মঙ্গলবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

রিজার্ভের অর্থ ফেরতে ফিলিপাইনের টালবাহানা

মানিক মুনতাসির

নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম (ফেড) থেকে চুরি হওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ১৫ মিলিয়ন ডলার (১২০ কোটি টাকা) ফেরত দিতে এক মাস আগে ফিলিপাইনের একটি আদালত নির্দেশ দিলেও তা ফেরত দেয়নি দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বরং তারা বলেছে, এর জন্য বাংলাদেশকে আরও কয়েকটি আইনি ধাপ অনুসরণ করে আসতে হবে। অথচ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেহেতু চুরির দায় নেওয়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এ অর্থ ফেরত দিয়েছে, ফলে এটি বাংলাদেশের ফেরত পেতে আইনগত কোনো বাধা নেই। কেননা এ অর্থ ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরাসরি ফেডে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে জমা করাটাই সাধারণ নিয়ম। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। বরং ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিষয়টি নিয়ে টালবাহানা শুরু করেছে। উল্লেখ্য, ফেব্রুয়ারিতে ফেড থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার (প্রায় ৮০০ কোটি টাকা) সরিয়ে নেয় একটি হ্যাকার চক্র। বহু তদন্ত ও শুনানির পর ২০ সেপ্টেম্বর ১৫ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশকে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয় ফিলিপাইনের একটি আদালত। এ অর্থ এখন ফিলিপাইন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে জমা রয়েছে। এদিকে রিজার্ভ চুরির তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ না করতেও বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে ফিলিপাইন। এজন্য বার বার ঘোষণা দিয়েও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তা প্রকাশ করেননি। শুধু তাই নয়, তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নেও সরকার খুব একটা আগ্রহী নয় বলে জানা গেছে। রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের যেসব কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি, তাদের বিরুদ্ধেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) মহাব্যবস্থাপক দেবপ্রসাদ দেবনাথ এ প্রসঙ্গে বলেন, ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে যে অর্থ জমা আছে, তা পাওয়া যাবে শিগগিরই। কিন্তু এর জন্য কিছু আইনগত বিষয় রয়েছে। এখন সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বাকি অর্থ ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে ফিলিপাইন কতটা সহযোগিতা করছে— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তারা যথেষ্ট আন্তরিক। তবে এ ক্ষেত্রে আইনগত বিভিন্ন বাধা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, চুরি হওয়া অর্থ ফেরত আনা সময়সাপেক্ষ। তবে ফিলিপাইন আন্তরিক হলে দ্রুত ফেরত আনা যেতে পারে।

জানা গেছে, ২০ সেপ্টেম্বর ফিলিপাইনের একটি আদালত মাত্র দেড় কোটি ডলার ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। অন্যদিকে সে দেশে এ ঘটনার তদন্তকাজও আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি এ বিষয়ের আপডেপ জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু এর কোনো জবাব এখনো পাওয়া যায়নি। শিগগিরই দেশটির সিনেটে এ বিষয়ে আবারও শুনানি শুরু হবে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। বাকি ৬৬ কোটি ডলারের (৬৫০ কোটি টাকা) হদিস মেলেনি নয় মাসেও। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, আন্তর্জাতিক অ্যান্টি মানি লন্ডারিং সংস্থা এবং অ্যাগমন্ট গ্রুপের আইন ও চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের খোয়া যাওয়া অর্থের পুরোটাই আরসিবিসির কাছ থেকে জরিমানা হিসেবে আদায় করে বাংলাদেশকে ফেরতও দেওয়া সম্ভব বলে জানিয়েছিল ফিলিপাইন ও ফেডারেল রিজার্ভ। বাংলাদেশ ব্যাংকও মনে করে, এ অর্থ দীর্ঘ সময় পর হলেও ফেরত পাবে বাংলাদেশ। কেননা আন্তর্জাতিক অ্যান্টি মানি লন্ডারিং আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি, দেশ বা প্রতিষ্ঠান ফেডারেল রিজার্ভ ব্যবহার করে এক ডলার মানি লন্ডারিং করলে তার কাছ থেকে দ্বিগুণ হারে জরিমানা আদায় করা হবে। তবে সেটি তদন্ত ও সময়সাপেক্ষ।

সর্বশেষ খবর