়েছে? এমন ম্যাচে পরাজয়ের পর সবচেয়ে বেশি কষ্ট হওয়ার কথা অধিনায়কের। মুশফিকও কষ্ট পাচ্ছেন। ইস্, আর একটু সতর্ক হলে ম্যাচের ফলটা অন্যরকম হতে পারত। প্রথম ইনিংসে চার উইকেটে ২২১ রান থেকে স্কোরটা যদি ২৪৮-এ শেষ না হয়ে তিনশর কাছাকাছি যেত! তাই কিছুটা হতাশার সুর টাইগার ক্যাপ্টেনের কণ্ঠেও, ‘ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসে ২৪০ করেছিল। আমরা যদি প্রথম ইনিংসে ২৯০-ও করতে পারতাম, এই ম্যাচে জয় আমাদেরই হতো।’ নিশ্চয়ই সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয়েছে সাব্বির রহমানের। একটুর জন্য মহানায়ক হওয়ার সুযোগটা নষ্ট হয়ে গেল। ৬৪ রান করে একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে সাব্বির দেখলেন, আরেক প্রান্তে তিন বলের মধ্যে কীভাবে সাজঘরে চলে গেলেন তাইজুল ও শফিউল। ৩৩ রানের লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নেমে ১০ রান তোলার স্বপ্নটা যখন ডানা মেলতে শুরু করেছিল ঠিক তখনই সব শেষ হয়ে গেল। সাব্বির রহমান শেষ সুযোগটাও আর পেলেন না। রিভিউয়েও যখন শফিউলের আউটের সিদ্ধান্ত বহাল রইল তখন অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে একবার তাকালেন ইলেকট্রনিক স্কোর বোর্ডের দিকে। হয়তো শেষবারের মতো নিজের স্কোরটা দেখে নিলেন। সাত নম্বরে ব্যাট করতে নেমে অভিষেকেই অপরাজিত ৬৪! খারাপ কী? কিন্তু স্কোরটা কি কখনো সাব্বিরকে স্বস্তি দেবে! বরং বেদনায় নীল করে দেবে তাকে। একটুর জন্য মহানায়ক হতে পারলেন না! ১৬ কোটি মানুষকে সুখ সাগরে ভাসিয়ে দিতে পারলেন না। শেষ পর্যন্ত সাব্বির হয়ে রইলেন— ‘ট্র্যাজিক হিরো’!

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর